ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘ইভ্যালি’ এমএলএম নাকি ব্লেইম

খালিদ সাইফুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৩, ২৭ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১৬:১৪, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
‘ইভ্যালি’ এমএলএম নাকি ব্লেইম

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। এতে যেমন কিছুটা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছি, অন্যদিকে পড়ালেখা শেষ হওয়ার আগেই কাজের অভিজ্ঞতাও অর্জন করছি। পরিচিত হয়েছি দেশের সেরা ই-কমার্স-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে। এজন্য আমার স্বেচ্ছাসেবা, স্টার্টআপ, অনলাইন-অফলাইন ব্যবসার আদ্যপান্ত জানা ও অন্যকে জানানো পছন্দের তালিকায় রয়েছে। মাঝেমধ্যে সমালোচনাও করি; পক্ষে গেলেও করি, বিপক্ষে গেলেও করি- এভাবে চেষ্টা করি সত্য জানার।   

সম্প্রতি ই-কমার্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ইভ্যালি’ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন তুমুল আলোচিত নাম এটি। হঠাৎ করে এমন আলোচনা তৈরি হওয়ায় চেষ্টা করলাম বিষয়টি জানার। 

২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ‘ইভ্যালি’। প্রতিষ্ঠার পর ১০০০ টাকার ফ্রি শপিং এবং ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ৫০০ টাকা সমমূল্যের বই বিনামূল্যে বিতরণের মাধ্যমে আলোচনায় আসে। এরপর ৩০০ শতাংশ এবং ২৫০ শতাংশ ভাউচারের মাধ্যমে দেশের ই-কমার্স ব্যবহারকারীদের কাছে রীতিমত ‘হাইপ’ সৃষ্টি করে তারা। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যানুসারে, বর্তমানে তাদের রেজিস্টার্ড গ্রাহক প্রায় ৩৫ লাখ এবং বিক্রেতার সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে চাকরি করছেন প্রায় ৭০০ জন।

কম মূল্যে বাইক, টিভি, ফ্রিজ বা মোবাইলসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করার কারণে বাড়তে থাকে তাদের ক্রেতার সংখ্যা, একইসঙ্গে বাড়তে থাকে সমালোচনা। অবিশ্বাস্য অফার এবং ডিসকাউন্টের ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের নিয়ে ইতিবাচক অভিজ্ঞতার পাশাপাশি অনেকে অবিশ্বাস বা সন্দেহ পোষণ করছেন। প্রোডাক্টের জন্যে অগ্রিম টাকা নেওয়ার কারণে অনেকে এমএলএম বা ডেসটিনির সঙ্গেও ইভ্যালিকে তুলনা করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়, ‘ইভ্যালি’ থেকে কেনাকাটা করে অনেকেই সন্তুষ্ট, আবার অনেকেই অসন্তুষ্ট। এই অসন্তুষ্টির একটি কারণ গ্রাহক পণ্য দেরিতে পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মাদ রাসেল বলেছেন, ‘আমরা ১০০০ অর্ডার ঠিকঠাক ডেলিভেরি করলে এর মধ্যে সিস্টেমের সমস্যার জন্য হয়তো ১০টা অর্ডারে সমস্যা হতে পারে। ১০০০ সাকসেসফুল অর্ডারের বিষয়ে কিন্তু কেউ কিছু বলবে না, কিন্তু ওই ১০টা সমস্যাই সবাই ফেসবুকে প্রচার করে।’

আমি ব্যক্তিগতভাবে ইভ্যালি থেকে পণ্য কেনেন এমন কয়েকজনের অভিজ্ঞতা শুনেছি। তারা বলেছেন, দেরিতে হলেও সবাই পণ্য পেয়েছেন। টাকা দিয়ে কেউ প্রতারিত হননি। কিছু সমস্যা হয়তো আছে; যেমন পটুয়াখালীর একজন সরকারি কর্মকর্তা ইদ্রিস আলম বলেছেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে কোনো কোনো প্রোডাক্ট পেতে ৮০ দিনেরও বেশি সময় লেগেছে। আবার কোনো প্রোডাক্ট ১০/১৫ দিনের মধ্যেও পেয়েছি।’

অনেকে লেট ডেলিভারির বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। কেননা তারা মনে করেন- তুলনামূলক কম দামে প্রোডাক্ট পাচ্ছি, সুতরাং কিছুদিন অপেক্ষা করতে সমস্যা নেই।

আবার অনেকে বলেছেন, ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ারে ফোন বা ইমেইল বা ইস্যু ক্রিয়েট করে সহজে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ সময় তারা কোনো রিপ্লাই দেয় না। এই বিষয়গুলোতে উন্নতির আসলে বিকল্প নেই।

তবে ইভ্যালির এতো বেশি ডিসকাউন্ট অনেকের কাছেই রহস্যময় মনে হতে পারে। এ প্রসঙ্গে মোহাম্মাদ রাসেল বলেন, ‘আমরা সরাসরি ম্যানুফ্যাকচার থেকে বেশি পরিমাণে পণ্য কিনি বলে অফার দিতে পারি। এতে মানি লন্ডারিং বা প্রতারণার কোনো বিষয় নেই। যদি এমন কোনো সন্দেহ হয়েই থাকে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা এবং গোয়েন্দা বাহিনী ইভ্যালির খুঁটিনাটি তদন্ত করুক, আমরা স্বাগতম জানাবো।’

পরিশেষে শুধু এটুকু বলবো, আমি ব্যক্তিগতভাবে দীর্ঘদিন ই-কমার্স নিয়ে কাজ করছি। আমার জানা মতে, প্রচুর ডিসকাউন্ট দেওয়া এক ধরনের বিজনেস পলিসি। একে ‘লস লিডিং’ বলা হয়। অ্যামাজন বা ভারতের জিও'র মতো বড় বড় কোম্পানি এই পলিসিতে প্রচুর ডিসকাউন্ট দিয়ে ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। আমাদের দেশেও উবার-এর মতো আন্তর্জাতিক কোম্পানি ফ্রি রাইড দিয়েছে, প্রচুর পরিমাণে ছাড় দিয়েছে; সেই হিসেবে তাদেরও এমএলএম বলে সন্দেহ করা যায়।

সে কারণে বলছি, শুধু ডিসকাউন্ট দেখেই কোনো প্রতিষ্ঠানকে ব্লেইম দেওয়া উচিৎ নয়। আবার ডিসকাউন্টের নামে গ্রাহককে হয়রানি করলে তা অবশ্যই নিন্দনীয় এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পাশাপাশি, ইভ্যালির টাকার উৎস বা এর পেছনে মানি লন্ডারিং বা অন্য কোনো বিষয় আছে কিনা, তার যথাযথ প্রমাণ এবং তথ্য-উপাত্তসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ই-কমার্স সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য না পেয়ে আগেই এভাবে একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করাও যুক্তিসঙ্গত নয় বলেই আমি মনে করি। 

লেখক: শিক্ষার্থী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা/মাহি/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়