ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি এবং আমাদের উদাসীনতা

স্বপ্নীল রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৩, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৬:৪৪, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি এবং আমাদের উদাসীনতা

পৃথিবীতে করোনাকাল চলছে। লকডাউন শেষে কাজকর্ম শুরু হয়েছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। যদিও করোনার অতিমারিতে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আমাদের দেশেও প্রাণহানির সংখ্যা কম নয়, আক্রান্তের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিষেধকহীন এই রোগ থামাতে শুরু থেকেই হিমশিম খাচ্ছে সবাই। যে কারণে শুরু থেকেই পৃথিবীর সব দেশ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত বারবার সাবান দিয়ে পরিষ্কার করা, হ্যান্ডশেক বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকা বা সংস্পর্শে না আসা, হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে নেওয়া, কাপড় জীবাণুমুক্ত রাখা ইত্যাদি।

এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ করা। তা সত্ত্বেও প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে। প্রথম দফা সংক্রমণ শেষে কোনো কোনো দেশে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ হচ্ছে। যখন মনে হচ্ছে করোনাভাইরাস বিদায় নিয়েছে তখন নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য বিভিন্ন দেশ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। রাশিয়া ও চীন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সামনের কাতারে রয়েছে। আরও কয়েকটি দেশ সফলতার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। সেদিন বেশি দূরে নয় যখন করোনাভাইরাসের কারণে আর কোনো প্রাণহানি হবে না। করোনার ভ্যাকসিন প্রতিটি মানুষের দেহে প্রয়োগ করা হবে। অন্য অনেক ভাইরাসের মতো করোনাভাইরাস ভীতিও আমাদের ভেতর থেকে বিদায় নেবে।

কিন্তু ততদিন পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, মানতে হবে, বুঝতে হবে- মেনে চলাটাই একমাত্র অবলম্বন। এই সময় আমাদের সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্যবিধি মেনা চলা একান্ত প্রয়োজন। স্বাস্থ্যবিধি এমন একটি বিষয় যা আমাদের প্রতিদিন মেনে চলা উচিত। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার মতো নিত্য স্বাস্থ্যবিধি আমাদের এমনিতেই অনুসরণ করা উচিত। ফলে আমরা বহু রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারি। কিন্তু আমরা তা কতজন করি? সুরক্ষা পেতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর প্রথম থেকেই এ কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এখন হাট বাজারে সবখানে পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তেমন কোনো আগ্রহ আমাদের মাঝে নেই। মাস্ক ব্যবহারেই চূড়ান্ত অনীহা দেখা যাচ্ছে।

কোনো নিয়ম বা আইন তৈরির উদ্দেশ্য থাকে জনসাধারণের কল্যাণ। আমাদের দেশে জনকল্যাণে বহু আইন রয়েছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে আইন মেনে চলার প্রবণতা নেই। একটু মেনে চললেই যখন দেশটাকে আরো সুন্দর করে তোলা যায় কিন্তু আমরা তা করতে নারাজ। আর করোনার সময়ে মেনে চলা আবশ্যকীয় স্বাস্থ্যবিধি নিজের জীবনের প্রশ্ন। নিজের সঙ্গে আরো অনেক মানুষের জীবনের প্রশ্ন। কারণ একজন থেকে অনেকে ছড়ায় এই ভাইরাস। অথচ সামান্য একটু অভ্যাস পরিবর্তন করলেই আমরা নিজেদের সুরক্ষিত করার পাশাপাশি অন্যদেরও সুরক্ষিত রাখতে পারি। অথচ আমরা এ ব্যাপারে উদাসীন।

আমরা একটু সচেতন হলেই করোনায় মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারি। অথচ উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি- যত দিন যাচ্ছে আমরা যেন হাল ছেড়ে দিচ্ছি। পণ করেছি আমাদের আর নিয়ম মেনে চলার প্রয়োজন নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানতে অস্বীকার করছি। করোনা শুরুর পর কিছুটা নিয়মের মধ্যে জীবন যাপন করলেও দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মধ্যে থেকে সেই প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে। এর ফল কোনোভাবেই ভালো হবে না। করোনা নিয়ন্ত্রণের যে প্রচেষ্টা তা সফলভাবে সম্ভব হবে না। কারণ এর অনেকটা দায় আমাদের ওপরেই বর্তায়। আমরা নিজেদের দায়িত্ব কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারি না। রাস্তাঘাটে, গণপরিবহনে, হাট বাজারে মানুষের চলাচল দেখে বুঝতে কষ্ট হয় যে পৃথিবীতে করোনার অতিমারি চলছে এবং আমাদের দেশে এই অতিমারিতে প্রতিদিন মানুষের প্রাণ যাচ্ছে।

পত্রিকায় মাস্ক না পরার জন্য জরিমানা আদায়ের খবর পড়েছি। কিন্তু তাতেও টনক নড়ছে না। অথচ মাস্ক ব্যবহার করলে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায়। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই এটি অনুসরণ করা হচ্ছে। তাহলে আমরা কেন নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছি? একটু সচেতনার অভাবে আমরা করোনার ভয়াবহতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এমনিতেই দক্ষিণ এশিয়ায় করোনার প্রকোপ বাড়ছে। আমাদের উচিত ছিল করোনার শুরু থেকে যে অভ্যাস করেছিলাম বা আমাদের বিশেষজ্ঞরা করোনা থেকে বাঁচতে যেসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলেছিলেন সেগুলো অনুসরণ করা। এটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হওয়া উচিত ছিল। তা হয়নি। এর বিপরীত চিত্র আমাদের চোখে পড়ছে। আইন মানার সাধারণ ইচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। ফলে আমরা নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছি। এর মূল্য আমাদেরই দিতে হবে।

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়