ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ট্রাম্প না বাইডেন

অলোক আচার্য || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৪, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৯:১৭, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ট্রাম্প না বাইডেন

বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন গণতন্ত্রের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন দ্বারপ্রান্তে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন জমে উঠতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীও স্থির হয়েছে। এখন চলছে বাক্যবাণে পরস্পরকে ঘায়েল করার চর্চা।

নির্বাচনটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই মানুষের মধ্যে এত আগ্রহ। কারণ এখনও বৈশ্বিক ক্ষমতার কেন্দ্রস্থলে রয়েছে দেশটি। যদিও সেই সময় দ্রুতই বদলে যাচ্ছে। তারপরও ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা অথবা ডেমোক্র্যাটদের বিজয় পৃথিবীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এরই মধ্যে শেষ হলো ডেমোক্র্যাটিক পার্টির চার দিনের জাতীয় সম্মেলন। সেখানে প্রথম দিনেই সাবেক ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামাসহ বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট নেতা বক্তব্য দিয়েছেন। ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী জো বাইডেন এখনও বিভিন্ন জরিপে এগিয়ে রয়েছেন। তবে জরিপ যে সবকিছু নয় তার প্রমাণ হয়ে গেছে ২০১৬ সালের নির্বাচনে। সেবার জরিপে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পিছিয়ে থেকেও জয়ী হয়েছেন। নির্বাচনের এখনো বেশ কিছুটা সময় বাকি আছে। এর মধ্যে জরিপের ফলে পরিবর্তন ঘটতে পারে। যে কোনো সময় বদলে যেতে পারে জরিপের হিসাব-নিকাশ।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিশ্লেষণে দেখা গেছে নির্বাচনে জয় পরাজয়ে ‘ব্যাটল গ্রাউন্ড’ বলে পরিচিত অঙ্গরাজ্যগুলো নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে। আমেরিকার নির্বাচনে রিপাবলিকান দুর্গ বলে পরিচিত অঙ্গরাজ্যগুলোকে বলা হয় ‘রেড স্টেট’ আর ডেমোক্র্যাটদের প্রাধান্য পাওয়া অঙ্গরাজ্যগুলোকে বলা হয় ‘ব্লু স্টেট’ এবং যে অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোট যে কোনো শিবিরেই যেতে পারে সেই রাজ্যগুলোকে বলা হয় নির্বাচনী রণক্ষেত্র বা ব্যাটল গ্রাউন্ড। শেষ পর্যন্ত এই অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটই জয় পরাজয়ে নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত নির্বাচনে ক্ষমতায় আসেন ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগানে। আমেরিকা তার সময়ে কতটা গ্রেট হয়েছে সেই বিচার করার সময় এসে গেছে। আর মাত্র দুই মাস। এই নির্বচানেও কিন্তু বর্হিরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বিষয়টি সামনে এসেছে। প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের মার্কিন মসনদের ক্ষমতায় আসা বেশ নাটকীয়। কারণ সে সময় ট্রাম্পের বিরোধী দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন বেশ শক্ত অবস্থানে ছিলেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত জরিপেও এগিয়ে ছিলেন হিলারি ক্লিনটন। ফলে যখন নির্বাচনে ট্রাম্প বিজয়ী হন, তখন অভিযোগ ওঠে রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা হয়েছে। এ নিয়ে জল ঘোলা কম হয়নি। ক্ষমতায় এসেই চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়েছেন ট্রাম্প। এরপর আরও অনেক ইস্যু নিয়ে ট্রাম্পকে সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। বিশ্বজুড়ে এখন যে করোনাভাইরাস তান্ডব চালাচ্ছে তার প্রথম কাতারে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রথম দিকে করোনাভাইরাস নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান এবং মাস্ক নিয়ে বিভিন্ন সময় করা মন্তব্য তার বিরুদ্ধে সমালোচনার জন্ম দেয়। নিজ দেশেই তিনি বহুবার সমালোচনার শিকার হয়েছেন। করোনার থাবা সেই ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যেই যখন পুলিশের গুলিতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড নিহত হয় তখন আমেরিকাজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। এই ঘটনাও ট্রাম্পকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে।

ট্রাম্পের সময় আমেরিকা বিশ্ব রাজনীতিতে কতটা শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছে অথবা পারেনি তা আলোচনাসাপেক্ষ। তার সময়েই একে একে বিভিন্ন চুক্তি যেমন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে দেশটি সরে এসেছে। সম্প্রতি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। প্রথমটি হলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাতের সঙ্গে ইসরাইলের ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি। যা ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সম্ভব হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে ট্রাম্পের জন্য এটি সুফল বয়ে আনবে বলে মনে করা হচ্ছে। অপরদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাজনিত প্রস্তাব পাসে ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও দুটো বিষয়ই বৈশ্বিক ঘটনাবলির সঙ্গে সম্পর্কিত এবং দেশের জনগণ প্রথমে লক্ষ্য করে নিজের দেশে তার অবস্থান।

অন্যদিকে প্রেসিডেন্টপ্রার্থী জো বাইডেন তার রানিংমেট হিসেবে পছন্দ করেছেন কৃষ্ণাঙ্গ কমলা হ্যারিসকে। তিনি মনোনীত হওয়ার পরেই নিবর্চানী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন এবং আমেরিকাকে নতুন করে নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কিন্তু পুলিশের গুলিতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু এবং সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্ল্যাক লাইফ আন্দোলন এখনও থামেনি। তাছাড়া ট্রাম্পের সময়ে চীনবিরোধী মনোভাব জোরালো হয়েছে। ট্রাম্পের সময় দেশের বেকার সমস্যা কমেছে বলে দাবি করা করা হয়। অর্থনীতিও শক্তিশালী হয়েছে। এই শক্তিশালী অর্থনীতি তার নির্বাচনের একটি বড় নিয়ামক হয়ে উঠতে পারতো। কিন্তু করোনা সব হিসাব পাল্টে দিয়েছে।

এদিকে ব্যালট ভোট নিয়েও বিবাদ চলছে। ট্রাম্পের আশঙ্কা সেখানে জালিয়াতি হতে পারে। দেখা যাচ্ছে, বৈশ্বিক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক; বিশেষ করে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে আমেরিকার অবস্থান, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় সামর্থ্য অর্জন, দেশের অর্থনীতি, চাকরি, অভিবাসনের মতো ইস্যু আগামী নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সময়ের ওপর। ট্রাম্প কি আবারো ক্ষমতায় আসবেন, নাকি বাইডেন তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে।

লেখক: সাংবাদিক

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়