ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

করোনাকালে ভোজনবিলাস

ফজলে আজিম, কানাডা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৭, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৭:৩২, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০
করোনাকালে ভোজনবিলাস

ভোজনরসিক হিসেবে বাঙালি জাতির বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। তাই নিজ দেশ থেকে অনেক দূরে কানাডায় এসেও এই বাঙালিয়ানা বৈশিষ্ট্য থেকেই গেছে। এমনকি করোনাভাইরাসের এই সময়ে খাবারের প্রতি ঝোঁক বিন্দুমাত্র কমেনি। বলতে গেলে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থেকে খাবারের প্রতি প্রেম আরো বেড়েছে। কিন্তু করোনার এই সময়ে রেস্তোরাঁগুলোতে গিয়ে খাবার খাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বিকল্প হিসেবে অনলাইনে খাবার অর্ডারই ভরসা।

ভ্যানকুভারকে বলা হয় কানাডার সবচেয়ে সুন্দর শহর। প্রাকৃতিক বৈচিত্র ও আবহাওয়ার কারণে এটি অন্য শহরগুলোর চেয়ে আলাদা। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে ভ্যানকুভারের চিত্র একদম আলাদা। এই সময় প্রচুর পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। কেউ আসেন বিমানে আবার কেউবা ক্রুজ শিপ নিয়ে।

তবে এবারের গ্রীষ্মকালটা একবারে ব্যতিক্রম। পর্যটকদের আনাগোনা একবারে কমে গেছে, শীতল হয়ে গেছে ব্যবসায়িক চিত্র। যেমন: আগে রেস্তোরাঁগুলোতে প্রচুর মানুষ যেত। করোনাভাইরাসের কারণে এখন আর মানুষ রেস্তারাঁয় বসে খেতে চায় না। এখন অধিকাংশ মানুষ অনলাইন ডেলিভারি সার্ভিসের মাধ্যমে বাসায় বসে খাবার অর্ডার করে। এতে রেস্তোরাঁয় যাওয়া ছাড়াই ঘরে বসে খাবার পাওয়া যায়। তবে এতে করে রেস্তোরাঁগুলোর বিক্রি তুলনামূলক কমে গেলেও কর্মীদের ব্যস্ততা কিন্তু কমেনি। অনলাইন অর্ডারের কারণে তাদের রান্নাঘরের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। টেবিলে এখন আর তেমন লোক দেখা যায় না।

যদিও কিছু কিছু রেস্তোরাঁয় এখনো মানুষ ভিড় করে। তবে আগে যেখানে একসঙ্গে একশ মানুষ বসে খেতে পারতেন এখন বসতে পারেন ২৫-৩০ জন। এজন্য তাদেরকে আগে থেকেই রিজার্ভেশনে কল করে বুক করে রাখতে হয়। এমনকি রেস্তেরাঁয় যারা আসেন তাদের প্রত্যেকের নাম, ফোন নম্বরসহ অন্য তথ্যগুলো নোট করে রাখা হয়, যাতে কেউ করোনা আক্রান্ত হলেই সঙ্গে সঙ্গে তাদের সাথে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে দেওয়া যায়।

ভ্যানকুভারে যদি কারো করোনাভাইরাস ধরা পড়ে তাহলে তাদের বিগত কয়েকদিনের রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়। যেমন: কে কোথায় গেল?, কার কার সাথে সাথে চলাফেরা করেছে— এ ধরনের খুঁটিনাটি বিষয় খুঁজে বের করা হয়। পরে তাদের সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। তারপরও যদি কেউ রেস্তোরাঁয় গিয়ে খেতে চান তাদেরকে মেনে চলতে হয় বিশেষ কিছু সতর্কতা। যদি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে থাকেন, ভালো অনুভব না করেন, কোনো ধরনের অসুস্থতার উপসর্গ থাকলে তাদেরকে রেস্তোরাঁয় যেতে নিরুৎসাহিত করা হয়। এছাড়া রেস্তোরাঁতে যাওয়ার পরপরই প্রথমে সবাইকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হয় এবং সবাইকে নিরাপদ দূরত্ব রেখেই রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করতে এবং বসতে হয়। প্রতিবার ব্যবহারের পর ডাইনিং টেবিলের প্রতিটি চেয়ার এবং টেবিল স্বাভাবিকভাবে পরিষ্কার করার পাশাপাশি জীবাণুমুক্ত করা হয়।

এখন আর আগের মতো রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসার সাথে সাথেই একটা স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাসে করে ঠান্ডা পানি দেয়ার ব্যবস্থা নেই। করোনাভাইরাসের কারণে এখন আর কাউকে সরাসরি গ্লাসে পানি পরিবেশন করা হয় না। বিশেষ নিরাপত্তার জন্য বোতলজাত পানি সরবরাহ করা হয়। খাবার পরিবেশনেও এসেছে কিছুটা পরিবর্তন। অধিকাংশ রেস্তোরাঁয় আগে কাচের প্লেট ব্যবহার করা হলেও এখন ওয়ান টাইম প্লেট বা কাগজের বক্স ব্যবহার করে থাকে।

সবশেষ বলা যায়, করোনা আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খাবারের অভিজ্ঞতাতেও অনেকটাই পরিবর্তন এনেছে। ইচ্ছে করলেই আগের মতো স্বাচ্ছন্দ্যে খাবার খাওয়া যায় না। আগের মতো জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশও লক্ষ্য করা যায় না। তবে আবারো সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে এটিই প্রত্যাশা।

আজিম/মারুফ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়