ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

সেফটি পিনের চেইন বানিয়ে গিনেস বুকে পার্থ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ২২:০৭, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
সেফটি পিনের চেইন বানিয়ে গিনেস বুকে পার্থ

সোনালি রঙের সেফটি পিন দিয়ে চেইন তৈরি করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসির নগরের পার্থ চন্দ্র দেব (২৪)।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডস রেকর্ড কর্তৃপক্ষ এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সেফটি পিনের চেইন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

দুই সেন্টিমিটার আকারের ১ লাখ ৮৭ হাজার ৮২৩টি সেফটি পিন দিয়ে চেইন তৈরি করেন পার্থ। এর মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালে করা ভারতের হার্শা নান ও নাভা নামের দুজনের গড়া রেকর্ড আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে দিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই তরুণ।

গিনেসের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গত বছরের ২০ এপ্রিল বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণ পার্থ চন্দ্র দেব দীর্ঘতম সেফটি পিনের চেইন তৈরি করে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার জন্য গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডসে আবেদন করেন। গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ২ হাজার ৪০১ দশমিক ৮৩ মিটার বা সাত হাজার ৮৮০ ফুট ০.২ দুই ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের এ চেইন তৈরি করেন পার্থ।

বিশ্ব রেকর্ড গড়তে গিনেস ওয়ার্ল্ডসে আবেদন করে অনুমতি পাওয়ার পর গত বছরের ২৩ জুলাই থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একটানা ৪৫ দিন সেফটি পিন দিয়ে চেইন তৈরি করেছেন পার্থ। নিজের বাড়িতে ২৪১ ঘণ্টা ৪২ মিনিটে তৈরি করেন পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সেফটি পিনের চেইন।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ফান্দাউক বাজারে নিজের দোকানে বসে এসব তথ‌্য জানান পার্থ চন্দ্র দেব। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বড় ভাইয়ের সঙ্গে কসমেটিকস বিক্রি করি। ছোটবেলা থেকেই ব্যতিক্রম কিছু করার ইচ্ছে ছিল। বিশ্ব রেকর্ড গড়ে গিনেস বুকের তালিকাভুক্ত হওয়ার বাসনাটা সময়ের সাথে বাড়তে থাকে। তাই সেফটি পিন দিয়ে চেইন বানানোর পরিকল্পনা করি।’

তিনি বলেন, ‘গিনেস রেকর্ড ঘেঁটে দেখেছি। ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল ভারতের হার্শা নান ও নাভা নান যৌথভাবে সেফটি পিন দিয়ে সবচেয়ে দীর্ঘতম চেইন তৈরির রেকর্ড গড়েছিলেন। তাদের চেইনটির দৈর্ঘ্য ছিল ১ হাজার ৭৩৩ দশমিক ১ মিটার। সে কথা চিন্তা করে দোকানের ছোট ছোট ২ সেন্টিমিটার আকারের সোনালী রঙের সেফটি পিন দিয়ে সবচেয়ে বড় চেইন তৈরির পরিকল্পনা করি। ২০১৯ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নিবন্ধিত হই। তারপর ২০ এপ্রিল আবেদন করি। গত বছরের ১৯ জুলাই গিনেস ওয়ার্ল্ডস রেকর্ড কর্তৃপক্ষ আমাকে চেইন তৈরির অনুমতি ও পরামর্শ দেন। দুজন স্বাক্ষী ও সার্ভেয়ারসহ অন্তত ১৪ ধরনের ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি। গত বছরের ২৩ জুলাই থেকে কাজ শুরু করি। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা কাজ করেছি। ১৩ হাজার ৩৭০ টাকায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৮২৩টি সোনালি রঙের দুই সেন্টিমিটার আকারের সেফটি পিন কিনে চেইন তৈরির কাজ শুরু করি।’

মা স্বপ্না দেব, বড় ভাই জয়ন্ত কুমার দেব, ভাগনি জয়শ্রী দেব ও বৌদি তাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন বলে জানান পার্থ।

পার্থ বলেন, ‘গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর নাসিরনগরের শ্রী শ্রী পাগল শংকর মন্দিরে এই চেইনের দৈর্ঘ‌্য মাপি। স্থানীয় পাগল শংকর মন্দিরে এ চেইন মাপার সময় হবিগঞ্জের লাখাই মুক্তিযোদ্ধা সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক রাজীব কুমার আচার্য ও ফান্দাউক পন্ডিতরাম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পল্লব হালদার স্বাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ফান্দাউকের স্বীকৃতপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ জরিপকারক (সার্ভেয়ার) তোফাজ্জল শাহ মারজান এ চেইন মাপেন। মন্দিরে এর দৈর্ঘ্য পরিমাপ করে ১৭ জিবির ভিডিও ফুটেজ তৈরি করা হয়েছে। পরে সেটি দুই জিবিতে রূপান্তর করে গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।’

পার্থর বড় ভাই জয়ন্ত কুমার দেব রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অনেকেই ফোন করে অভিনন্দন জানাচ্ছে। ভালো লাগছে। তবে প্রশাসন বা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কেউ খোঁজ নেননি।’

পার্থ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ফান্দাউক ইউনিয়নের ফান্দাউক গ্রামের প্রয়াত জগদীশ দেবের ছোট ছেলে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে বিএসএস (ডিগ্রি) শেষ বর্ষের ছাত্র। পাশাপাশি তিনি হবিগঞ্জের সাঙ্গবেদ সংস্কৃতি কলেজে ব্যাকরণতীর্থ ও স্মৃতিতীর্থ (আদ্য) বিভাগে পড়াশোনা করছেন।

পড়াশোনার পাশাপাশি পার্থ ফান্দাউক বাজারে বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জগদীশ দেব অ‌্যান্ড সন্সে বড় ভাই জয়ন্ত কুমার দেবকে সহযোগিতা করেন।

মাইনুদ্দীন রুবেল/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়