ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আমাদের একজন চঞ্চল চৌধুরী আছেন 

রাহুল রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৭:০৪, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
আমাদের একজন চঞ্চল চৌধুরী আছেন 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী একদিন মঞ্চনাটক দেখতে গেলেন। সেটাই তার জীবনের প্রথম মঞ্চনাটক দেখা। এত দিন ধরে ছবি আঁকা, গান-বাজনা নিয়ে পড়ে থাকা ছেলেটা অনুভব করলো এত দিনে তার জীবনে সত্যিকারের প্রেম এসেছে। এই মঞ্চনাটকই তার প্রথম প্রেম, আর অভিনয়ই তার জন্য একমাত্র সত্য।

‘সবার জন্য সব সত্য, আমার জন্য অভিনয়’ এই প্রতিজ্ঞা করেই সেদিন থেকে যাত্রা শুরু। নাট্যদল আরণ্যকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শুরু করলেন মঞ্চনাটক। এরপর একদিন পরিচালক ফরিদুর রহমানের হাত ধরে তিনি পদার্পণ করলেন বোকাবাক্সের দুনিয়ায়। ‘গ্রাস’ নাটক থেকে শুরু করে অভিনয় করেছেন ফারুকীর তাল পাতার সেপাই কিংবা হাড়কিপ্টে, অলসপুর, ইডিয়ট, হলুদ খাম বনাম নীল খামের মতো তুমুল জনপ্রিয় সব নাটকে। বিশেষ করে তার গ্রামীণ সহজ-সরল চরিত্রগুলো তাকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়।

ছোটপর্দা তার জাত চেনালেও যতবারই তিনি বড়পর্দায় এসেছেন ততবারই নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন। আগের করা চরিত্রগুলো একদম মুছে দিয়ে হয়ে উঠেছেন একদম নতুন চরিত্র। যেন ‘এক চরিত্র থেকে আরেক চরিত্রে শিফট হলেই সব হাওয়া’। তিনি কখনো হাজির হয়েছেন এক সরল প্রেমিক সোনাই হয়ে। ‘মনপুরা’ সিনেমায় সোনাই-পরীর এত সুন্দর, এত স্নিগ্ধ প্রেমের অমন নিঠুর পরিণীতি দর্শকের মনে এক গভীর ক্ষত তৈরি করেছিল। এখনও সোনাই চরিত্রের প্রেমে পড়া মানুষগুলো গেয়ে ওঠে-

‘কেহ লইলো আতর লোবান কেহ লইলো জল
কেহ লইলো বরুইস পাতা কেহ লইলো পরীরে…
সোনাই হায় হায়রে…সোনাই হায় হায়রে…

তিনিই আবার কখনও হয়ে উঠেছেন শারাফত করিম আয়নার মতো দুর্ধর্ষ চরিত্র। অমিতাভ রেজার এক ‘আয়নাবাজি’ সিনেমাতেই তিনি পলকে হয়ে উঠেছিলেন একজন ধর্ষক, একজন জেলখাটা আসামি, একজন নিজাম সাইদ চৌধুরির মতো রাজনীতিবিদ আবার একজন প্রেমিক আয়না। চরিত্রের এমন বদল বাংলা সিনেমা বোধহয় আর কখনও দেখেনি। এই কাজটা বোধহয় একমাত্র তিনিই করতে পারতেন। তিনি পারতেন কারণ, তার ‘মজা লাগে, ভোর হলেই চরিত্র বদলান’। তাছাড়াও ‘মনের মানুষ’ কিংবা ‘টেলিভিশন’-এর মতো সিনেমাগুলোতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক অন্য চরিত্র। আবার ‘দেবী’র মিসির আলী চরিত্রে হয়ে উঠেছিলেন কোনো অভিনেতা। 

এই এতগুলো চরিত্র বদলানো মানুষটার নাম চঞ্চল চৌধুরী। আমাদের চঞ্চল চৌধুরী। তবুও আমাদের আক্ষেপ রয়ে যায়, আপনাকে বড়পর্দায় আরও অনেক বেশি করে দেখার। যদিও এই আক্ষেপের দায় একটুও আপনার নয়। যে চরিত্রে আপনি খেল দেখাতে পারবেন, যে চরিত্রের দিকে থিয়েটার ভর্তি মানুষ হা হয়ে তাকিয়ে থাকবে, সে চরিত্রগুলো তৈরি হতে হবে তো! এই চরিত্র, এই সিনেমাগুলো নির্মাতারা অনেক বেশি করে বানাক। কেননা চঞ্চল চৌধুরীকে ধারণ করতে পারে এমন চরিত্র, এমন সিনেমাগুলো বড্ড প্রয়োজন। 

সত্যিই! এই শহরে আপনার মতো অভিনেতা আর একটাও নাই। হা হা হা! বোঝো নাই ব্যাপারটা…? 

লেখক: শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাকা/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়