ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

যার কবিতার চরণ আজো মানুষের মুখে মুখে

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ১২ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১১:০৩, ১২ অক্টোবর ২০২০
যার কবিতার চরণ আজো মানুষের মুখে মুখে

তার বেশ কিছু কবিতার চরণ আজো মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়।   চিরন্তনী’র মতোই এসব কবিতার লাইন মনে রেখেছে মানুষ। 

যেমন- ‘নাই কিরে সুখ? নাই কিরে সুখ?/ এ ধরা কি শুধু বিষাদময়?/যতনে জ্বলিয়া কাঁদিয়া মরিতে/ কেবলি কি নর জনম লয়?’

আবার- ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে/আসে নাই কেহ অবনী ‘পরে,/সকলের তরে সকলে আমরা/ প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।’

আবার- ‘করিতে পারি না কাজ/সদা ভয় সদা লাজ/ সংশয়ে সংকল্প সদা টলে / পাছে লোকে কিছু বলে।’

আবার- ‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি, এ জীবন মন সকলই দাও/ তার মতো সুখ কোথাও কি আছে? আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’

আবার- ‘যেই দিন ও চরণে ডালি দিনু এ জীবন/হাসি অশ্রু সেইদিন করিয়াছি বিসর্জ্জন।/হাসিবার কাঁদিবার অবসর নাহি আর, / দুঃখিনী জনমভূমি মা আমার, মা আমার।’

আবার- ‘বর্তিকা লইয়া হাতে চলেছিল একসাথে/পথে নিভে গেছে আলো পড়িয়াছে তাই, / তোমরা কি দয়া করে তুলিবে না হাত ধরে/অর্ধদন্ড তার লাগি থামিবে না ভাই? /তোমাদের বাতি দিয়া প্রদীপ জ্বালিয়া নিয়া/তোমাদের হাত ধরি হোক অগ্রসর/পঙ্কমাঝে অন্ধকারে ফেলে যদি যাও তারে/আঁধার রজনী তার রবে নিরন্তর।’

আবার- ‘জড়ায়ে মায়ের গলা শিশু কহে আসি/মা, তোমারে কত ভালোবাসি! / কত ভালবাস ধন?” জননী শুধায়।/‘এ-ত’ বলি দুই হাত প্রসারি’ দেখায়।/তুমি মা আমারে ভালবাস কতখানি?/মা বলেন “মাপ তার আমি নাহি জানি।”

অমূল্য এসব কবিতার চরণের রচয়িতা কামিনী রায়।  আজ এই কবির জন্মদিন। 

বরিশাল জেলার বাসন্ডা গ্রামে ১৮৬৪ সালের ১২ অক্টোবর তার জন্ম।  তিনি ব্রিটিশ ভারতের প্রথম বাঙালী গ্র্যাজুয়েট।  পিতৃ প্রদত্ত নাম কামিনী সেন।  বিয়ের পর স্বামী কেদার নাথ রায়ের পদবি যুক্ত হয়ে হন কামিনী রায়।

বাবা চন্ডিচরণ সেন ছিলেন তৎকালীন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ, বিচারক।  তার কাকা নীতিশ রায় ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের জাঁদরেল ব্যারিস্টার।  পরে যিনি কলকাতার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।  কামিনী রায়ের বোন যামিনী সেন ছিলেন তৎকালীন সময়ের প্রখ্যাত চিকিৎসক।  তিনি নেপালের রাজ পরিবারের চিকিৎসক ছিলেন। 

কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে তিনি ১৮৮৬ সালে সংস্কৃত ভাষায় সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।  কৈশোরেই কামিনী রায় সাহিত্য রচনা শুরু করেন এবং কবিত্ব-শক্তির প্রকাশ ঘটান।  তার প্রথম কাব্য ‘আলো ও ছায়া’ (১৮৮৯)।  তার লেখা কাব্যের মধ্যে ‘নির্মাল্য’, ‘পৌরাণিকা’, ‘মাল্য ও নির্মল্য’, ‘দীপ ও ধুপ’, ‘জীবন পথে’ও ‘শ্রাদ্ধিকী’ উল্লেখযোগ্য।

তৎকালীন সময়ে কামিনী রায় নারীর ভোটাধিকার আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন তিনি।  তাদের আন্দোলনের ফলেই তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে বাঙালী নারীর ভোটাধিকার প্রদান করে।  কামিনী রায়কে ব্রিটিশ সরকার ‘নারী শ্রম তদন্ত কমিশন’ এর সদস্য মনোনীত করে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কামিনী রায়কে তার অসামান্য কবি প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ‘জগত্তারিনী’ স্বর্ণপদক প্রদান করে।  তিনি ১৯৩০ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের ২৯তম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

অবাক করা তথ্য হচ্ছে, তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের প্রথম নারী স্নাতক ডিগ্রিধারী।  তিনি একসময় যে ছদ্মনামে লিখতেন তা-ও মজার ‘জনৈক বঙ্গমহিলা’।

কামিনী রায়ের জীবনের দুঃখজনক অধ্যায় হচ্ছে- বিয়ের ১২ বছর পর (১৯১০ খ্রি.) তার স্বামীর মৃত্যু হয়।  এর তিন বছর পর শিশুসন্তান অশোকের মৃত্যু হয়।  স্বামী এবং পুত্রের মৃত্যুর পর দুঃখ বেদনা নিয়েই তিনি পরবর্তী জীবন অতিবাহিত করেন।

শেষ বয়সে তিনি ঝাড়খন্ডের হাজারীবাগে বসবাস করতেন।  ১৯৩৩-এর ২৭ সেপ্টেম্বর ৬৯ বছর বয়সে এই বিদুষি  কবির মৃত্যু হয়।

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়