ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

প্রথম আধুনিক বাঙালি মুসলিম নারী চিকিৎসক

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১১:৩২, ১৫ অক্টোবর ২০২০
প্রথম আধুনিক বাঙালি মুসলিম নারী চিকিৎসক

ডা. জোহরা বেগম কাজী প্রথম আধুনিক বাঙালি মুসলিম নারী চিকিৎসক।  বাংলাদেশে তিনি প্রথম মুসলিম নারী চিকিৎসাবিদ হিসেবে এক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব।

অবিভক্ত ভারতবর্ষে নারী জাগরণের যে উন্মেষ ঘটেছিল, অধ্যাপক ডা. জোহরা বেগম কাজী সেই আন্দোলন ধারার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানে কাজের ক্ষেত্রে যোগ করেন এক নতুন মাত্রা। 

তিনি একাধারে চিকিৎসক, শিক্ষক, সমাজসেবক, নারী জাগরণের পথিকৃৎ ও অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী ব্যক্তিত্ব।  এই মহীয়সী নারীর ১০৮তম জন্মবার্ষিকী আজ। 

১৯১২ সালের ১৫ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের মধ্য প্রদেশের রাজনান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।  তার বাবা ডা. কাজী আব্দুস সাত্তার ও মা মোসাম্মদ আঞ্জুমান নেসা।  তার আদি পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার গোপালপুর গ্রামে।

একজন মেধাবী ছাত্রী হিসেবে জোহরা বেগম বাল্যকাল থেকেই প্রথম স্থান অধিকার করে সকল পর্যায়ের সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেন।  ১৯৩৫ সালে দিল্লির হার্ডিং মহিলা মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে শীর্ষ স্থান অধিকার করে তিনি এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন এবং ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় কর্তৃক প্রদত্ত পদকে ভূষিত হন।

জনসেবা ও সমাজকল্যাণমূলক আদর্শকে ব্রত হিসেবে নিয়ে ডা. জোহরা কাজী মহাত্মা গান্ধীর ‘সেবাশ্রমে’ তার চাকরিজীবন শুরু করেন।  ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পূর্বে তিনি ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।  দেশ বিভাগের পর তিনি পূর্ববাংলায় চলে আসেন।  নরসিংদী জেলার রায়পুর উপজেলার হাতিরদিয়ার জমিদার পুত্র রাজুউদ্দিন ভূঁইয়ার (এমপি) সাথে তিনি পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।

জন্মদিনে গুগল ডুডলে ডা. জোহরা বেগম কাজী

 

এ দেশে যখন কোনো নারী ডাক্তার ছিল না, তখন তিনিই প্রথম বাঙালি মুসলিম নারী ডাক্তার হিসেবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে যোগদান করেছিলেন।  তিনি আর্তমানবতার সেবা করেছেন, মুমূর্ষু রোগীর পাশে বিনিদ্র রজনী যাপন করেছেন।  তিনি আড়ম্বরহীন জীবনযাপন করতেন এবং প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতেন না।  তার পোশাক-পরিচ্ছদ, চলাফেরা ছিল একদম সাদাসিধে।  তিনি চিকিৎসা ব্যবস্থার মানোন্নয়নে শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসক তৈরির ক্ষেত্রে একজন সার্থক অধ্যাপক ছিলেন। 

১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন।  ডা. জোহরা কাজীর ঐকান্তিক চেষ্টার ফলে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং পরে মিটফোর্ড হাসপাতালে স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগ খোলা  হয়।  তিনি ১৯৫৫ সালে সরকারি বৃত্তি নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ইংল্যান্ডে যান এবং সেখান থেকে অন্যান্য প্রশিক্ষণসহ উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে তার আগের কর্মস্থলে প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন।  তিনি হলি ফ্যামিলি রেডক্রস সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশে স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যার ক্ষেত্রে যে ক'জন মহীয়সী নারী আলোরবর্তিকা নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন, ডা. জোহরা বেগম কাজী তাদের অগ্রগণ্য।  তিনি আপন ভুবনে রচনা করেছিলেন এক বলয়ের, যেখানে নবজাতক থেকে মৃত্যুপথযাত্রী সবাই পেয়েছে তার সেবা।  চিকিৎসাবিজ্ঞানে অনন্যসাধারণ ভূমিকার জন্য পাকিস্তান সরকার তাকে তঘমা-ই-পাকিস্তান খেতাবে ভূষিত করেছিল।  তিনি একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, বিএমএ স্বর্ণপদকসহ অসংখ্য পদকপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। 

এই মহীয়সী চিকিৎসাবিজ্ঞানী ২০০৭ সালের ৭ নভেম্বর ইন্তেকাল করেন। 

বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ও ঐতিহাসিক দিনকে স্মরণ করার জন্য গুগল তাদের হোমপেজে প্রকাশ করে বিশেষ লোগো, যাকে বলা হয় ডুডল।  জন্মদিনে আজ ডুডলে স্থান পেয়েছেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলিম নারী চিকিৎসক অধ্যাপক জোহরা বেগম কাজী।

সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্টটির হোমপেজে প্রবেশ করলেই দেখা যাচ্ছে বিশেষ ডুডলটি।  এতে গুগলের অক্ষরগুলোকে সাজানো হয়েছে বিশেষভাবে।  যেখানে দেখা যাচ্ছে জোহরা বেগম কাজীর গলায় স্টেথসস্কোপ ও মাথার ওপর গাছের ছায়া।  গায়ে জড়ানো হলুদ রঙের একটি পোশাক।

ঢাকা/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়