ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বগুড়ার গাবতলীতে দেশের বৃহৎ কুমারপাড়া

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১১, ৭ নভেম্বর ২০২০  
বগুড়ার গাবতলীতে দেশের বৃহৎ কুমারপাড়া

এক সময় আমাদের দেশের গ্রমীণ জনপদে মাটির তৈজসপত্রের ব্যাপক চাহিদা ছিল। চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষ্যে মেলা হতো। মেলার বিশাল একটা অংশ জুড়ে থাকতো মাটির তৈরি জিনিসপত্র। সেগুলো দামেও ছিল বেশ সস্তা। মাটির তৈরি সেসব পণ্যের মধ্যে ছিল- বিভিন্ন রকম হাঁড়ি, প্রাণীর মূর্তি, নানা আকার আর প্রকারের খেলনা, আম-কাঁঠাল-কামরাঙা ইত্যাদি ফল।

ছোটবেলায় দেখেছি, প্রায় মধ্যবিত্ত পরিবারে একটি করে মাটির ব্যাংক। যে ব্যাংকে পরিবারের স্কুলপড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা খুচরো পয়সা জমাতো। বাবা-মায়ের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে, আত্নীয়-স্বজন কেউ আদর করে দিলে, নিজেদের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে মাটির ব্যাংকে জমা রাখতো তারা। একসময় সেই ব্যাংক ভরে যেতো খুচরো পয়সায়। তখন সেটা ভাঙা হতো।

দিন পাল্টেছে। মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা ক্রমশ কমছে। গ্রাম বাংলায় এখন আর সেভাবে মেলা হয় না। দু'চার জায়গায় হলেও সেই মেলায় মাটির তৈরি জিনিসপত্র তেমন পাওয়া যায় না। চাহিদা না থাকায় বাপ-দাদার শত বছরের এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যায় কুমার সম্প্রদায়ের মানুষ।  মাটির তৈরি জিনিসের জায়গায় প্লাস্টিক পণ্যের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। এখন খুব সামান্য কিছু কাজে মাটির হাঁড়ি-পাতিল ব্যবহৃত হচ্ছে।

তারপরও শত অভাব অনটনের মাঝে পাল গোষ্ঠীর অনেকে এখনও বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। এ পেশার মানুষেরা সারাদেশে খেয়ে না খেয়ে টিকে থাকলেও, বগুড়ার গাবতলীতে বাস করা শ দেড়েক পরিবার ভালোভাবেই তাদের দিন কাটাচ্ছেন। যদ্দুর জানা গেছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাল গোষ্ঠীদের বাস বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলায়। এই এলাকার নাম মহিষাবন পালপাড়া। বগুড়া শহর থেকে দশ-বারো কিলোমিটার দূরে। এখানে রয়েছে প্রায় দেড়শ ঘর পালের বাস। বিভিন্ন রকমের মাটির জিনিস বানালেও এদের জীবিকা মূলত নির্ভর করছে- দইয়ের হাঁড়ি বানিয়ে এবং তা বিক্রি করে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা, বিভিন্ন জিনিসের জন্য বিখ্যাত। তেমনি বগুড়া বিখ্যাত দইয়ের জন্য। আর এই বিখ্যাত দই পাতার জন্য দরকার হয় মাটির হাঁড়ি। এই দই শিল্পকে কেন্দ্র করে, মহিষাবন পাল গোষ্ঠীর পাল পরিবারগুলো ভালোভাবে টিকে আছে। তাদের উৎপাদিত মাটির হাঁড়ির প্রচুর চাহিদা। এই হাঁড়িতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে বগুড়ার বিখ্যাত দই। কেবল দেশেই বা বলছি কেনো, এদের বানানো হাঁড়িতেই এই দই চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে।

কেবল দইয়ের হাঁড়ি বানান না এখানকার পাল গোষ্ঠী। গ্রামীণ জনপদে ব্যবহৃত বাথরুমের রিং, নানা ধরনের মাটির পুতুল, ব্যাংক, খেলনাসহ চাহিদা মাফিক বিভিন্ন তৈজসপত্রও এরা তৈরি করে থাকেন। এসব পণ্য তৈরির সময় প্রথমে কাদামাটি আর পানি ভালোভাবে মিশিয়ে নেন। তারপর পা দিয়ে মাড়িয়ে এক রকমের মাটির মোল্ড তৈরি করেন। সেই মোল্ড দিয়ে প্রয়োজনমত বিভিন্ন জিনিস বানান। তারপর বানানো সেসব জিনিস রোদে শুকিয়ে নেন। ভালোভাবে শুকানো হলে আগুনে পুড়িয়ে সেইসব মাটির জিনিস ব্যবহার উপযোগী করে তোলেন। সবশেষে, পাইকাররা এসে তাদের চাহিদামত জিনিস নিয়ে যান।

ছবি: তারেকুল ইসলাম

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়