ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

যেভাবে কর্মসংস্থান বানালো ‘হালাল শপিং জোন’

পল্লব আহমেদ সিয়াম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪২, ১৫ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৩:৪৩, ১৫ নভেম্বর ২০২০
যেভাবে কর্মসংস্থান বানালো ‘হালাল শপিং জোন’

সরকারি চাকরির মোহে যখন লাখো তরুণ, তখন কিছু স্বপ্নবাজ নিজের পায়ে দাঁড়াতে উদ্যোগ নিয়েছেন। একদিকে পড়ালেখা, অন্যদিকে ক্ষুদ্র ব্যবসা, দুটোই সমানতালে চালিয়ে নিচ্ছেন। আবার টিকে থাকার লড়াইয়ে সামিল হচ্ছেন তাঁরা। 

দেশের এমন সংগ্রামী তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী আবু ইউসুফ। তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পল্লব আহমেদ সিয়াম।

সিয়াম: কেমন আছেন?

আবু ইউসুফ: জি, ভালো আছি।

সিয়াম: আপনার উদ্যোক্তা জীবনের শুরুর গল্পটা জানতে চাই। 
আবু ইউসুফ: অল্প মূলধন আর কয়েকটি টি-শার্ট নিয়ে ২০১৯ সালের ২ নভেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হল থেকে ‘হালাল শপিং জোন’-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছি। 

সিয়াম: পড়ালেখার পাশাপাশি এত কঠোর পরিশ্রম করছেন কীভাবে?

আবু ইউসুফ: আমার এই সফলতার মূলে রয়েছে আমার বিভাগের অভিভাবকতুল্য শিক্ষক ও আমার বন্ধুমহল। আমি যখন ক্ষুদ্র পরিসরে কাজ শুরু করেছিলাম, তখন অনেকেই ঠাট্টা, তামাশা করতো, কিন্তু আমার বিভাগের শিক্ষক ও বন্ধুরা আমাকে উৎসাহ দিতেন। তাদের অনুপ্রেরণায় আজ আমি এই জায়গায়।

সিয়াম: আপনি লোভনীয় সরকারি চাকরি না খুঁজে কেন উদ্যোক্তা হতে চাইলেন?

আবু ইউসুফ: ২০১৬-১৭ অর্থবছরের হিসাব মতে সারা দেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ ৭৭ হাজার জন। এই বেকারদের মধ্যে শিক্ষার্থী তরুণ প্রায় ১০ লাখ ৪৩ হাজার, যারা উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করা। এতে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় মোট বেকারের ৪০ শতাংশ। দেশে প্রতিবছর উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন প্রায় ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ২১ লাখ কর্মক্ষম মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে, কিন্তু কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে ১৩ লাখ। ফলে, প্রতিবছর ৮ লাখ মানুষ বেকার থেকে যাচ্ছে!

সুতরাং যে পরিমাণ শিক্ষিত জনশক্তি শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে, দুঃখজনক হলেও সত্যি, তাদের কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে অতি সীমিত। এতে দিনদিন বেকারত্ব বেড়েই চলেছে। তাই আমি মনে করি, সরকারি চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে হবে। কারণ, বর্তমান সময়ে বেকারত্ব দূরীকরণে একজন সফল উদ্যোক্তার বিকল্প নেই।

সিয়াম: আপনি প্রধানত কি কি পণ্য নিয়ে কাজ করছেন?

আবু ইউসুফ: আমরা সাধারণত ছেলেদের সব পোশাক নিয়ে কাজ করি, যেমন প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, হুডি, মোজা, ব্লেজার, কোর্ট, কটি ইত্যাদি।
এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানের লোগো সম্বলিত টি-শার্ট, শিক্ষা সফরের টি-শার্ট, র্যাগডে টি-শার্টসহ সব পণ্য নিয়ে কাজ করসি। এছাড়া শীতের সময় সব প্রকার শীতের কালেকশন নিয়েও কাজ করছি।

সিয়াম: আপনার প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা কারা?

আবু ইউসুফ: প্রাথমিক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা আমার মূল ক্রেতা ছিল, কিন্তু বর্তমানে অনলাইন কেন্দ্রীক হওয়ায় দেশের সবাই আমাদের ক্রেতা হতে পারেন।

সিয়াম: শিক্ষার্থী হিসেবে ব্যবসায় কি কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন?

আবু ইউসুফ: যেহেতু এখনও আমি একজন ছাত্র। কাজেই অনেক সময় পরীক্ষার একদিন বাকি থাকলেও ব্যবসায়ী কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। অনেক সময় পরীক্ষার রাতে পড়েও হলে যেতে হতো। বিশেষ করে পরীক্ষার সময় নির্ধারিত ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে পারতাম না।

সিয়াম: নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার কি কি পরামর্শ রয়েছে?

আবু ইউসুফ: স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থকতাটাই আলাদা। তাই বলবো, যা করতে হবে ছাত্রজীবন থেকেই শুরু করতে হবে। হোক না সেটা ক্ষুদ্র পরিসরে। একজন উদ্যোক্তা হতে হলে আপনাকে অবশ্যই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে লেগে থাকতে হবে, প্রতিবন্ধকতাতো থাকবেই, তবে ইচ্ছা থাকলে তা অতিক্রম করা সম্ভব। একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে অবশ্যই ধৈর্য, পরিশ্রম ও আন্তরিক হতে হবে।

সিয়াম: আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

আবু ইউসুফ: বর্তমানে প্রায় ৪২টি জেলায় আমাদের সেবা অব্যাহত রয়েছে। একদিন সারাদেশে আমাদের সেবা পৌঁছাবে ও হালাল শপিং জোন একটা ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড়াবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

ইবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়