বিশ্ব নারী উদ্যোক্তা দিবসে শুভেচ্ছা
আরোশি আঁখি || রাইজিংবিডি.কম
‘নারী মানেই অবলা’ এই ভ্রান্ত চিন্তা বদলে নিন। আজ বিশ্ব নারী উদ্যোক্তা দিবস ২০২০। নারীর জন্ম হয়েছে কেবল রান্না, খেদমত ও বাচ্চা পালনের জন্য নয়, এগুলোর পাশাপাশি আরও অনেক সৃজনশীল কাজের জন্যও তাদের জন্ম হয়েছে।
এখন নারীদের চলার পথ মসৃণ করতে, তারা নিজেদের পরিচয় গড়তে সংসারের পাশাপাশি নিজের সৃজনশীল জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ করতে সফল। যে নারী রাঁধে, সে নারী এখন চুলও বাঁধে। শিক্ষার পাশাপাশি হোক অথবা চাকরির পাশাপাশি নতুবা গৃহিণী থেকে গড়ে উঠছে হাজার হাজার নারী উদ্যোক্তা। তারা এখন তাদের সময়ের মূল্য দিতে প্রস্তুত। তাদের প্রতিভা পৌঁছে দিয়েছে বিশ্ব দরবারে। কল্যাণের এই পথ থেকে রুখবে তাদের কারা?
করোনাকালের এই সংকটময় সময়ে সবচেয়ে বেশি নারী উদ্যোক্তা গড়ে ওঠেছে। তারা তাদের জন্য যখনই একটু সময় পেয়েছে, তখনই তাদের প্রতিভাগুলোকে খুঁজে বের করে তা বাস্তবসম্মত কাজে লাগিয়ে দেশ ও দশের উপকারে আসতে সক্ষম হয়েছে।
প্রতিবছর ১৯ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী উদ্যোক্তা দিবস। বিশ্বের নারী উদ্যোক্তাদের সম্মান জানাতে ও নতুন উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করতে মূলত দিবসটি পালন করা হয়।
২০২০ সাল নারীকে দিয়েছে ভিন্ন পরিচয় গড়ার সুযোগ। কেউ প্রয়োজনে আবার কেউ শখ করেই বেছে নিয়েছে উদ্যোক্তা পেশা। তবে অধিকাংশ নারী তার ভালো লাগার কাজগুলো ভালোবেসে নিজেদের পরিচয় তৈরিতে মেতে উঠেছে। নারী উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে দেশি ঐতিহ্যের প্রকাশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ডুবতে বসা দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহককে নারীরা দিয়েছে ভিন্ন পরিচয়। এই সব উদ্যোক্তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দিতে পারলে কেউ ঝরে যাবে না। দেশ গড়ে উঠবে নতুনরূপে, নতুন পরিচয়ে। তাই এই নারী দিবসে ভিন্ন আঙ্গিকে নারীর চলার পথ মসৃণ করতে নারী-পুরুষ উভয়কেই সমানভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
নারীকে ভোগ্যবস্তু নয় বরং সম্মানিত মানুষ ভাবলে দেশের বর্তমান এই খারাপ অবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এগিয়ে যাক নারী ছড়িয়ে দিয়ে প্রতিভা। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হোক তাদের চলার পথ।
যেখানে পুরো পৃথীবি দেখাচ্ছে ১০০ জনে ২ জন নারী উদ্যোক্তা হওয়ার চিত্র। সেখানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত করছে নতুন সম্ভবনার দ্বার। বাংলাদেশে মোট উদ্যোক্তার মধ্য শতকরা নারী উদ্যোক্তার ৩১.৬১ ভাগ নারী। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে ভিন্নরূপে। একটা সময় উদ্যোক্তা হতে গেলে প্রথমে চিন্তা আসতো মূলধনের৷ এই মূলধন সংকটের কথা চিন্তা করে অনেকেই থেমে যেত।
বর্তমানের উদ্যোক্তারা মূলধনের চেয়ে নিজেদের প্রতিভা ও সে বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি নিজ শিক্ষাকে সামনে রেখে কৌশলেই নিজের স্বতন্ত্র পেশা তৈরি করছে। অনেকেই সফল। মূলত প্রয়োজনের তাগিদে তাদের উদ্যোক্তা হয়ে গড়ে ওঠা। চামড়াশিল্প হোক বা জামদানি শিল্প এসব উদ্যোগে নারীদের জয়জয়কার। এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে নারীবান্ধব নয়। তবুও নারীরা সব বাঁধা বিভেদ ভেঙে একেবারে গ্রাম্য পরিবেশ থেকেও নিজেকে গড়ে তুলছে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে।
একজন নারী সৃষ্টি করছে শত শত নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থান। এমন নজিরও বর্তমানে মিলছে। চামড়াজাত শিল্প হোক বা জুট, জামদানি, শীতল পাটি, বেতের আসবাব, অর্গানিক পণ্য হ্যান্ডিক্রাফ্ট, নকশী কাঁথা, তথ্য প্রযুক্তি, ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর গাইড বা চিকিৎসা এমন কোথাও নেই যেখানে নেই নারী উদ্যোক্তারা। বিভিন্ন জেলার বা অঞ্চলের পণ্য, হোক তা লুঙ্গি অথবা খাবার, সবকিছুই নারীর হাত ধরে পৌঁছে যাচ্ছে দেশসহ দেশের বাইরে। সারাদিন সংসার সামলে নিজের উদ্যোগের কাজ করতে দিন রাত জেগে শ্রম দিয়ে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক নারী উদ্যোক্তা দিবসে সব নারীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এগিয়ে গেলে নারী, এগিয়ে যাবে দেশ।
লেখক: শিক্ষার্থী, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
ইবি/মাহি
আরো পড়ুন