ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দম নিচ্ছে সরকারবিরোধী জোটগুলো, তবে… 

শিহাবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১২, ২২ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৯:১৫, ২২ নভেম্বর ২০২০
দম নিচ্ছে সরকারবিরোধী জোটগুলো, তবে… 

সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোটগুলোর দৃশ‌্যমান কোনো কর্মসূচি নেই এখন। এসব জোটের দলগুলো রাজপথের কর্মসূচি এড়িয়ে চলছে।  বিপরীতে ভার্চুয়াল সভা ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেই নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। রাজনীতি বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব জোট আপাতত দম নিচ্ছে। সময় অনুকূলে এলে এসব জোট রাজপথের কর্মসূচিতে সক্রিয় হবে। এদিকে, ছোট দলগুলো  স্থানীয় সরকার নির্বাচন ছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসকেন্দ্রিক ইস‌্যুতে সভা-সমাবেশ-মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করছে। 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেশ কিছু সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোট গঠিত হয়েছে। জোগুলো হলো—ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বাম গণতান্ত্রিক জোট, সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট, ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স, নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ)।  কিন্তু এসব জোট এখন প্রায় নিষ্ক্রিয়। হাওয়া হয়ে গেছে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স ও বিএনএ।

বেশ তোড়জোড় করে গঠিত হয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।  ওই সময়ে বিএনপি নিজেদের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে কিছুটা গুরুত্ব কম দিয়ে ঐক্যফ্রন্টকেই প্রাধান্য দিয়েছিল।  তবে, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির কাছে ঐক্যফ্রন্টেরও গুরুত্ব কমতে  থাকে।  এই সময়ে তারা নিজেদের ঘর গোছানো, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিশ্চিত করা, বিভিন্ন দিবস পালন, আলোচনা ও প্রতিবাদ সভার মধ‌্যেই দলীয় কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রেখেছে। 

২০ দলীয় জোটের কোনো কার্যক্রম নেই বলে মনে করেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। তিনি বলেন, ‘জোটের কাঠামো প্রায় ভঙ্গুর। ভবিষ্যতের ভালো-মন্দ নিয়ে কিছুই বলতে পারছি না। কারণ আমাদের প্রধান শরিক দল বিএনপির নেতৃত্বে চলে এই জোট। তাই বিএনপি নেতারা যদি জোট সক্রিয় করা নিয়ে কিছু না বলেন, তাহলে আমরাও কিছু বলতে পারবো না। ’  

রাজপথের আন্দোলন-কর্মসূচিতে ২০ দলীয় জোটের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস‌্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘করোনার কারণে আমরা সশরীরে সরাসরি বৈঠকে বসতে পারিনি। কর্মসূচি কিছুটা সীমাবদ্ধ ছিল। তবে, ভার্চুয়াল বৈঠকের মাধ‌্যমে জোটগত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। শিগগিরই আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবো।’

এদিকে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হলেও তার নিজ দল গণফোরামেই দেখা দিয়েছে ভাঙন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর দলের সাবকে সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু ও সাবেক নির্বাহী সভাপতি আবু সাইয়িদ নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। ওই কমিটিতে ড. কামাল হোসেন ও রেজা কিবরিয়াকে বাদ দেন তারা। কার্যত এর মাধ‌্যমে দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এরপর থেকে বিভাজিত দলে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি।  
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট এখন সক্রিয় নেই।’

তবে, নাগরিক ঐক্য নিজ অবস্থান থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। গত ৩১ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক সমাবেশ করেন মাহমুদুর রহমান মান্না। সমাবেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর উপস্থিত ছিলেন।  

অন‌্যদিকে, গত ১০ নভেম্বর একই স্থানে শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে ‘গণতন্ত্র পদযাত্রা’ শীর্ষক কর্মসূচি পালন করেন।
আটটি দল নিয়ে গঠিত সরকারবিরোধী ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’ সম্প্রতি বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছে।  জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাদের সর্বশেষ কর্মসূচি ছিল গত ৫ নভেম্বর।

এই জোট সম্পর্কে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আগামী ২৫ তারিখে জোটের বৈঠক রয়েছে, সেখানে কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া, আগামী ২৭ তারিখে শাহবাগে নারী ও শিশু নিপীড়নের প্রতিবাদে সমাবেশের আয়োজন করা হবে।’

এদিকে, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি নিজ অবস্থান থেকে দেশের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন।  সর্বশেষ গত ২০ নভেম্বর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ করে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি।

নিষ্ক্রিয় অবস্থা থেকে বের হয়ে রাজপথে নামার তাগিদ দিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সবাইকে মাঠে নামতে হবে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।  না হলে দেশটা বিপদের মধ্যে পড়ে যাবে।  যারাই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, জনগণের অধিকারের জন্য লড়াই করতে চায়, সেই লড়াই আমরা একসঙ্গে করার চেষ্টা করছি।’

জাতীয় নির্বাচনের আগে বিকল্পধারা বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর (বি চৌধুরী) নেতৃত্বে গঠিত যুক্তফ্রন্ট যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে, নেই কোথাও। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার কথা বি. চৌধুরী’র নেতৃত্বে।  কিন্তু তারা ১৫০ আসন ও জামায়াত ছাড়ার শর্ত দেয় বিএনপিকে।  ফলে তাদের বাইরে রেখা ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়। পরে বি. চৌধুরীর নেতৃত্বে ১০ দলীয় জোট যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে জোটটি। জাতীয় নির্বাচনের পর এই জোট কোনো কর্মসূচি পালন করেনি।

এদিকে, ১৪ দল নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে মহাজোট। সম্প্রতি এই জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেনন জোটের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গত ২৮ অক্টোবর একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় বিবৃতি, দিবস পালন ছাড়া ১৪ দলের অস্তিত্ব আছে কি, এই  প্রশ্ন কেবল জনগণের নয়, ১৪ দলের নেতাকর্মীদেরও।’

বিএনপির সাবেক নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচনের আগে নয়টি দল নিয়ে গঠিত বিএনএ-ও কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। মাঠের কিংবা ভার্চুয়াল রাজনীতি, কোথাও এই জোটের কোনো কর্মসূচি নেই। 

ঢাকা/শিহাবুল/এনই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়