ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

‘বই পছন্দের বিষয়ে পাঠকের রুচির পরিবর্তন এসেছে’

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৪, ১৯ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৫:২৮, ১৯ ডিসেম্বর ২০২০
‘বই পছন্দের বিষয়ে পাঠকের রুচির পরিবর্তন এসেছে’

খায়রুল আনাম রনি, সিইও, রকমারি ডটকম

মো. খায়রুল আনাম রনি।  প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে রকমারি ডটকমে কাজ করছেন ২০১২ সাল থেকে।  ২০০০ সালে শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন ২০০২ সালে।  এরপর ২০০৭ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ২০১২ পর্যন্ত Arista Enterprise LLC তে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালে শুরু করেন অনলাইন বুকশপ রকমারি ডটকম।  রকমারি দেশের প্রথম অনলাইন বুকশপ। যারা পাঠকের চাহিদামত সব ধরনের বইয়ের অর্ডার নিয়ে, সেসব বই বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে সংগ্রহ করে পাঠকদের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন। বই প্রকাশনা, পাঠক, লেখক, পাঠকের চাহিদা, সরবরাহসহ বই বাজারের বিভিন্ন সমস্যা, সুবিধা, সম্ভাবনা এসব নিয়ে কথা বলেছেন রাইজিংবিডির সঙ্গে।  কথোপকথনে ছিলেন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেসবাহ য়াযাদ।

রাইজিংবিডি: অনলাইনে বই বিক্রির প্রথম প্ল্যাটর্ফম রকমারি।  এর শুরুর গল্পটা বলুন-

খাইরুল আনাম রনি: রকমারি অফিসিয়ালি কার্যক্রম শুরু করে ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি।  অন্যরকম গ্রুপের সোহাগ ভাই, লিটন ভাইয়ের সঙ্গে আমরা ৩ বন্ধু (এহতেশামুল শামস রাকিব, জুবায়ের বিন আমিন এবং আমি) বেশকিছু প্রজেক্ট শুরু করেছিলাম। ক্রিকপল নামে একটা সফল প্রজেক্ট ছিল আমাদের।  আবার ই-কমার্স নিয়ে আমাদের একটা ফেইল প্রজেক্টও ছিল। সেটা থেকে নেওয়া কিছু শিক্ষা, সঙ্গে যোগ হলো সোহাগ ভাই, লিটন ভাই এর অনেক দিনের ব্যাবসায়িক দক্ষতা। এগুলো নিয়ে আমরা ২০১২ সালে একুশে বইমেলা টার্গেট করে বই বেসড ই-কমার্স এর পরিকল্পনা করলাম।

রকমারির শুরুর দিকে পুরো কাজ মাত্র দুই মাসের মধ্যে শেষ হয়।  কারণ ছিল ফেব্রুয়ারির বইমেলা ধরা। আমারা খুবই লাকি, আমাদের সঙ্গে খুব ভালো একটা টিম ছিল।  যে কারণে খুব সুন্দরভাবে শুরু করতে পেরেছিলাম।

রাইজিংবিডি: আপনাদের পথ ধরে অনেকে আসলেও তেমনভাবে সাড়া জাগাতে পারেনি।  এর কারণ কী? 

খাইরুল আনাম রনি:  প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম, ই-কমার্সের জন্য একটা সাইট বানালেই হবে। সব এমনিতেই চলতে থাকবে। কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম, সাইট আসলে পুরো অপারেশনের একটা পার্ট মাত্র। পাঠকের প্রোডাক্ট ব্রাউজ, অর্ডার প্লেস থেকে শুরু করে, তার কাছে বই পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত টেনশন আমাদের মাথায় নিতে হবে। সেভাবেই আমাদের সব কার্যক্রম ডিজাইন করার চেষ্টা করি। ফলে সফলও হই।  আমি মনে করি, কেউ তার ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে, সার্ভিসের মাধ্যমে সর্বোচ্চটা দিলে তার সাফল্য আসবেই।

রাইজিংবিডি: শত শত প্রকাশনা থেকে পাঠকের চাহিদামত বই সংগ্রহ করতে গিয়ে কী কী প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন?

খাইরুল আনাম রনি: নতুন কোনো বই প্রকাশিত হলে- এর ইনফরমেশন প্রকাশনী থেকে আমাদের নিতে হয়। আবার অর্ডার আসার পর প্রকাশনী থেকে কিনতে হয়।  প্রথমদিকে পুরো বিষয়টি নতুন হওয়ার কারণে এখানে অনেক গ্যাপ হতো। নতুন বইয়ের ইনফরমেশন সময় মতো পাওয়া যেত না।  সময় মতো বই কেনা সম্ভব হতো না।  প্রকাশনীর সাপোর্টের কারণে এগুলো এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুব দ্রুত আমরা নতুন বইয়ের তথ্য পাচ্ছি এবং বই কেনার ক্ষেত্রেও অনেক সাপোর্ট পাচ্ছি। শুরুর দিকে না হলেও এখন প্রকাশকরাই আমাদের সাইটে ইনফরমেশন ইনপুট দিচ্ছেন।

তবে এখন সমস্যা হচ্ছে, অনেক প্রকাশনী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায়। এমনকি ঢাকার বাইরেও আছে। প্রতিদিন এসব প্রকাশনী থেকে বই সংগ্রহ করতে আমাদের অনেক সময় ব্যয় হচ্ছে। তবে কেউ কেউ নিজ দায়িত্বে বই পাঠিয়ে দিচ্ছেন আমাদের অফিসে। ফলে দেরি হওয়ার সমস্যাও সমাধানের পথে এগোচ্ছে।

রাইজিংবিডি: ফেব্রুয়ারিজুড়ে বই নিয়ে পাঠকের মধ্যে যে আগ্রহ দেখা যায়, সারা বছর তা থাকে না। এর কারণ কী?

খাইরুল আনাম রনি: ফেব্রুয়ারিকে বইয়ের উৎসব সময় বলা যায়। বইমেলাকে কেন্দ্র করে এই সময়ে বেশি বই প্রকাশিত হয়।  ফলে পাঠকের আগ্রহ বেশি থাকে।  তবে বছরের বাকি সময় পাঠক যে বই কেনে না বা পড়ে না তা কিন্তু নয়।  আমরা পাঠকের পছন্দ অনুযায়ী যদি বইয়ের কথা জানাতে পারি, তাহলে তারা কিনেন এবং পড়েন।  পাঠকও চান সারা বছর যেন বই বের হয়।  এজন্য রকমারি সারা বছর বিভিন্ন ধরনের মেলা, অফার, গিফট এবং সুবিধা দেয়, যেন পাঠক সারা বছর বই কিনতে এবং পড়তে আগ্রহী হয়।

রাইজিংবিডি: অর্ডার করা বই যথা সময়ে সরবরাহ না করার অভিযোগ আছে পাঠকদের- এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য-

খাইরুল আনাম রনি: ই-কমার্সের বড় কয়েকটি সমস্যার একটি দ্রুত সময়ে ডেলিভারি না করতে পারা। আমরা সব সময় চেষ্টা করি, দ্রুততম সময়ে বই পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার। ঢাকার মধ্যে এটা অনেকটা করতে পারলেও, ঢাকার বাইরে কিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জিং। তাই আমরা আমাদের ডেলিভারি মডেল টাইম টু টাইম অনেক চেঞ্জ এনেছি। পোস্ট অফিস তাদের ডেলিভারি চেইন অ্যাকটিভ করেছে। যদিও সময় বেশি লাগছে।  তবে একদম গ্রামে-গঞ্জে বই পাঠানোর ক্ষেত্রে পোস্ট অফিসের এই সার্ভিস প্রশংসার যোগ্য।  সিচুয়েশন আগের থেকে ভালো হয়েছে।  আশা করছি সামনে আরও ভালো হবে।

রাইজিংবিডি: আপনারা ঢাকায় সরবরাহে যতটা আগ্রহী, ঢাকার বাইরে ততটা দেখান না- পাঠকের এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাই-

খাইরুল আনাম রনি: আমরা আগ্রহী না- ব্যাপারটা আসলে এমন না।  রকমারি শুরু থেকেই পুরো দেশে বই সরবরাহ করে আসছে।  আমরা মনে করেছিলাম, ঢাকার একজন পাঠকের জন্য বই সংগ্রহের বেশকিছু উপায় আছে।  যেটা ঢাকার বাইরের পাঠকের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই কম। আগে যেটা বললাম, ঢাকার বাইরে ডেলিভারি করা চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকায় পাঠকের হাত পর্যন্ত বই পৌঁছে দেওয়া অনেক ক্ষেত্রে সময় সাপেক্ষ আর ব্যায়বহূলও। এখন পর্যন্ত আমরা অনেক ধরনের কুরিয়ার সার্ভিস, মডেল ট্রাই করেছি। অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা পেলে আশা করা যায়, ঢাকার বাইরের সার্ভিসও আরও ভালো হবে।

রাইজিংবিডি: অন্য বুকশপের তুলনায় রকমারির অর্ডার প্রসেস জটিল বলে মনে করেন পাঠকরা। এটা আরও সহজ করা যায় কীভাবে?

খাইরুল আনাম রনি: সহজ করার পরিকল্পনা অবশ্যই আছে।  এটা নিয়ে আসলে সব সময়ই কাজ করছি। নিয়মিত পাঠকদের কাছ থেকে অনেক ফিডব্যাক পাচ্ছি।  সেগুলো নিয়ে কাজ করি। অর্ডার প্রসেস নিয়ে কাজ চলছে। এটা শেষ হলে পাঠকদের জন্য প্রসেসটা আরও সহজ হবে বলে আশা করছি।

রাইজিংবিডি: আপনাদের সাইটে বইয়ের যে রেটিং দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, সেটা কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করেন?

খাইরুল আনাম রনি: এই রেটিং আসলে পাঠকরা আমাদের সাইটে দেন। সঙ্গে রিভিউ দেওয়ারও ব্যবস্থা আছে।  এগুলো দেখে অন্যান্য পাঠকরা বই সম্পর্কে আইডিয়া পান। পাঠক বই কেনার আগে, কারা কিনেছেন (ভ্যারিফাইড পারসেস) তাদের রিভিউ রেটিং দেখে বই কেনার ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। পাঠক যে বইতে ভালো রেটিং দেন, পরে সেই ধরনের বই আমরা আমাদের মার্কেটিং চ্যানেলের মাধ্যমে সাজেস্ট করি। আমাদের সাইটে বই দেখানোর ক্ষেত্রেও ভালো রেটিং-রিভিউ বইগুলো প্রথম দিকে দেখানোর চেষ্টা করে থাকি।

রাইজিংবিডি: পাঠক কীসের ওপর ভিত্তি করে বই পছন্দ করে বলে আপনার ধারণা?

খাইরুল আনাম রনি: পাঠক অবশ্যই তার প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে বই পছন্দ করেন। তবে তার প্রয়োজন অনেকগুলো বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে হয়।  রকমারির প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত সেলস রেকর্ড অ্যানালাইসিস করে আমরা দেখেছি, আমাদের পাঠক চয়েসেও অনেক চেঞ্জ আসছে। যেমন, এই করোনা সময়ে স্কিল ডেভেলপমেন্ট, ধর্মীয় বইয়ের চাহিদা বেড়েছে।  প্রোডাক্টিভিটি রিলেটেড বেদেশি নন-ফিকশন বই এবং সে বইয়ের অনুবাদ বইয়ের ভালো একটা পাঠক গ্রুপ হয়েছে।

মেসবাহ/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়