ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মরিচের জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

এনাম আহমেদ, বগুড়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১২:৩৯, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০
মরিচের জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

ধান চাষ করে ক্ষতির মুখ দেখার পর লাভের আশায় মরিচের জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষক।

চার দফা বন্যার কারণে এবার যেমন রোপা আমন ধান চাষ করে ক্ষতির শিকার হয়েছেন কৃষক, তেমনি মাটি ভেজা থাকায় কৃষক আগাম এবং সঠিক সময়ে মরিচ চাষ করতে পারেনি। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের গাছ পরিমিত শক্তি এবং ফলন দেওয়ার সামর্থ্য নিয়ে তর তর করে বেড়ে উঠায় কৃষক লাভের আশায় বুক বেঁধেছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, পুরো জেলার চাষের জমির লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি জমিতে মরিচ চাষ হয় সারিয়াকান্দি উপজেলায়। এই উপজেলার ১২ ইউনিয়নের মধ্যে ৭ ইউনিয়ন চর। জেলায় এবার মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমি। এখন পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ৬ হাজার ৯৬৫ হেক্টর। এই সংখ্যক জমির মধ্যে শুধুমাত্র সারিয়কান্দি উপজেলাতেই মরিচের চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ করা হয়েছে ১৭৩৫ হেক্টর এবং দেশি উফশি জাতের মরিচ চাষ করা হয়েছে ১৯৭০ হেক্টর জমিতে। উপজেলাতে মরিচ চাষের জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ হাজার হেক্টর জমি। চার দফা বন্যার কারণে এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি।

কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তর থেকে আরও জানা গেছে, মরিচ চাষের মৌসুম শুরু হয় মূলত নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে। কৃষকরা জমিতে বীজ বপন করেন ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে কেউ কেউ ভাল দাম পাওয়ার আশায় অক্টোবর থেকেই আগাম জাতের মরিচ চাষ করে থাকেন। এছাড়া, দেরিতে চাষ করলে শীতে কুয়াশার কারণে মরিচের গাছে রোগ বালাই দেখা দেয়। এজন্য আগাম জাতের চাষ করতে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এরমধ্যে আগাম মরিচ চাষিরা ফসল সংগ্রহ করে বিক্রি শুরু করেছেন। তবে মরিচ চাষ করার ৫০ দিন পর থেকে ফুল ও ফল আসতে শুরু করে। এরপর ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যেই ফলন সংগ্রহ করা যায়। শুকনো মরিচ করার জন্য কৃষক জমি থেকে ফসল সংগ্রহ করে চাষ করার ৪ থেকে ৫ মাস পর।

সারিয়াকান্দির চরবাটিয়া গ্রামের কৃষক আহম্মদ আলী জানান, তিনি ৩ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। জমির মাটি ভেজা থাকায় আগাম চাষ করতে পারেননি তিনি। । তিন বিঘা জমিতে দেশি উফমি জাতের মরিচ লাগিয়েছেন তিনি। এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করে ফসল তোলা পর্যন্ত তার খরচ পড়বে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মতো। তিনি জমির মরিচ পাঁকিয়ে শুকনো মরিচ করে বিক্রি করবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে এক বিঘা জমি থেকে তার শুকনো মরিচ সংগ্রহ করা হবে ৮ থেকে ১০ মণ। শুকনো মরিচের মৌসুমে বাজারে ৫-৬ হাজার টাকা প্রতি মণ বিক্রি হয়। সে অনুযায়ী তিনি এক বিঘা জমি থেকে মরিচ বিক্রি করবেন প্রায় ৪৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা। তার লাভ হবে প্রায় দ্বিগুণ।

কাজলা গ্রামের মরিচ চাষি লেমন জানান, মরিচের জমিতে মাসে দুইবার পানি দিতে হয়। এ সময় জমিতে সারও দেওয়া হয়। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে কীটনাশক দিতে হয়। তিনি দুই বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ করেছেন। হাইব্রিড জাতের মরিচ কাঁচা মরিচ হিসেবেই বাজারে বিক্রি করা হয়। এই মরিচ কখনো পাকানো হয় না। হাইব্রিড জাতের মরিচের গাছ থেকে একাধিকবার ফসল সংগ্রহ করা হয়। গাছ কেটে অথবা নষ্ট না হলে গাছে ফলন আসার পর থেকে জুন জুলাই মাস পর্যন্ত ফলন দেয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) শাহাদুজ্জামান জানান,  সা‌রিয়াকা‌ন্দি উপ‌জেলা‌তেই সব‌চে‌য়ে বে‌শি ম‌রিচ চাষ হয়। জেলায় এবার ম‌রি‌চের উৎপাদন লক্ষ‌্যমাত্রা ধরা হ‌য়ে‌ছে ১৬ হাজার ৩৭২ মে‌ট্রিক টন। আশ‌া করা হ‌চ্ছে লক্ষ‌্যমাত্রার চে‌য়ে উৎপাদন বে‌শি হ‌বে। পু‌রো দে‌শের ম‌ধ্যে বগুড়া‌তেই সব‌চে‌য়ে বে‌শি ম‌রি‌চের উৎপাদন হয়। বি‌ভিন্ন মসলা প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানি বগুড়ার ম‌রিচ ক্রয় ক‌রে তা‌দের ব্রান্ডে সারা দে‌শেই বি‌ক্রি ক‌রে।

বগুড়া/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়