ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘ডিকাব বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার’

সাক্ষাৎকার ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৪, ৮ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৮:০৭, ২৪ জানুয়ারি ২০২১
‘ডিকাব বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার’

আঙ্গুর নাহার মন্টিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন রাইজিংবিডির উপদেষ্টা সম্পাদক উদয় হাকিম

আঙ্গুর নাহার মন্টি ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিকাব) সাবেক সভাপতি। কাজ করছেন নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনে। দেড় দশকেরও বেশি সময় কূটনীতিক বিটে কাজ করছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডির  কার্যালয়ে তার এই সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়। এ সময় কথাপ্রসঙ্গে উঠে এসেছে রোহিঙ্গা সমস্যান, প্রবাসী বাংলাদেশি, অভিবাসন সমস্যার মতো বিষয়গুলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইফ বরকতুল্লাহ ও শিহাবুল ইসলাম।

রাইজিংবিডি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।

আঙ্গুর নাহার মন্টি: আমি দীর্ঘ দেড় যুগ এই বিট কাভার করে যেটা দেখেছি, এটা মোস্ট প্রফেশনাল জায়গা। সচিবালয় আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিত্র এক না।  মন্ত্রণালয় যে কাজগুলো করে, বিভিন্ন কূটনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বৈদেশিক কর্মসংস্থান, বিভিন্ন সংবেদনশীল ইস্যু, সংকটগুলো সুরাহার জন্য নেগোসিয়েশন করে। এবং এগুলো কিন্তু রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। দীর্ঘদিনের কাজ। হয়তো ডেস্কের পারসন পরিবর্তন হচ্ছে কিন্তু কাজ চলমান থাকে। এই মন্ত্রণালয়কে অতীত বা বর্তমানে একটা গতিশীল বা প্রবাহমান জায়গায় হিসেবেই দেখি। আর এখন অতীতের চেয়ে আমাদের বৈদেশিক নীতির প্রতিফলন ভালোভাবেই হচ্ছে, মর্যাদা রেখেই হচ্ছে। অনেক সময় দেখা গেছে, আমাদের স্কিল কিছুটা হয়তো কম ছিল, সেখানে আমাদের একটু ছাড় দিতে হয়েছে। কিন্তু এখন আমরা সেই জায়গায় নেই। আমরা জোর গলায় বলছি, আমরা ডেভেলপমেন্ট পার্টনার। ওই জায়গাটা বাংলাদেশ দেখাতে শুরু করেছে।

রাইজিংবিডি: প্রবাসে প্রচুর বাংলাদেশি আছেন। প্রতিনিয়ত তাদের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সেই সমস্যা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো কী পদক্ষেপ নিতে পারে?

আঙ্গুর নাহার মন্টি: প্রবাসীদের সমস্যা সমাধান কিন্তু শুধু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিয়ে হবে না। বিভিন্ন মিশনগুলোতে যে কর্মীরা আছেন- তারা কিন্তু শুধু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের না। বৈদেশিক কর্মসংস্থান আছে, শ্রমবিভাগ আছে, ডিফেন্স আছে। নানান সেক্টর মিলেই কিন্তু দূতাবাসগুলোতে নিয়োগ হয়। এই প্রত্যেকটা জায়গায় ভালো সমন্বয় তৈরি করতে হবে। আমাদের দূতাবাসগুলোতে সবচেয়ে বড় ল্যাকিংস (সংকট) হচ্ছে জনবলের অভাব।  আমাদের কর্মী কি পরিমাণ এবং প্রবাসী কি পরিমাণ, অন্যান্য দেশের দূতাবাসগুলোর সঙ্গে তুলনা করলেই কিন্তু রেশিওটা বের হয়ে আসে।  আমরা সেই পুরোনো জনবল দিয়েই চলছি। কিন্তু আগের চেয়ে প্রবাসীদের সংখ্যা কিন্তু অনেক বেড়েছে। যাদের সেবা দেওয়া সত্যিই কঠিন। আমরা দূর থেকে সমালোচনা করি। কিন্তু আসল জায়গা হচ্ছে আমাদের মিশনগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। জনবল বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে কর্মীদের মধ্যে প্রবাসীবান্ধব মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

রাইজিংবিডি: রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

আঙ্গুর নাহার মন্টি: ভাসানচরে পাঠানো সরকারের একটা ভালো সিদ্ধান্ত। আন্তর্জাতিক বিশ্ব কিন্তু একটা বিষয় দেখছে না- তা হলো কক্সবাজার আমাদের একটা জনপদ, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত। কিন্তু সমস্যার করছে রোহিঙ্গারা। কারণ তারা একটা কনফ্লিক্ট এলাকা থেকে এসেছে।  এদের নিয়ে অনেক কাজ করার আছে। আমাদের মতো উদার মানসিকতার একটি দেশে সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে তারা। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সহিংসতা করছে। আগ্রাসনে লিপ্ত হচ্ছে। অপরাধে জড়াচ্ছে। মাদক আসছে। এজন্য সরকার ভেবেছে- এদের নিরাপদ জায়গায় রাখতে হবে। যাতে আমাদের জনপদও রক্ষা পায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জোর দিচ্ছে তাদের খাইয়ে পড়িয়ে এই দেশেই বাঁচিয়ে রাখা। এটা কোনো সমাধান নয়। তাই রোহিঙ্গাদের বিজনেস হিসেবে না দেখে, দেখতে হবে কত দ্রুত তাদের প্রত্যাবাসন করা যায়, মিয়ানমারকে চাপে রেখে। এক্ষেত্রে ভারত-চীনের সহযোগিতা বেশি দরকার। তা সরকারকেই আদায় করে আনতে হবে।

রাইজিংবিডি: রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশের মিডিয়া ভালো একটা ভূমিকা রেখেছে। সেক্ষেত্রে বিদেশেও আমাদের দূতাবাসগুলোরও কিন্তু একটা দায়িত্ব আছে, ভূমিকা আছে। এক্ষেত্রে তারা কী করতে পারে?

আঙ্গুর নাহার মন্টি: এটা প্রত্যেকেরই দায়িত্ব আছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে লবিং করতে হবে। চাপ সৃষ্টির জায়গা তৈরি করতে হবে, যেন দ্রুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা হয়। জাতিসংঘেও বিষয়টা তুলে ধরতে হবে।  এক্ষেত্রে যে পরিমাণ চাপ সৃষ্টি করার কথা, সেই পরিমাণ সাপোর্ট মনে হয় মিডিয়াও দিতে পারছে না এবং সরকারও করতে পারছে না। প্রত্যাবাসনের বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে চাপ দেওয়ার জায়গাটা আরও জোড়ালো করতে হবে।

রাইজিংবিডি: করোনাভাইরাসের ছুটিতে দেশে আসা প্রথমে সৌদি প্রবাসী ও পরে এখন কাতার প্রবাসীদের ফিরে যাওয়া নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।  কেনো এটা হচ্ছে বলে মনে করেন?

আঙ্গুর নাহার মন্টি: বিষয়গুলো যখন ফরেন মিনিস্ট্রিতে আসে এবং সমস্যাগুলো খুঁজে বের করা হয় তখন হয়তো একটু সময় নেয়। আমার মনে হয় প্রসেসটা বা একটা সিস্টেম দাঁড়ায়নি। যে কারণে এই সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয়। ওদিকে কর্মীদেরও সচেতনতার অভাব। রাতারাতি এটা চেঞ্জ হবে না। এখানে অনেকগুলো বিষয় জড়িত। জনবল একটা বড় জিনিস। এতোগুলো লোককে সেবা দিতে দক্ষ লোক দরকার, তাদের তৈরি করতে হবে। এমন একটা জনগোষ্ঠী নাই যারা মিশনগুলোতে গিয়ে সার্ভ করতে পারবে।

রাইজিংবিডি: আপনি ডিকাবে’র দায়িত্বে অনেক দিন ছিলেন, এই সংগঠনকে অনেক কাছে থেকে দেখেছেন। তো সার্বিক বিষয় নিয়ে আপনার ভাবনা জানতে চাই।

আঙ্গুর নাহার মন্টি: পেশাদারিত্বের জায়গাটা ঠিক রাখার জন্য আমাদের পূর্বসুরিরা ১৯৯৮ সালে ‘ডিকাব’ প্রতিষ্ঠা করেছিল। ‘ডিকাব’ আসলে পেশাদারিত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি, সদস্যদের ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, নেটওয়ার্কিং, বিশ্বের অন্যান্য দেশে যারা কূটনীতিক বিটে কাজ করছে তাদের মধ্যে যোগাযোগের একটা সেতুবন্ধন রচনার জায়গা। ডিক্যাবে কিন্তু সবাই মেম্বার হয় না। ফরেন পলিসি, বোঝাপড়ার জায়গা, এটিকেট এবং অবশ্যই নারীর ক্ষমতায়ন বোঝে, যেহেতু আমরা বিদেশি মিশনগুলো, সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করি; এই জিনিসগুলো বুঝতে হয়। সেভাবেই ডিকাব চলছে। আশাকরি আগামীতে আরও ভালো চলবে। এবারে একটা ইয়ং লিডারশিপ দেখছি, প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি। অন্যান্যবারের চেয়ে এবার খুবই জুনিয়র লিডারশিপ। আমি বিশ্বাস করি, এরা অনেক বেশি ভালো করবে। ওদের ইনোভেটিব আইডিয়া বেশি, আমাদের চেয়ে যোগাযোগ বেশি। টেকনোলোজি ফ্রেন্ডলি। কাজেই আমি মনে করি ডিকাবকে আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করতে নতুন কমিটি ভূমিকা রাখবে।

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়