ক্যানসার হাসপাতাল: দালালের দৌরাত্ম্যে দিশেহারা রোগী
ফারুক মিয়ার বাড়ি বগুড়ার গাবতলীতে। বাবার ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছেন। পরপর তিন দিন ক্যানসার হাসপাতালে (ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অব ক্যানসার অ্যান্ড রিসার্চ হসপিটাল) যান বাবাকে নিয়ে। কিন্তু একদিনও ডাক্তারের সিরিয়াল পাননি।
চতুর্থ দিন আবারও যান হাসপাতালে। এদিন আউটডোরের ডাক্তার তার বাবা সেকান্দার মিয়াকে (৬২ বছর) দেখে কয়েকটি পরীক্ষা করতে বলেন। সেগুলোর একটি টেস্ট জরুরিভাবে করে ডাক্তারকে দেখাতে বলেন। ডাক্তারের দেওয়া সিটি স্ক্যান (হোল অ্যাবডোমেন) টেস্ট করেছেন ফারুক। পরের দিন সেই রিপোর্ট নিয়ে সকাল দশটার দিকে এসেছেন এক ব্যক্তি। রিপোর্টটি ফারুকের হাতে দিয়ে সেই লোক উধাও। লোকটি চলে যাওয়ার পর ফারুকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ওই লোকের কার্ড বের করে দেন। কার্ডে লেখা পরিচয় থেকে জানা যায়, তিনি অন্য একটি প্রাইভেট হাসপাতালের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ।
ফারুক বলেন, ওই লোকের মাধ্যমে সিটি স্ক্যান হোল অ্যাবডোমিন টেস্ট করেছেন ১৫ হাজার টাকায়। যেটা ক্যানসার হাসপাতালে করলে খরচ পড়তো ৪ হাজার টাকা। এর বাইরে ওষুধের দাম আনুমানিক ৩ হাজার। অর্থাৎ মোট খরচ হতো ৭ হাজার টাকা।
ফারুকের মতো অনেকেই দালালদের খপ্পড়ে পড়ে বিভিন্ন টেস্ট করতে দ্বিগুণ টাকা গুণছেন। সারা দেশ থেকে এই হাসপাতালে আসা নিরুপায় রোগীদের দালালরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন টেস্ট করাতে নিয়ে যায় নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে। মাঝে-মধ্যে পুলিশ অভিযান চালালেও দুদিন পর আবার একই অবস্থা।
এ বিষয়ে জানতে ক্যানসার হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক কাজী মুশতাক হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে উনি ব্যস্ততার কারণে উপ-পরিচালক প্রশাসন এবং রোগী ভর্তি কমিটির সভাপতি ডা. এইচ আর সরকারের (উত্তম) কাছে পাঠান। পরে উপ-পরিচালকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নভেম্বরের ৩০ তারিখ এই পদে যোগ দিয়েছি। এখন এরকম কোনো অভিযোগ কেউ করেনি।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন ১২টা থেকে ১টা রোগী ভর্তি কমিটির মিটিং হয়। সেই মিটিংয়ে ঠিক করা হয় সিরিয়াল অনুযায়ী রোগীদের ভর্তির (সিট খালি থাকা সাপেক্ষে) বিষয়। তবে সিরিয়াস রোগীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমরা ভর্তি করি। ভর্তির জন্য কোনো টাকা নেওয়া হয় না। রোগীর স্বজনরা অন্য কাউকে টাকা দিলে সেজন্য আমাদের কোনো দায় নেই।
আউটডোরে রোগী দেখা, সিট এবং ভর্তি বিষয়ে চিফ মেডিক্যাল অফিসার (সিএমও) ডা.এ.টি.এম.কামরুল হাসান বলেন, গাইনি, রেডিয়েশন, সার্জিক্যাল, ইউরোলজি, ইএনটিসহ প্রতিদিন অন্তত ৩০০ রোগী দেখা হয়। ডে-কেয়ারের সিট ১০০ হলেও গড়ে ৩০০ রোগী সেবা নেন। হাসপাতালে মোট বেডের সংখ্যা প্রায় ৩০০। বেড সংখ্যা ৫০০ করার কাজ চলছে।
হাসপাতালে বিভিন্ন শ্রেণির দালালদের দৌরাত্ন্য, হাসপাতালের বাইরে রোগীদের কেমো থেরাপি দেওয়া ও টেস্ট করানো প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ফরিদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দালালদের ঠেকানোর জন্য কয়েকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আবারও তাদের এই বিষয়ে চিঠি দেওয়া হবে।
মেসবাহ/সাইফ
আরো পড়ুন