ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পায়ের একটি প্রাণঘাতী সমস্যা এড়াতে যা করবেন

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫১, ১০ জানুয়ারি ২০২১  
পায়ের একটি প্রাণঘাতী সমস্যা এড়াতে যা করবেন

আপনি হয়তো ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (ডিভিটি) সম্পর্কে শুনেছেন। আপনি হয়তো এটাও জানেন যে, পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়াকে ডিভিটি বলে। পায়ে রক্ত জমাট বাধে বলে আপনার এই ধারণা হতে পারে যে সমস্যাটিতে প্রাণনাশের ঝুঁকি নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পায়ের রক্ত জমাটবদ্ধতা থেকেও মৃত্যু ঘটতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্যমতে, ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস শনাক্তের এক মাসের মধ্যে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ রোগী মারা যায়। তাই ডিভিটির লক্ষণ বা উপসর্গ দেখলে চিকিৎসক দেখাতে দেরি করা উচিত নয়।

সাধারণত সমস্যাটিতে পায়ের শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে ব্যথা হয়, ফুলে যায়, লাল/নীল হয় ও স্পর্শে উষ্ণতা অনুভূত হয়। কেবল পা নয়, শরীরের অন্যান্য স্থানেও ডিভিটি হতে পারে। যেকোনো বয়সে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে, কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিও বেড়ে যায়। চল্লিশের পর প্রতি ১০ বছরে ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়। পায়ে রক্ত জমাট বাঁধার অনেক রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে, যেমন- কিছু ওষুধ, গর্ভাবস্থা, দীর্ঘসময় নড়াচড়া না করে বসে থাকা, সার্জারি বা ট্রমা, ক্যানসার ও অটোইমিউন ডিসঅর্ডার। এখানে পায়ে ডিভিটি প্রতিরোধের উপায় দেয়া হলো।

* ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রক্ত জমাটের ঝুঁকি আছে কিনা জানুন: কোনো ওষুধ সেবনের আগে তা রক্ত জমাটের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে কিনা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি বা ইস্ট্রোজেন/ড্রসপিরেনন রয়েছে এমন ওষুধ রক্ত জমাটের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। আপনার রক্ত জমাটের ঝুঁকি থাকলে নন-হরমোনাল কন্ট্রাসেপশন মেথড (হরমোন ছাড়াই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি) ব্যবহার করতে পারেন, যেমন- বেরিয়ার মেথড বা কপার আইইউডি। আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিসিয়ানস অ্যান্ড গাইনিকোলজিস্টস চিকিৎসকদের হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নিতে আসা নারীদের পিলের পরিবর্তে প্যাচ বা জেল প্রেসক্রাইব করতে পরামর্শ দিয়েছেন, কারণ ত্বকের মাধ্যমে হরমোন সরবরাহ করলে রক্ত জমাটের ঝুঁকি তেমন বাড়ে না। ২০১৬ সালে বিএমজে জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় টেস্টোস্টেরন ট্রিটমেন্টে পুরুষদের পায়ে রক্ত জমাট বেঁধেছে। ২০১৭ সালে বিএমজে জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা মতে, প্রেডনিসোন ও অন্যান্য স্টেরয়েডও পুরুষ-নারীর ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

* ডিভিটির পারিবারিক ইতিহাস আছে কিনা খুঁজুন: ২০১৬ সালে পিএলওএস ওয়ানে প্রকাশিত গবেষণা বলছে, আপনার কোনো নিকটাত্মীয়ের পায়ে রক্ত জমাটের ইতিহাস থাকলে আপনারও ডিভিটির বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে।

* ওজন কমিয়ে শিরার চাপ কমান: ২০১৭ সালে সার্কুলেশন: জিনোমিক অ্যান্ড প্রিসিশন মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, স্থূলতায় ডিভিটির ঝুঁকি দ্বিগুণেরও বেশি বাড়তে পারে। বিশেষ করে নারীর উচ্চতা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি এবং পুরুষের উচ্চতা ছয় ফুটের বেশি হলে। আর্কটিক ইউনিভার্সিটি অব নরওয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ক্লিনিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক সিগ্রিড ব্রিক্কান বলেন, লম্বা মানুষদেরকে শরীরের ওজন যত বাড়বে, পায়ের শিরার ওপর চাপ তত বাড়বে। শিরার ওপর চাপ বাড়লে রক্ত জমাটের ঝুঁকিও বাড়ে। তাই শিরার চাপ কমাতে স্থূল শরীরের ওজন কমানোর চেষ্টা করুন।

* সক্রিয় হোন: হাঁটুন অথবা বসে থাকলে পা নড়াচড়া করুন। এটা ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস প্রতিরোধ করে। লং ফ্লাইটে দীর্ঘসময় নড়াচড়া ছাড়াই বসে থাকার কারণে ডিভিটির ঝুঁকি বেশি। প্রতিঘণ্টায় ওঠে দাঁড়ান এবং পায়ের গোড়ালি ওপর-নিচ করুন অথবা রোটেট করুন। আপনার পায়ে রক্ত জমাটের ঝুঁকি উচ্চ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কম্প্রেশন স্টকিংস পরতে পারেন অথবা রক্ত পাতলাকারী ওষুধ সেবন করতে পারেন, যদি চার ঘণ্টার বেশি সময় বসে থাকতে হয়। এটা আমেরিকার রোগপ্রতিরোধ কেন্দ্রের সাজেশন।

* বেশি করে মাছ খান: জার্নাল অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় যারা প্রতিসপ্তাহে তিনবার বা এর বেশি ফিশ অয়েল ক্যাপসুল ও মাছ খেয়েছেন তাদের ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস ডেভেলপের ঝুঁকি ৪৮ শতাংশ কম ছিল। এ তুলনাটা তাদের সঙ্গে করা হয়েছে যারা তেমন মাছ খেতেন না ও ফিশ অয়েল সাপ্লিমেন্ট সেবন করতেন না। তাই পায়ে প্রাণনাশক রক্ত জমাটবদ্ধতা এড়াতে সপ্তাহে তিনবারের বেশি মাছ খাওয়ার কথা ভাবতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফিশ অয়েল সাপ্লিমেন্টও সেবন করতে পারেন।

* হাসপাতালে চিকিৎসাকালে ডিভিটি প্রতিরোধে সচেতন থাকুন: হাসপাতালের অনেক রোগীরই ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিসের ঝুঁকি রয়েছে। হাসপাতালের সাধারণ রোগীদের মধ্যে এই ঝুঁকি ১০ থেকে ২০ শতাংশ। জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া শিরাকে সাময়িক প্রশস্ত করে, যার ফলে পায়ে রক্ত জমে জমাট বেঁধে যায়। কিন্তু নিতম্বের সার্জারি, হাঁটুর সার্জারি অথবা মেজর ট্রমা হয়েছে এমন রোগীদের মধ্যে ডিভিটির ঝুঁকি বেশ উচ্চ (৪০ থেকে ৮০ শতাংশ), কারণ শিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তপ্রবাহে খুবই ধীরতা চলে আসে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে অবস্থান করতে হলে নিশ্চিত হোন যে চিকিৎসক আপনার ওষুধ ও ডিভিটির ঝুঁকি (যেমন- রক্ত জমাটের পারিবারিক ইতিহাস) সম্পর্কে জানেন। চিকিৎসক আপনাকে কম্প্রেশন স্টকিংস অথবা রক্ত জমাট প্রতিরোধের ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারেন। হাসপাতালেও মাঝেমধ্যে নড়াচড়া করুন। ডিসচার্জের আগে ও পরে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। রক্ত জমাট এড়ানোর ওষুধ খেতে ভুলে গেলে ডিভিটির ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

ঢাকা/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়