ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

স্বামী বিবেকানন্দ’র ১৫৯তম জন্মদিন

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ১২ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১০:৩৪, ১২ জানুয়ারি ২০২১
স্বামী বিবেকানন্দ’র ১৫৯তম জন্মদিন

শ্রোতাদের মতামতের ভিত্তিতে বিবিসির জরীপে শীর্ষ ২০ বাঙালির মধ্যে তিনি ১৭তম।  যার কথাকে বলা হয় ‘আত্মশুদ্ধির মহৌষধ’। স্বামী বিবেকানন্দ’র ১৫৯তম জন্মদিন আজ।

মানুষের আত্মবিশ্বাস জাগাতে তার মুখ থেকে নিঃসৃত বাক্যর তুলনা হয়না।  ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’- এটি বিবেকানন্দের সর্বাধিক উদ্ধৃত একটি উক্তি।

বিবেকানন্দ’র আরো কিছু উক্তি- ‘পৃথিবীর ইতিহাস কয়েকজন আত্মবিশ্বাসী মানুষেরই ইতিহাস। সেই বিশ্বাসই ভিতরের দেবত্ব জাগ্রত করে। তুমি সব কিছু করিতে পার।’

‘মনে করিও না, তোমরা দরিদ্র। অর্থই বল নহে ; সাধুতাই-পবিত্রতাই বল। আপনাতে বিশ্বাস রাখো। প্রবল বিশ্বাসই বড় কাজের জনক।’

‘হে বীরহৃদয় যুবকগণ, তোমরা বিশ্বাস কর যে, তোমরা বড় বড় কাজ করবার জন্য জন্মেছ। ওঠ, জাগো, আর ঘুমিও না; সকল অভাব, সকল দুঃখ ঘুচাবার শক্তি তোমাদের ভিতরেই আছে। এ কথা বিশ্বাস করো, তা হলেই ঐ শক্তি জেগে উঠবে।’

‘নিজের উপর বিশ্বাস-ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস।  ইহাই উন্নতি লাভের একমাত্র উপায়।  তোমার যদি এ দেশীয় পুরাণের তেত্রিশ কোটি দেবতার উপর এবং বৈদেশিকেরা মধ্যে মধ্যে যে সকল দেবতার আমদানি করিয়াছে, তাহাদের সবগুলির উপরই বিশ্বাস থাকে, অথচ যদি তোমার আত্মবিশ্বাস না থাকে, তবে তোমার কখনই মুক্তি হইবে না।’

বিবেকানন্দ ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি কলকাতার সিমলা অঞ্চলের ৩ নং গৌরমোহন মুখার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। নাম রাখা হয় নরেন্দ্রনাথ দত্ত। তার বাবা ছিলেন বিশ্বনাথ দত্ত কলকাতা উচ্চ আদালতের আইনজীবি। বিবেকানন্দরা ছিলেন ৯ ভাই-বোন।

১৮৮১ সালে তিনি যুগাবতার খ্যাত রামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে আসেন এবং ১৮৮৭ সালে সন্ন্যাস গ্রহণের পর স্বামী বিবেকানন্দ নাম ধারণ করেন।

১৮৮৪ সালে বাবা মারা গেলে তার পরিবার তীব্র অর্থকষ্টের মধ্যে পড়ে। তিনি চাকরির অনুসন্ধানে নামেন। এ সময়ে তিনি রামকৃষ্ণ পরমহংসের সান্নিধ্যে আসেন। রামকৃষ্ণ পরমহংসকে গুরু বলে মেনে নেন।

বিবেকানন্দ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে হিন্দুধর্ম তথা ভারতীয় বেদান্ত ও যোগ দর্শনের প্রচারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।

১৮৯৩ সালে শিকাগোতে তার সেই বিখ্যাত ভাষণ যা তিনি শুরু করেছিলেন, ‘সিস্টার অ্যান্ড ব্রাদার্স অফ আমেরিকা....’  বলে। যার পর হাত তালিতে ফেটে পড়েছিল অডিটোরিয়াম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও ইউরোপে তিনি হিন্দু দর্শনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অসংখ্য সাধারণ ও ঘরোয়া বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং ক্লাস নিয়েছিলেন।

বিভিন্ন ধর্মমতগুলির মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক স্থাপন এবং হিন্দুধর্মকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্ম হিসেবে প্রচার করার কৃতিত্ব বিবেকানন্দর।  ভারতে হিন্দু পুনর্জাগরণে তিনি ছিলেন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। সেই সঙ্গে ব্রিটিশ ভারতে তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ধারণাটি প্রবর্তন করেন। বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন।

তার রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য- শিকাগো বক্তৃতা, কর্মযোগ, রাজযোগ, জ্ঞানযোগ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বেদান্ত, ভারতে বিবেকানন্দ, ভাববার কথা, পরিব্রাজক, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, বর্তমান ভারত, বীরবাণী (কবিতা-সংকলন), মদীয় আচার্যদেব ইত্যাদি। বিবেকানন্দ ছিলেন সংগীতজ্ঞ ও গায়ক। তার রচিত দুইটি বিখ্যাত গান হল ‘খন্ডন-ভব-বন্ধন’ (শ্রীরামকৃষ্ণ আরাত্রিক ভজন) ও ‘নাহি সূর্য নাহি জ্যোতি’।

ভারতে বিবেকানন্দকে ‘বীর সন্ন্যাসী’ নামে অভিহিত করা হয় এবং তার জন্মদিনটি ভারতে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালিত হয়।

১৯০২ সালের ৪ জুলাই ভারতের বেলুড় মঠে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

ঢাকা/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়