ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ছুটির দিনে সড়ক দুর্ঘটনা কেন বেশি 

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ১২ জানুয়ারি ২০২১  
ছুটির দিনে সড়ক দুর্ঘটনা কেন বেশি 

সড়ক-মহাসড়কে নামলেই দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার শঙ্কা থাকবেই। এই যেন পথচারী-যানবাহনের যাত্রীদের অমোঘ নিয়তি। এই দুর্ঘটনা থেকে নিষ্কৃতি মিলবে কবে, তাও জানে না কেউ।  এরই মধ‌্যে দেখা দিয়েছে নতুন বিপাক। শুক্রবারসহ যেকোনো ছুটির দিনে অন‌্যান‌্য দিনের চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনা পরিমাণ বেশি। প্রাণহানিও বেশি।  কিন্তু ছুটির দিনে কেন বাড়ছে  দুর্ঘটনা-প্রাণহানি? 

ট্রাফিক পুলিশের সদস‌্যরা বলছেন, ছুটির দিনে সড়ক-মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ‌্যা বাড়ে। আর এসব গাড়ি চালান সাধারণত অদক্ষ ড্রাইভার। এ কারণে এসব দিনে ফাঁকা রাস্তাগুলো ফাঁদে পরিণত হয়।

সাপ্তাহিক বন্ধের দিনসহ অন‌্যান‌্য ছুটির দিনে রাজধানীর বেশিরভাগ সড়ক ফাঁকা থাকে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিগন্যালে জ্যাম থাকলেও তা বেশিক্ষণ থাকে না। তবে, এই ফাঁকা রাস্তায় উচ্চবিত্তের সন্তানরা মোটরগাড়ির শোভাযাত্রা করে। সঠিক ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ না থাকলেও অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামে তারা। এর মধ্যে সবেচেয়ে বেশি চলে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার। তারা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো ছাড়াও  সঠিক লেইন মেনে চলে না। সিগন্যাল বা ক্রসিংও মানে না।  

ফার্মগেটে দায়িত্বালনকারী এক ট্রাফিক সদস‌্য বলেন, ‘ছুটির দিনে অদক্ষ চালকরা প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল নিয়ে দাপড়িয়ে বেড়ান। তাদের কারণেই মূলত দুর্ঘটনা ঘটে। ’

যাত্রাবাড়িতে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক সদস্য বলেন, ‘ফাঁকা রাস্তা গাড়ির বেপরোয়া গতি দেখে আমরাও ভয়ে থাকি। কিন্তু কী করবো? চাকরি তো করতে হয়।’

বেসরকারি একটি হাসপাতালের পরিসংখ্যান বলছে, ঈদ ও অন্যান‌্য ছুটির দিনে সড়ক দুর্ঘটনা বেশি হয়। এর মধ্যে শুক্রবার ও শনিবার দুর্ঘটনার শিকার রোগী বেশি আসে।   

চলতি বছরের (২০২১) ৯  জানুয়ারি প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে  যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৬৮৬ জন নিহত হয়েছেন।  এরমধ‌্যে ছুটির দিনগুলোতে ফাঁকা রাস্তায় যানবাহনের বেপারোয়া গতির কারণে বেশি প্রাণহানি ঘটছে।   

সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘দ্রুতগতিতে গাড়ি চললে অনেক সময় চালক ব্রেক কষতে পারেন না। এই কারণে ফাঁকা রাাস্তাগুলোয় দুর্ঘটনার পরিমাণ বেশি। মহাসড়কে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ নসিমন-করিমন, ভটভটি, ইজিবাইক। মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমাতে হলে এসব বাহন বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।’

এই প্রসঙ্গে শুক্রবার দুপুরে (৮ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘জনগণকে সচেতন করা সঙ্গে আইনও প্রয়োগ করা হচ্ছে। নতুন আইনে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তবে, সবার আগে ড্রাইভারদের মাইন্ড সেট আপ ঠিক করলেই এই দুর্ঘটনা রোধে বিশেষভাবে কাজ করবে।’

সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায়  বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েটের) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘ফাঁকা রাস্তার সঙ্গে আইনের দুর্বল প্রয়োগই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া শীতকালীন ঘন কুয়াশার কারণেও দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।’

জানতে চাইলে মহানগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। এজন‌্য নতুন আইনের কোন ধারায় কত টাকা জরিমানা করা হবে, তা নির্ধারণের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া, ডাটা এন্ট্রির সফটওয়্যারের কাজও চলছে।’ এসব কাজ শেষ করে আইনের পুরোপুরি প্রয়োগ হলে এই ধরনের দুর্ঘটনা কমে আসবে বলেও তিনি মনে করেন।

ঢাকা/মাকসুদ/এনই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়