ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পাঠ‌্যবইয়ে ভুল, দায় নেবে কে

আবু বকর ইয়ামিন  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২১, ১৫ জানুয়ারি ২০২১  
পাঠ‌্যবইয়ে ভুল, দায় নেবে কে

প্রতিবছরই বিনামূল্যের বই বিতরণের পর নানা অসঙ্গতি-ভুল  উঠে আসে। এবারও অসংখ্য ভুল পাওয়া গেছে নতুন বইয়ে। তবে, এভাবে নিয়মিত বইয়ে ভুল তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি নতুন প্রজন্মের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, বছরের পর এভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভুলবার্তা দেওয়ার দায় নেবে কে?

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, ভুলের কারণ খতিয়ে দেখা হবে। লেখকদের সঙ্গে আলাপ করে করণীয় ঠিক করা হবে। তবে শিক্ষাবিদরা বলছেন, নিয়মিত দায়সারা বক্তব্য দিয়ে এসব ভুলের দায় এড়ানো যায় না। এই বিষয়ে শক্ত আইনি কাঠামো থাকা দরকার। তাহলে লেখক, প্রকাশক থেকে শুরু কর সবাই সতর্ক হবে। 

জানা গেছে, ২০২১ সালের পাঠ্যভুক্ত পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ে ‘অবাক জলপান’ অধ্যায়ে লেখক পরিচিতিতে বলা হয়েছে সুকুমার রায় ১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। অন্যদিকে নবম-দশম শ্রেণির ‘ছায়াবাজি’ অধ্যায়ে এই লেখকের পরিচিতিতে বলা হয়েছে, সুকুমার রায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১৯২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। এনসিটিবির একই লেখকের দুই লেখায় দুই তথ‌্যের কারণে বিভ্রান্ত শিক্ষার্থীর পাশাপাশি শিক্ষকরাও।

নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত‌্য বইয়ের ‘পোস্টার’ অধ্যায়ে লেখকের পরিচয়ে বলা হয়েছে, আবুল হোসেন খুলনা জেলার ফকিরহাট থানায় জন্মগ্রহণ করেন। কার্যত, ফকিরহাট থানা বর্তমানে বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত। ফকিরহাট একসময় খুলনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই হিসেবে লেখার ক্ষেত্রে ‘তৎকালীন’ শব্দটি ব্যবহার করা উচিত ছিল। বইটিতে তা উল্লেখ করা হয়নি।

অষ্টম শ্রেণির সাহিত্য কণিকা বইয়ের ২৭ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘বিব্রত’ শব্দের অর্থ হিসেবে লেখা হয়েছে ‘ব্যাকুল’, ‘ব্যতিব্যস্ত’। 

বাংলাদেশের সংবিধানে এই পর্যন্ত ১৭টি সংশোধনী আনা হলেও নবম-দশম শ্রেণির ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা’ বইয়ের সংবিধান অধ্যায়ে ৫১ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ‘১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের পর থেকে এই পর্যন্ত মোট ১৬ বার সংশোধন করা হয়েছে।’

বইয়ের ৫৭ নম্বর পৃষ্ঠায় রাষ্ট্রপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি পর পর দুই মেয়াদ অর্থাৎ একটানা ১০ বছরের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারেন না।’ অথচ সংবিধানের ৫০ (২) অনুযায়ী ‘একাধিক্রমে হউক বা না হউক, দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকিবেন না।’

দেশে মোট ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলেও এই বইয়ের ৭৫ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘দেশে ১০ বার জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে।’

‘গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন’ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ‘একটি দল নির্বাচিত হয়ে সঠিকভাবে জনগণের জন্য কাজ না করলে পরবর্তী নির্বাচনে জনগণ সাধারণত সেই দলকে আর নির্বাচিত করে না। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশের এটি যেমন সত্য, তেমনি অনুন্নত দেশের ক্ষেত্রেও সত্য। তেমনি, বাংলাদেশে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের পরিবর্তে বিএনপিকে এবং ২০০৮ সালে বিএনপির পরিবর্তে আওয়ামী লীগকে এই দেশের জনগণ ক্ষমতায় বসায়’।

শিক্ষাবিদরা মনে করেন, ‘এটি গবেষণাধর্মী বিষয়। যেটি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কোর্স শিডিউলের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। তবে কিশোর-কিশোরীর মাঝে এখনই এই জাতীয় বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়া বিব্রতকর ও অনুচিত বিষয়। 

সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হলেও নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ের ১৮৮ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ‘সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।’

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘একটা দুর্ঘটনা যেমন সারা জীবনের কান্না, তেমনি পাঠ্যপুস্তকের একটি ভুলও একজন শিক্ষার্থী, একটি প্রজন্মের জন্য বড় আকারের ক্ষতি। এই বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকে যেন ভুল ম্যাসেজ না যায়, সেটি দেখার জন্য অবশ্যই একটি শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার। যেন একই ভুল দ্বিতীয়বার না হয়। যেকোনো ভুলের বিষয়েও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা যায়।’

শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাকপ ড. একরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘যেকোনো বই লেখার আগে-পরে একাধিকবার লেখাটি বা সংযোজন নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এরপর সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে ভুল থেকে নতুন প্রজন্ম ভুল শিখবে। যেটা সবার জন্যই ক্ষতিকর হবে।’ 

কেন এসব ভুল নিয়মিত হচ্ছে, জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘কিছু ভুল হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। মূলত এসব বই ২০১৩ সালে লিখিত। ভুল সংশোধনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসবো।’ প্রয়োজনে লেখকদের কাছ থেকে কারণ জানতে চাওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

ইয়ামিন/এনই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়