ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিদায়বেলাতেও ট্রাম্পের রেকর্ড

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১৮, ১৭ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ২১:২২, ১৭ জানুয়ারি ২০২১

হোয়াইট হাউজে প্রবেশের পর গত চার বছরে নতুন নতুন রেকর্ড করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিদায়ের আগ মুহূর্তেও তিনি এমন রেকর্ড করেছেন, যা তার আগে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টই করতে পারেননি। আমাদের এবারের আয়োজন ট্রাম্পের সেইসব কর্মকাণ্ড নিয়ে।

২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউজে শপথ নিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরের দিনই তিনি টুইটারে দাবি করলেন, অভিষেক অনুষ্ঠান ছিল লোকে লোকারণ্য। অতিথির সংখ্যা ছিল ১০ লাখ, না..না,  আরও বেশি ১৫ লাখ। তবে অনুষ্ঠানের ছবি বিশ্লেষন করে পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, ৫ লাখের মতো মানুষ অনুষ্ঠানে হয়তো উপস্থিত ছিলেন।

বুঝতেই পারছেন, ট্রাম্পের শুরুটাই মিথ্যা দিয়ে। ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত এক হাজার ২৬৭ দিনে ট্রাম্প ২০ হাজার ৫৫টি মিথ্যা কথা বলেছেন বা ভুয়া দাবি করেছেন। অর্থাৎ দৈনিক গড়ে তিনি প্রায় ১৬টি মিথ্যা বলেছেন। এমন ডাহা মিথ্যুক প্রেসিডেন্ট গত ২০০ বছরেও আমেরিকা পায়নি।

ট্রাম্প হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম টুইটবাজ প্রেসিডেন্ট। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ৫৯ হাজার ৫৫৩ টি টুইট ও রিটিউট করেছেন। এর মধ্যে ২২ হাজার ২৪৭টি টুইটই ছিল মিথ্যা দাবিতে পূর্ণ! ক্ষমতা থেকে বিদায়ের আগে সেই টুইটারই প্রথম ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। মার্কিন ইতিহাসে প্রেসিডেন্টের টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধের এটাও রেকর্ড।

মার্কিন প্রেসিডেন্টদের নারী কেলেঙ্কারি নতুন কিছু নয়। জর্জ ওয়াশিংটন থেকে শুরু করে বিল ক্লিনটন পর্যন্ত সবাই এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন। তারা অবশ্য এক্ষেত্রে সামাজিক মর্যাদার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতেন। তবে ট্রাম্প তাদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। গৃহকর্মী থেকে শুরু করে পর্নো সিনেমার অভিনেত্রী কাউকেই তিনি বাদ দেননি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছিলেন ২৬ নারী!

চার বছরে ট্রাম্প কয়টি হুমকি-ধমকি দিয়েছেন? উহু...সঠিক সংখ্যা বলা মুশকিল। তবে হুমকি দেওয়ার পর তিনি যে দ্রুত সুরও বদল করতে পারেন তার কয়েকটি নমুনা দেখা যাক। উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতাকে উনের সঙ্গে কম হম্বিতম্বি করেননি ট্রাম্প। তবে বছর না ঘুরতেই ট্রাম্প বললেন, ‘আমি ও উন প্রেমে পড়েছি।’ করোনাকালে বন্ধু মোদিকে হুমকি দিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, ওষুধ সরবরাহ না করলে ভারতকে ফল ভুগতে হবে। দুদিন পরেই মোদির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন তিনি। বোঝাই যাচ্ছে, সুর বদলানো ট্রাম্পের কাছে জলবততরং।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রাম্পই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি নিজের দেশের জনগণকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস যখন থাবা বসিয়ে যাচ্ছে তখনও ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা করোনাভাইরাসকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রেখেছি।’ কখনো বলেছেন ‘এটা এমনিতেই অদৃশ্য হয়ে যাবে।’ আবার  কখনও জীবাণুনাশক দিয়ে ফুসফুস পরিষ্কার করা যায় কিনা সেই পরামর্শ দিয়েছেন। তার খামখেয়ালিপনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় চার লাখ মানুষ করোনায় মারা গেছে।

নির্বাচন নিয়েও মার্কিনিদের কম পেরেশানিতে রাখেননি ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগ করেছেন। তবে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি এই বান্দা। এরপরও একের পর এক মামলা করেছেন। অবশ্য সবকটিতেই হেরেছেন তিনি। এরপরও সেই মিথ্যা দাবি থেকে সরে আসেননি। তার উস্কানিতেই কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এটিও দেশটির ইতিহাসে প্রথম।

ট্রাম্পের শেষ রেকর্ড হচ্ছে অভিশংসন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি দুবার অভিশংসিত হলেন। চার বছর আগে তর্জন-গর্জন করে হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করা ট্রাম্পকে এখন মাথা নিচু করেই ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়