ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সিপিবির সমাবেশে হামলা: ২০ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক মামলার বিচার

মামুন খান  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৮, ২০ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৩:৩৮, ২০ জানুয়ারি ২০২১
সিপিবির সমাবেশে হামলা: ২০ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক মামলার বিচার

২০ বছর আগে রাজধানীর পল্টনে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা হয়। ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়েছে। কিন্তু বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার ২০ বছরেও শেষ হয়নি। মূলত সাক্ষী হাজির না হওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। মামলাটির বিচার কবে শেষ হবে বলতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। 

২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে দুর্বৃত্তরা বোমা হামলা করে। হামলায় ৫ জন নিহত এবং ২০ জন আহত হন। ওই ঘটনার ১৯ বছর পর হত্যা মামলার রায়ে ১০ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম। তবে বিস্ফোরক আইনের মামলাটির বিচারে অগ্রগতি নেই। সর্বশেষ গত ১৩ ডিসেম্বর মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিনও কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। এজন্য বিচারক রবিউল আলম আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘একটি মামলার বিচার শেষ হয়েছে। আরেকটি মামলা আটকে আছে। আমরা চাই, মামলাটি সচল হোক এবং দ্রুত বিচার শেষ হোক। আর ঘটনার সঙ্গে জাতীয়ভাবে, আন্তর্জাতিকভাবে কেউ জড়িত থাকলে তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হোক। এটা শুধু সিপিরি স্বার্থের জন্য নয়। গণতান্ত্রিক দেশের জন্য এটা জরুরি।। বামপন্থীদের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে এ দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান। তারা তো শুধু সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা চালায়নি। প্রথমে যশোরে উদীচীর জাতীয় সম্মেলনে, এরপর রাজধানীর পল্টনে আমাদের (সিপিবি) সমাবেশে, এরপর রমনা বটমূলে বর্ষবরণে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে, পরবর্তী সময়ে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশেও গ্রেনেড হামলা হয়। আর এরপর থেকে জঙ্গি হামলা।  অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা না হলে তারা যেকোনো সময় আবার হামলা চালাতে পারে।’

সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সালাহউদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘দুটি মামলার মধ্যে প্রধান যে মামলা অর্থাৎ হত্যা মামলাটির বিচার শেষ হয়েছে। বিস্ফোরক মামলাটিও শেষ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু সাক্ষীরা আদালতে হাজির হন না। বারবার সমন দেওয়ার পরও তারা হাজির হন না। মামলাটিতে আইনজীবীরাও সাক্ষী আছেন। তারাও সাক্ষ‌্য দিতে আসেন না। সাক্ষীরা আদারতে হাজির হলে এতদিন মামলাটির বিচার শেষ হয়ে যেত। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টায় আছি, যত দ্রুত সম্ভব মামলাটির বিচার শেষ করা যায়।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘পুলিশ আর রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় সময়মতো আদালতে সাক্ষী হাজির করতে পারছে না। আর তাদের ব্যর্থতার কারণেই মামলার বিচার কাজে বিলম্ব হচ্ছে। বিনাবিচারে আসামিরা কারাগারে আছে, যা কষ্টকর ও দুঃখজনক। রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারলে এতদিন মামলাটির বিচার শেষ হয়ে যেত। বিচারে সাজা হলে আসামিরা কারাগারে থাকতেন। না হলে তারা কারাগার থেকে বের হয়ে যেতেন। আশা করছি, রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’

মামলা সূত্র্রে জানা গেছে, মামলাতে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর ছলিম উল্যাসহ দুজন সাক্ষ্য দেন। এরপর আর কোনো সাক্ষ্য হয়নি। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে মামলার কিছুটা গতি ফিরেছিল। এরপর প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে সাক্ষী হাজির না হওয়ায় মামলার বিচারকাজ এগোয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি সিপিবির সমাবেশে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায়  ৫ জন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়। ওই ঘটনায় সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে আসামিদের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি মর্মে তদন্ত শেষে  আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

এরপর ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ও ২০০৫ সালের আগস্টে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা হয়। এসব ঘটনায় জঙ্গিরা জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়ার পর ২০০৫ সালে মামলাটি আবার পুনঃতদন্তের আদেশ দেওয়া হয়। মামলাটি পুনঃতদন্তের পর ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্ব আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর মৃনাল কান্তি সাহা । এর পরের বছর ২১ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত।

গত বছরের ২০ জানুয়ারি হত্যা মামলার রায়ে মুফতি মাঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ,  জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান ও নুর ইসলামকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় রফিকুল ইসলাম মিরাজ ও মশিউর রহমানকে খালাস দেওয়া হয়। হত্যা মামলাটি মামলাটি উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্স শুনানির অপেক্ষায় আছে।

আর বিস্ফোরক মামলাটিতে এখন পর্যন্ত ১০৬ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৩০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন, মুফতি আব্দুল হান্নান, মুফতি মাঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মো. মশিউর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিরাজ ও নুর ইসলাম।

আসামিদের মধ্যে জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের অন্য একটি মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আসামিদের মধ্যে শওকত ওসমান, হান্নান সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ও মাইনউদ্দিন কারাগারে আছেন। অপর ৮ আসামি পলাতক রয়েছেন।

ঢাকা/মামুন খান/ইভা 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়