ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চলে গেলেন দেশের ক্রিকেটের শুরুর সেনানী

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৩, ২০ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৬:১৬, ২০ জানুয়ারি ২০২১
চলে গেলেন দেশের ক্রিকেটের শুরুর সেনানী

রাইসউদ্দিন আহমেদ

বাংলাদেশ ক্রিকেট আজ যে অবস্থানে আছে তা কিছু সংগঠকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। যারা বুক ভরা সাহস নিয়ে শুধু ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে রাতদিন পরিশ্রম করে গেছেন। সেই সেনাদের একজন রাইসউদ্দিন আহমেদ। যার কুটনীতির কারণে এমসিসি ক্রিকেট দল ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সফর করে। পরবর্তীতে তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আইসিসি বাংলাদেশকে সহযোগী দেশ হিসেবে স্ট্যাটাস দেয়। সেই শুরু, এরপর বাংলাদেশ ক্রিকেট ধীরে ধীরে পায় টেস্ট স্ট্যাটাস।

দেশের ক্রিকেটের শুরুর দিনগুলোর অন্যতম বাতিঘর, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাইসউদ্দিন আহমেদ বুধবার সকালে ইন্তেকাল করেন। বুধবার ভোরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

বাংলাদেশ ক্রিকেট সংস্কৃতি অনেক পুরোনো হলে অবকাঠামো সুযোগ সুবিধা ছিল না। রাইসউদ্দিন ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব নেওয়ার পর সবকিছুতে আনেন পরিবর্তন। তিনি যখন দায়িত্ব নেন তখন বোর্ডের কোষাগার ছিল শূন্য। তখন বিদুৎ বিল দেওয়ার খরচ না পাওয়ায় মোমবাতি জ্বালিয়ে অফিস করতেন রাইসউদ্দিনরা। বাংলাদেশ বিমানে চাকরির সুবাদে মাসে দুইবার লন্ডন যেতেন রাইসউদ্দিন। তখন তিনি ছিলেন বাংলাদেশ বিমানের চিফ অব অ্যাডমিন। সেই সুবাদে এমসিসি দলকে বাংলাদেশকে খেলার আমন্ত্রণ জানান তিনি।

পরবর্তীতে তার ও বিমানের মার্কেটিংয়ের প্রধান রশিদ আহমেদের পরিকল্পনায় বিমান বাংলাদেশ এমসিসি দলের ঢাকা-লন্ডন-ঢাকা টিকিটের টাকা স্পন্সর করে। এমসিসি দল বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রত্যেকটি ম্যাচ জিতলেও তারা বাংলাদেশকে নিয়ে ভালো প্রতিবেদন দেয়। তাতে বাংলাদেশের আইসিসির সহযোগী দেশ হিসেবে স্ট্যাটাস পাওয়া সহজ হয়ে যায়।

ছয় বছর সফলতার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন শেষে ক্রিকেট বোর্ড ছাড়েন রাইসউদ্দিন। ১৯৯১ সালে ক্রিকেট বোর্ডে আবার যুক্ত হন তিনি। এবার সহসভাপতি পদে। সহসভাপতি হওয়ার পর সার্ক ক্রিকেট নামে একটি টুর্নামেন্ট চালু করেন। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দল নিয়ে এ টুর্নামেন্ট চালু করেন। ২০০০ সালে বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেক আয়োজনে বেশ সফলতা দেখিয়েছেন তিনি। ২০০১ সালে দায়িত্ব ছাড়ার পর আর কোনো পদে ক্রিকেট বোর্ডে যুক্ত হননি।

খেলাধুলাতেও রাইসউদ্দিন ছিলেন অসাধারণ। ফুটবল, ক্রিকেট, সফটবল, বাস্কেটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন- সব খেলেছেন। নটরডেম কলেজ থেকে ইন্টার কলেজ স্পোর্টসে হাই জাম্প, লং জাম্প, ১০০ ও ২০০ মিটারে ফার্স্ট হয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন। পাকিস্তানের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেন কায়েদ-ই-আজম ট্রফিতে। এছাড়া ফুটবলে প্রথম বিভাগ খেলেছেন ওয়ান্ডারার্সে। বাস্কেটবলে ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান দলের অধিনায়ক, পরে কোচও ছিলেন। আবার পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড আন্তর্জাতিক ম্যাচে একবার ধারাভাষ্যও দিয়েছিলেন।

সংগঠক হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয় কলেজ জীবন থেকে। পূর্ব পাকিস্তান স্পোর্টস ফেডারেশনের কাউন্সিলর হন নটর ডেম কলেজে পড়ার সময় ১৯৫৫ সালে। পরে পূর্ব পাকিস্তান স্পোর্টস ফেডারেশনের সেক্রেটারি হন ১৯৬৫ সালে। পাকিস্তান বাস্কেটবল ফেডারেশনে সহসভাপতি ছিলেন।  তার পরিকল্পনাতেই ঢাকার বাইরে ক্রিকেট ছড়িয়ে যায়। সে কারণে এমসিসি, শ্রীলঙ্কা, হায়দরাবাদ ব্লুজ, পশ্চিমবঙ্গ- এসব দলকে এনে যশোর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, চট্টগ্রামের মতো নানা জায়গায় ম্যাচ আয়োজন করেন। ঢাকা লিগে বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে আসার পরিকল্পনার ছিল তারই। চালু করেন স্কুল ক্রিকেট।

উন্নয়নশীল দেশে ক্রিকেট উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য ১৯৮২ সালে এমসিসি থেকে সম্মানসূচক আজীবন সদস্য হন রাইসউদ্দিন। এ ছাড়া বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার’ পেয়েছেন। বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন থেকে সেরা সংগঠকের পুরস্কার দেওয়া হয়। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট যখন খুব ভুগছিল তখন রাইসউদ্দিন আহমেদ হাল ধরেছিলেন। স্বার্থ ছাড়া তার মতো সংগঠক ক্রিকেটে পরিশ্রম করেছেন বলে ক্রিকেট আজ এ পর্যায়ে। ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে তার রুহের আত্মার মাগফিরাত ও তার পরিবারের প্রতি গভীর সমাবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করছি।’

কাকরাইলের সার্কিট হাউস মসজিদে বাদ আছর তার জানাজা হবে। বনানীতে চিরশায়িত হবেন তিনি।

ঢাকা/ইয়াসিন/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়