ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মিরপুরের সবুজ গালিচায় দারুণ একদিন

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫৬, ২০ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৯:১৯, ২০ জানুয়ারি ২০২১
মিরপুরের সবুজ গালিচায় দারুণ একদিন

তামিম-সাকিবের জুটি লম্বা না হলেও দলের জয়ে তাদের দারুণ অবদান

মুশফিকুর রহিমের সেই চিরাচরিত রিভার্স সুইপ। ফ্রি হিট ছিলে বলেই তিনি বেশ নির্ভয়ে শটটা খেলতে পারলেন। কোনও বিপদ অবশ্য হয়নি। পয়েন্ট ও গালির মাঝ দিয়ে বল গেল সীমানায়। জয়ের জন্য ২ রান দরকার ছিল। মুশফিকের ব্যাট থেকে হলো বাউন্ডারি। ডাগ আউটে ওই শটের আগেই ফিস্টবাম্প শুরু হয়ে গিয়েছিল। খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ, সাপোর্টিং স্টাফ; সবার মাঝেই আনন্দ। ৩১৩ দিন পর লাল-সবুজের জার্সিতে মাঠে নেমে স্বস্তি এনে দেওয়া জয়। খানিকটা আনন্দ তো হতেই পারে! সেটা যে প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই হোক না কেন।

প্রতিপক্ষ যখন আনকোরা, তখন সেরা পারফরম্যান্স বের করতেই হয়। জিততে হয় দাপটের সঙ্গে। পার্থক্য গড়ে দিতে হয়। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন পর মাঠে নেমে প্রমাণ করলো সীমিত পরিসরের ক্রিকেটের সামর্থ্যে মরিচা ধরেনি। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সময়-অসময়ে দুই-একবার নাড়িয়ে দিলেও মনোবলে চিড় ধরাতে পারেনি। পারেনি অভাবনীয় লড়াই করতে। প্রথম ওয়ানডে বাংলাদেশ জিতেছে অনায়াসে ৬ উইকেটে।

গুমট আবহাওয়ায় বাংলাদেশের আমন্ত্রণে ব্যাটিংয়ে নেমে ১২২ রানে অলআউট অতিথিরা। ৯৭ বল আগে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ। দলের সেরা সেনানী সাকিব আল হাসান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে দেখিয়েছেন কারিশমা। বোলিংয়ে ৭.২ ওভারে ২ মেডেনে ৮ রানে ৪ উইকেট। ব্যাটিংয়ে ৪৩ বলে ১৯ রান। তাতে তার ২২তম ম্যাচসেরার পুরস্কার পাওয়া আটকাতে পারেনি কেউ।

অধিনায়ক তামিম ইকবালের জন্য জয়টা বেশ স্বস্তির। জয় দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে অধিনায়কত্বের যাত্রা শুরু করলেন দেশসেরা ওপেনার। পাশাপাশি এ জয়ে বাংলাদেশের ওয়ানডে সুপার লিগে শুভ সূচনা হলো। পাক্কা ১০ পয়েন্ট পেলো বাংলাদেশ।

বোলাররা শুরুতেই ম্যাচটা বাংলাদেশের হাতের মুঠোয় এনে দেন। মোস্তাফিজুর রহমান শুরুর জোড়া আঘাতে সুনীল অ্যামব্রিস ও জশুয়া ডা সিলভা সাজঘরে। এরপর সাকিব বোলিংয়ে এসে দ্বিতীয় ওভারে নেন আন্দ্রে ম্যাকক্যার্থির উইকেট। সফরকারীদের অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদকে ফ্লাইটে বিট করে স্টাম্পড করানোর পর এনক্রুমা বোনারকে এলবিডাব্লিউ করেন বাঁহাতি স্পিনার। প্রথম স্পেলে তার বোলিং ৭-২-৮-৩। অবিশ্বাস্য, অসাধারণ। আর পরের স্পেলে সাকিব দুই বল করে পেয়ে যান আরেকটি উইকেট।

অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ দ্যুতি ছড়িয়েছেন প্রথম সুযোগে। ষষ্ঠ উইকেটে রোভম্যান পাওয়েল ও কাইল মায়ার্স যখন ৫৯ রানের জুটি গড়ে চোখ রাঙানি দিচ্ছিলেন, তখন বোলিংয়ে এসে দলকে সাফল্য দেন ডানহাতি পেসার। পাওয়েলকে দারুণ লেন্থে বল ফেলে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করান। পরের বলেই নেন রেমন রেইফারের উইকেট। এক ওভার পর তার শিকার আকিল হোসেন। বোলিংয়ে উদ্দীপ্ত পারফরম্যান্সে বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রানে অলআউট ক্যারিবিয়ানরা। এর আগে ৬১ রানে তারা অলআউট হয়েছিল চট্টগ্রামে ২০১১ সালে। 

আবহওয়ার কারণে ২২ গজে ব্যাটিং করা ছিল কষ্টসাধ্য। প্রথম দুই ওভারে তামিম ও লিটন দাশকে বেশ ভালো ভুগিয়েছেন আলজারি জোসেফ ও  শেমার হোল্ডার। তবে থিতু হওয়ার পর দুজনই ছিলেন সাবলীল। আবার স্পিনার আকিল আক্রমণে আসার পর রানের গতি থেমে গিয়েছিল। বাঁহাতি অফ স্পিনারের হাত ধরেই আসে প্রথম সাফল্য। টার্ন ও বাউন্সে বোকা বানিয়ে ১৪ রান করা লিটনকে বোল্ড করেন আকিল। সাকিবের প্রিয় পজিশনে ব্যাটিংয়ে আসা নাজমুল হোসেন শান্ত ৯ বলে ১ রান করে তার দ্বিতীয় শিকার হন। তার ঘূর্ণিতে আলগা শট খেলে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দেন।

তামিম ও সাকিব ভালো ব্যাটিং করে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন। কিন্তু দুজনই ভুল শটে নিজেদের উইকেট বিসর্জন দেন। হাফ সেঞ্চুরি থেকে ৬ রান দূরে থাকতে তামিম স্টাম্পড হন জেসন মোহাম্মদের বলে। আকিলের বল সরে মারতে গিয়ে বোল্ড হন সাকিব। জয়ের বাকি কাজটুকু সারেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। মুশফিক ১৯ ও মাহমুদউল্লাহ ৯ রানে অপরাজিত থাকেন।

লো স্কোরিং ম্যাচে খুব বেশি প্রতিরোধ গড়তে পারেনি সফরকারীরা। তবে নিজেদের ছোট-বড় সাফল্য উদযাপন করে তারা বুঝিয়েছে, ম্যাচটা উপভোগ করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। মাঠে নামার আগে রঙিন বেলুন উড়িয়েছে বিসিবি। সেই সঙ্গে দুই দল বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে হাঁটু গেড়ে বসেছে। এরপর দীর্ঘ সময় পর মাঠে ফিরে বাংলাদেশ সহজ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে হেসেখেলে জিতেছে। মিরপুরের সবুজ ক্যানভাসে দারুণ একটি দিন কাটালো টিম বাংলাদেশ।

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়