ডারউইনের ‘জঘন্য রহস্য’ গোপনের কারণ জানা গেলো
বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম
আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে বিবর্তনের তত্ত্ব প্রবর্তন করে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন। এই একটি তত্ত্বই তাকে জীববিজ্ঞানের শাখায় সুপ্রতিষ্ঠিত করে তুলেছে। এ কারণে ডারউইনের নাম শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
তিনি প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিবর্তনবাদের ধারণা দিয়েছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম অনুধাবন করেন যে, সকল প্রকার প্রজাতিই কিছু সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছে এবং তার এ পর্যবেক্ষণটি সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন। তার এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় প্রাকৃতিক নির্বাচন, যার মাধ্যমে একটি প্রাণীর জনগোষ্ঠী থেকে নতুন প্রজাতির উদয় ঘটে। এই তত্ত্ব বিজ্ঞানের জগতে বৈপ্লবিক তত্ত্ব হিসেবে পরিচিত।
কিন্তু নিজের এই তত্ত্ব নিয়ে শেষ বয়সে নিজেই সংশয়ে ছিলেন ডারউইন। তাকে চিন্তায় রেখেছিল গাছের বিবর্তনের এক সমাধান না হওয়া রহস্য। ঘনিষ্ঠদের চিঠি লেখার সময় সেই সমস্যাকে ‘অ্যাবমিনেবল মিস্ট্রি’ বা ‘জঘন্য রহস্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। যদিও সেই ঘটনা প্রকাশ্যে আনতে চাননি তিনি। কিন্তু কেন বিষয়টি বিজ্ঞানীমহলের থেকে গোপন করতে চেয়েছিলেন স্বয়ং ডারউইন? এবার উত্তর মিলল সেই প্রশ্নের।
জবা, গাঁদা কিংবা রজনীগন্ধা থেকে শুরু করে ওক, ফার এমনকি ওয়াটার লিলির মতো গাছও বংশবৃদ্ধি করে মূলত ফুলের ওপর নির্ভর করেই। যাদের বলা হয় অ্যাঞ্জিওস্পার্ম। জীবাশ্মের হিসাবে দেখতে গেলে ১০ কোটি বছর আগে ক্রেটাসিয়াস যুগে হঠাৎ করেই জন্ম নিয়েছিল এই প্রজাতির উদ্ভিদ। তার আগে এই ধরনের গাছের কোনো উপস্থিতিই লক্ষ্য করা যায়নি কোনোভাবে। এই ঘটনাই ভাবিয়ে তুলেছিল ডারউইনকে। কারণ বিবর্তনবাদের হিসাবে এর মধ্যবর্তী কোনো অবস্থা পাওয়া আবশ্যিক। ১৮৮১ সালের আগস্ট মাসে মৃত্যুর ঠিক এক মাস আগে এক চিঠিতে বন্ধু ও উদ্ভিদবিদ জোসেফ হুকারকে ডারউইন লিখেছিলেন, প্রাণী নয়, বরং উদ্ভিদ জগতই অদ্ভুত রহস্যময়।
তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, এই ‘জঘন্য রহস্য’ বা ‘জটিল ধাঁধাঁ’ তার বিবর্তন তত্ত্বকে দুর্বল করে দেবে। জীবনের শেষ দিনগুলোতে এ বিষয়টি ব্যাপকভাবে হতাশ করেছিল তাকে।
সম্প্রতি লন্ডনের রয়্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেনের লাইব্রেরিতে ১৮৭৭ সালের লেখা স্কটিশ উদ্ভিদবিদ প্রফেসর উইলিয়াম ক্যারুথার্সের একটি ডায়েরি থেকে এ বিষয়টি জানতে পেরেছেন গবেষকরা। ডায়েরিটি উদ্ধার করেছেন কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী অধ্যাপক রিচার্ড বাগস।
ওই ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে যে, ডারউইনের বিবর্তনবাদের তত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন উদ্ভিদবিদ ক্যারুথার্স। ডারউইনের জীবাশ্মের রেকর্ডের সমস্যাগুলো তুলে ধরে পৃথিবীতে অ্যাঞ্জিওস্পার্ম উদ্ভিদের হঠাৎ আর্বিভাবের বিষয়টিকে তিনি গুরুত্ব দেন। নিজস্ব তত্ত্বে ক্যারুথার্স উল্লেখ করেন, অ্যাঞ্জিওস্পার্ম বিবতর্নের মাধ্যমে আসেনি। এই ফুলের হঠাৎ আবির্ভাবের কারণ হিসেবে বর্ণনা করেন ঈশ্বরের সৃষ্টিকে।
তবে ক্যারুথার্সের এই তত্ত্ব তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল সে সময়ে। ডারডাইন এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্বকে বিজ্ঞানসম্মত নয় বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাদের মতে, ক্যারুথার্স জীবাশ্মের রেকর্ডে অতিপ্রাকৃত ব্যাখ্যা আনার চেষ্টা করেছেন।
ক্যারুথার্সের ডায়েরি উদ্ধারকারী বিজ্ঞানী রিচার্ড বাগস বলেন, ‘তবে ডারউইনের একটা সমস্যা ছিল। ক্যারুথার্স জীবাশ্ম রেকর্ড সম্পর্কে যে পয়েন্টগুলো তৈরি করেছিলেন, সেগুলো বিবর্তনের দিক থেকে ব্যাখ্যা করা আসলে খুব কঠিন ছিল।’
অ্যাঞ্জিওস্পার্ম উদ্ভিদ আর্বিভাব রহস্যের সমাধান হয়েছে?
রিচার্ড বাগসের উত্তর- না। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘১৪০ বছর পরও রহস্যটি এখনো অমীমাংসিত। বর্তমান বিজ্ঞান বিবর্তন নিয়ে আমাদের অনেক কিছু জানিয়েছে এবং জীবাশ্ম রেকর্ড নিয়েও বিজ্ঞানে অনেক অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু এই রহস্য এখনো রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।
ঢাকা/ফিরোজ
আরো পড়ুন