ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সালিশ না মানায় ৩ পরিবারকে সমাজচ্যুতির অভিযোগ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০৬, ২৫ জানুয়ারি ২০২১  
সালিশ না মানায় ৩ পরিবারকে সমাজচ্যুতির অভিযোগ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কোরবানপুরে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে গ্রাম্য সালিশ না মানায় তিন পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভূক্তভোগী কাজল আহমদ। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন তার ভাই আকমল হোসেন ও সমাজচ্যুত অন্য একটি পরিবারের সদস্য জুবেল আহমদ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তার দাদার ভাই তোরাব আলীর নাতী পাখি মিয়ার সঙ্গে বিরোধ চলছিল। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সালিশকারী ও পঞ্চায়েত কমিটিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে গেলে তারা উভয়পক্ষের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা জামানত নিয়ে সালিশের সময় দেন ২০২০ সালের ১৯ জুন। 

সালিশের দিন জমির কাগজপত্র নেন তারা। সালিশে তিনি কাগজ অনুযায়ী ন্যায় বিচারের দাবি করেন। রেকর্ডে এক শতাংশ জায়গার মালিক হলেও গ্রাম্য পঞ্চায়েতে সালিশকারীরা তাদের জায়গা বুঝিয়ে দেননি। এটি নিয়ে ন্যায় বিচারের জন্য গত ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে স্বত্ব মামলা (মামলা নং ৯৭/২০২০ খ্রি.) দায়ের করেন।

আদালতে মামলা করায় সালিশকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৫ ডিসেম্বর ২০২০ খ্রি. তারিখে মামলার বিবাদীর বাড়িতে বসে তার পরিবারকে কোরবানপুর গ্রাম থেকে সমাজচ্যুত করে। সালিশকারীরা এলাকার লোকদেরকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে না যেতে কঠোরভাবে নিষেধ দেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গেলে তাদেরও পরিণতি তার মতো হবে বলে শাসান। 

সমাজচ্যুত করার পর মসজিদের ইমামের বেতন ও মক্তবের জন্য সাপ্তাহিক যে চাঁদা নেওয়া হতো তাও নিতে নিষেধ করা হয়। এই নিষেধের ফলে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কয়েক লাখ বকেয়া টাকা আদায় সম্ভব হচ্ছে না। সেজন্য তিনি অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমনকি তার পরিবারের কেউ মারা গেলে বা অসুস্থ হলে বাড়িতে না যেতেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সমাজচ্যুত করার কারণে গত ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে চরম দুর্ব্যবহার, স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায়ে বিভিন্ন ধরনের বাধা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লোকজন না আসতে দেওয়া এমনকি গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতেও নিষেধ করে দেন।

এতে বিবাদী পাখি মিয়া, পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল মিয়া, সদস্য চেরাগ মিয়া, চুনু মিয়া, হান্নান মিয়া, কাদির মিয়ার নামোউল্লেখ করে সমাজচ্যুত করার কারণ জানতে চেয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। লিগ্যাল নোটিশের কোনো সন্তুষজনক জবাবও তারা দেয়নি।

উপরন্তু তাদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করায় আরও ক্ষীপ্ত হয়ে সালিশকারীগণ বিবাদী পাখির মিয়ার বাড়িতে আবারও বসে তাদেরকে পাঁচ বছরের জন্য চূড়ান্তভাবে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়। 

কাজল আহমদ অভিযোগ করে বলেন, ‘পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল মিয়া প্রভাবশালী লোক। তার বিরুদ্ধে এলাকায় কেউ কথা বলতে চায় না। তার বিরুদ্ধে কেউ গেলে তাদেরকেও সমাজচ্যুত করা হয়।’ 

কাজল আহমদ আরও বলেন, ‘সালিশে আমাদের জমাকৃত টাকা ও জায়গার কাগজপত্রসমূহ সালিশকারীরা আমাদের এখনও বুঝিয়ে দেননি। এছাড়াও বর্তমানে তাদের ছেলে-সন্তানরা মক্তবে গিয়ে কুরআন শিক্ষা করতে পারছে না সমাজচ্যুতির কারণে।’ 

এ বিষয়ে গ্রাম্য পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল মিয়া বলেন, ‘বর্তমানে আমি ব্যস্ত আছি। এ বিষয়ে কোনো কথা বলব না।’ 
তবে পঞ্চায়েত কমিটির অপর সদস্য চুনু মিয়া সমাজচ্যুতের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

ভূকশীমইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির বলেন, ‘এই পঞ্চায়েত কমিটির মধ্যে সমস্যা আছে। তারা একেক সময় একেক পরিবারকে সমাজচ্যুত করে।’

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। এরকম হয়ে থাকলে ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। সভ্য সমাজে এরকম সমাজচ্যুতের ঘটনা ঘটতে পারে না। আইন অনুযায়ী সমাজচ্যুত করার কোনো বিধান নেই।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সাইফুল্লাহ হাসান/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়