ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পানির ট্যাংকে মাছ চাষ, ঘুচছে বেকারত্ব 

কাঞ্চন কুমার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০১, ৩ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৬:০৭, ৩ এপ্রিল ২০২১
পানির ট্যাংকে মাছ চাষ, ঘুচছে বেকারত্ব 

শিহাব উদ্দিন। পড়াশোনা করেছেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে তিনি আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। পড়ালেখা শেষ করে বেকার হয়ে বসে না থেকে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি আর বসে থাকেননি। তিনি তার বাড়ির আঙ্গিনায় বায়োফ্লক পদ্ধতিতে ৭৫ হাজার লিটারের দুটি ট্যাংকে ৫০ হাজার তেলাপিয়া মাছের চাষ করছেন।

বলছিলাম কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের গোলাবাড়িয়া এলাকার হাফিজুর রহমানের ছেলে শিহাব উদ্দিনের কথা। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে তিনি বেশ সফলতা পেয়েছেন।

শিহাব উদ্দিনের মতো এ গ্রামেরই শাহিনুর রহমান, স্বপনসহ আরও কয়েকজন শিক্ষিত যুবক প্রথমবারের মতো শুরু করেছেন বায়োফ্লক বা ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাছ চাষ। তারা তাদের বাড়ির আঙিনা ও ছাদে মাছ চাষ করছেন। এখন সবাই বেশ সফল।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে তারা তেলাপিয়া, শিং, মাগুর ও পাবদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করছেন। পুকুর কেটে কিংবা লিজ নিয়ে মাছ চাষের চেয়ে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে চাষ সহজ এবং লাভজনক।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে তিনজন মাছ চাষি

শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘চাকরির পেছনে না ছুটে ২০১৯ সাল থেকে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছি। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ সহজ ও লাভজনক। আমি এই পদ্ধতিতে চাষ করে সফলতা পেয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি শিং, কই, মাগুর ও পাবদাসহ বেশ কয়েক ধরনের মাছ চাষ করছি। অবকাঠামো ও সেড নির্মাণ করতে এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। জেনারেটর, এয়ার মেশিন, প্যারামিটারসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বাবদ এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। দেড় টাকা দরে প্রতি পিস পোনা কিনেছিলাম। পোনা বাবদ মোট ৯০ হাজার ও মাছের খাবার ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল। খরচ বাদ দিয়ে লাখ টাকার ওপরে লাভ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।’

শিহাব উদ্দিনের পরামর্শ ও সহযোগিতায় বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন একই এলাকার শাহিনুর রহমান।

শাহিনুর রহমান বলেন, ‘বায়োফ্লক পদ্ধতিতে শিহাব উদ্দিনের মাছ চাষ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে চাষ করেছি। এ পদ্ধতিতে অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ করা যায়। কারণ মাছের বর্জ্য থেকে খাদ্য তৈরি হয়। ৫০ হাজার টাকা খরচ করে যে কেউ পাঁচ হাজার লিটার পানির ট্যাংকে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারেন। খরচ বাদ দিয়ে ৬০-৭০ হাজার টাকা লাভ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘৫০ হাজার লিটারের ট্যাংকে ৪০ হাজার তেলাপিয়া মাছ চাষ করেছি। খরচ বাদ দিয়ে আমার এক লাখ টাকার মতো লাভ হবে।’

কত দিন পর মাছ বিক্রির উপযোগী হয়, জানতে চাইলে শাহিনুর রহমান বলেন, ‘মাছ বড় হতে বেশি সময় লাগে না। বিক্রির উপযোগী হতে চার-পাঁচ মাস সময় লাগে।’

মাছ পরিচর্যা করছেন চাষি 

একই এলাকার স্বপন বাড়ির ছাদে ১০ হাজার লিটার ট্যাংকে ৩৬ হাজার তেলাপিয়া মাছের চাষ করেছেন। এরই মধ্যে একবার মাছ বিক্রি করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণ নিয়ে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে ভালোভাবে মাছ চাষ করতে পারলে যে কেউ লাভবান হবেন। তবে প্রাথমিক অবস্থায় খরচটা একটু বেশি। তবু লাভজনক এই চাষ পদ্ধতি।’

দৌলতপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা খন্দকার শহিদুর রহমান বলেন, ‘বায়োফ্লক পদ্ধতিতে বেশি ঘনত্বে মাছ চাষ করা সম্ভব। যেখানে খাদ্য খরচ প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় অনেক কম। মাছের উৎপাদন হার পুকুর বা জলাশয়ের চেয়ে অনেক বেশি। যুবকরা প্রশিক্ষণ নিয়ে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই উপজেলায় প্রায় ১০-১২টি বায়োফ্লক মাছের খামার গড়ে উঠেছে। মৎস্য অফিসের পরামর্শ নিয়ে তারা খামার দিয়েছেন। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে দেশে আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।’

দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ মামুন জানান, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে শিহাবসহ বেশ কয়েকজন সফলতা পেয়েছে। যারা এপদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে আগ্রহী, তাদের উপজেলা মৎস্য অফিসের মাধ্যমে সহায়তা করা হবে।

কুষ্টিয়া/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়