ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে হাসছে চা বাগান

মো. মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৯, ৪ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৫:২৩, ৪ এপ্রিল ২০২১
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে হাসছে চা বাগান

এপ্রিল মাস চলছে। বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে হবিগঞ্জের বাগানগুলোর চা গাছে কুঁড়ি গজানো শুরু হয়েছে। তৈরি হচ্ছে সবুজের সমারোহ। এতে শ্রমিক থেকে মালিক পর্যন্ত সবার মধ্যে উৎসাহ দেখা দিচ্ছে। 

বাগানে মূলত চা বিক্রির অর্থেই পুরো বছরের খরচ বহন হয়। গাছে গাছে চা পাতার একেকটা কুঁড়ি যেন মালিক ও শ্রমিকের কাছে মূল্যবান সম্পদ। তারা এ কুঁড়ির মাঝেই এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে বেড়ান। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হবে, গাছে গাছে কুঁড়ি গজাবে। কুঁড়ি যত বেশি সংগ্রহ হবে, বাড়বে উৎপাদন। আসবে অর্থ। 

এগিয়ে যাওয়ার আশা নিয়ে জেলার বাহুবল উপজেলার আমতলী চা বাগানে ২৮ মার্চ থেকেই এ মৌসুমের উৎপাদন শুরু হয়েছে। শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে উঁচু ও ঢালু পাহাড়ি জমি থেকে চা পাতা সংগ্রহ করছেন। পরে প্রক্রিয়াজাতের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফ্যাক্টরিতে। সময়ের সঙ্গে এ বাগানের চার পাশে সবুজের সমারোহে শ্রমিকরা মনের আনন্দে কাজ করছে।

বাগানে কর্মরত এম কায়সার ও বিকাশ দেব বলেন, ‘ম্যানেজার স্যার ও অন্যন্য কর্মকর্তা মিলে শ্রমিকদের মনে প্রেরণা জোগাচ্ছেন। শ্রমিকরা মনের আনন্দে চা পাতা সংগ্রহ করছেন। এখন দিন দিন উৎপাদন বাড়বে।’

জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে মাধবপুর, চুনারুঘাট, নবীগঞ্জ, বাহুবল উপজেলায় রয়েছে পাহাড়ি এলাকা। এ পাহাড়ি এলাকাকে ঘিরে ছোট বড় মিলে ৪১টি চা বাগান গড়ে উঠেছে। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় ৩২ হাজার শ্রমিক চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।

এ মৌসুমে প্রথম হবিগঞ্জে গত ৬ মার্চ সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। এরপর কয়েক দফায় বৃষ্টি হয়েছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই গাছে গাছে চা পাতার কুঁড়ি গজাচ্ছে। মৌসুমে ১৫ মার্চ থেকে বাগানে বাগানে চা পাতার উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা। যাইহোক বৃষ্টির দেখা পেয়ে চা-পাতার উৎপাদন শুরু করেছে হবিগঞ্জের বাগানগুলো।

যদিও দেশের সিলেট, চট্রগ্রাম ও পঞ্চগড়ে ৭টি ভ্যালির মাধ্যমে প্রায় ২৫৬টি বাগানে চা উৎপাদন হয়ে আসছে। দেশের অন্যান্য বাগানসহ সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলায় অবস্থিত বাগানগুলোতে ব্ল্যাক ‘টি’ উৎপাদন হচ্ছে ব্রিটিশ আমল থেকে। সেই সময় থেকে বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে চা-পাতার উৎপাদন শুরু হচ্ছে, সমাপ্ত হয় ডিসেম্বর মাসে। উৎপাদন শেষ হলে চা-পাতার গাছগুলোর নানাভাবে পরিচর্যা করা হয়ে থাকে।

প্রতি মৌসুমে হবিগঞ্জের বাগানগুলো প্রায় দেড় কোটি কেজি চা-পাতা উৎপাদন করে। নতুন করে চারা রোপণ করে চা-পাতার উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বাগান কর্তৃপক্ষগুলো নানাভাবে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নিয়মমাফিক বৃষ্টির সাথে রয়েছে চা-পাতা উৎপাদনের সম্পর্ক। এখানে অতি বৃষ্টি হলে হবে না। নিয়ম অনুযায়ী বৃষ্টির সাথে উৎপাদনের ভাল-মন্দ নির্ভর করে। এছাড়াও চা-পাতার উৎপাদন বাড়াতে বাগান কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শ্রমিকদের আন্তরিকতা বিরাট ভূমিকা রাখে। বৃষ্টির সাথে সম্পর্ক রেখে হবিগঞ্জের ছোট বড় মিলে প্রায় ৪১টি বাগানে চা পাতার উৎপাদন চলছে।

বাহুবল উপজেলার আমতলী চা বাগানের ব্যবস্থাপক সোহেল রানা পাঠান বলেন, ‘দেরীতে সেই কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি পেয়েছি। এ বৃষ্টি হবিগঞ্জের চা-বাগানের মালিক-শ্রমিক সবার চোখেমুখেই খুশির ঝিলিক এনে দিয়েছে। কারণ, বৃষ্টি ছাড়া উঁচু আর ঢালু স্থানে আড়াই থেকে তিন ফুট গাছে কুঁড়ি আসবে না। যাইহোক বৃষ্টিতে গাছে গাছে কুঁড়ি ছাড়তে শুরু করেছে। গাছের বড় কুঁড়িগুলো শ্রমিকরা সংগ্রহ করছেন। নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফ্যাক্টরিতে। প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে। বিক্রির জন্য যাবে ওয়্যার হাউজে। এখানে নিয়মিত বৃষ্টি না পাওয়া গেলে উৎপাদন কাজে বাঁধা সৃষ্টি হবে।’

চুনারুঘাটের দেউন্দি চা-বাগানের ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। তবে গড়ে ২৫ দশমিক ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। চা বাগানে এখন সবুজ জেগে উঠেছে। যা দৃষ্টি ও হৃদয়কে দারুণভাবে মুগ্ধ করছে। নিয়মিত বৃষ্টিপাত হলে, চা-পাতা উৎপাদনে সহায়ক হবে। এরজন্য তাপমাত্রা চাই ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে। তা না হলে সমস্যা তৈরি হবে।’

বৃন্দাবন চা বাগানের ব্যবস্থাপক নাছির উদ্দিন খান বলেন, ‘বৃষ্টি দেখা মিলেছে। ১ মার্চ থেকে আমরা উৎপাদন শুরু করেছি। অবস্থা ভালো। আর আমরা যারা চা বাগানে কাজ করি, তারা এমন আশা নিয়ে অপেক্ষায় থাকি যে, কখন কুঁড়ি গজাবে, তখন গাছ সবুজ হবে।’

তিনি বলেন, ‘বসন্ত এলে চারপাশের সবুজ প্রকৃতি দেখে হৃদয়ে যেভাবে দারুণ অনুভূতি হয়, ঠিক তেমনি বৃষ্টির পর চা গাছে নতুন কুঁড়িতে ভরে উঠতে দেখলে আমাদেরও হৃদয় গভীর আনন্দিত হয়ে ওঠে। এই নতুন কুঁড়িই তো আমাদের চা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখবে।’

দেউন্দি চা-বাগানের শ্রমিক বিনা সাঁওতাল বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে গাছ থেকে চা-পাতা সংগ্রহ করছি। এটা আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। সব একই রকম লাগে। তবে বৃষ্টির পরে যে কুঁড়িগুলো বের হয়, তা চকচকে সবুজ থাকে।’

তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিতে গাছে কুঁড়ি ছাড়তে শুরু করেছে। যে চা গাছের কুঁড়িগুলো অন্যগুলোর থেকে বেশি বড় হয়ে গেছে, সেগুলোকে ইতোমধ্যে তোলা হয়ে গেছে। এভাবে উত্তোলন চলবে।’

জেলার জগদীশপুর, রশিদপুর, লালচান্দ, পারকুল, সুরমা, চান্দপুর, চন্ডিছড়াসহ বিভিন্ন বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, বৃষ্টির দেখা পাওয়ায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে নিয়মিত বৃষ্টি না পাওয়া গেলে উৎপাদনে বাধা তৈরি হবে।

হবিগঞ্জ/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়