ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

মজুত পর্যাপ্ত, হুজুগে কেনাকাটা না করার আহ্বান

জুনায়েদ শিশির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৭, ৬ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৯:৩০, ৬ এপ্রিল ২০২১
মজুত পর্যাপ্ত, হুজুগে কেনাকাটা না করার আহ্বান

নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত থাকায় আসন্ন রমজান মাসে বাজারে লকডাউনের প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে বলেও জানানো হয়েছে। পণ্যের মজুত এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সড়ক, নৌ ও রেলপথ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরকে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ করতে বলেছে সরকার। অন‌্যদিকে, হুজুগে কেনাকাটা না করতে ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে, লকডাউনের পাশাপাশি রমজানের কেনাকাটা শুরু হওয়ায় নিত্যপণ্যের বাজারদর বাড়ছে। মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) ঢাকার বাজারে মানভেদে সব ধরনের চাল, ময়দা, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, এলাচ, শুকনা মরিচ, মশুর ডাল, পিঁয়াজ, খেজুর, আলু, দেশি রসুন, আদা, অ‌্যাংকর ডাল, গুঁড়া দুধের দাম বেশি দেখা গেছে। অন্যান্য পণ্যের দাম প্রায় অপরিবর্তিত আছে।

ঢাকায় প্রতি কেজি নাজিরশাইল ও মিনিকেট চাল ৬০-৬৫ টাকায় বক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ৫৮ থেকে ৬৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাইজাম বা লতা চাল প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা বেড়ে ৫২ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত।

প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটার দাম ২ টাকা বেড়ে ৩২ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখন খোলা ময়দার দাম ৩৫ টাকা, প্যাকেট ময়দার দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। লুজ সয়াবিন তেল লিটারে ৫ টাকা বেড়ে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিকিকিনি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি ৫ লিটারে ১০ টাকা বেড়েছে, বিক্রি হচ্ছে ৬৩০ থেকে ৬৫০ টাকায়। লুজ পাম অয়েলের দাম প্রতি লিটারে ১ থেকে ৫ টাকা বেড়ে ১০৬ থেকে ১১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সুপার পাম অয়েল প্রতি লিটারে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়ে ১১০ থেকে  ১১৫ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। প্রতি কেজি মশুর ডালের দাম ৬৮ থেকে ৯০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬৫ থেকে ৮৫ টাকা।

বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, লকডাউন ও রমজানকে কেন্দ্র করে সড়ক, নৌ ও রেলপথে কৃষিপণ্য পরিবহন স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বিকল্প ব্যবস্থায় রেলপথ ও বিটিআরসির মাধ্যমে কৃষিপণ্য পরিবহন সচল রাখা হবে। কৃষিপণ্যের আন্তঃজেলা পরিবহন নির্বিঘ্ন রাখতে সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

লকডাউন ও পণ্য পরিবহণের বিষয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত বছর লকডাউনের সময় সাপ্লাই চেইন (পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা) ভেঙে পড়ায় কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারেননি। অন্যদিকে, ভোক্তাদের বেশি দাম দিয়ে পণ্য কিনতে হয়েছে। সে সময় কিছু সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়েছিল বলে খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু এবার শুরু থেকে আমরা কাজ করছি। আশা করছি, পণ‌্য সরবরাহে কোনো সমস্যা হবেনা। দপ্তরের পক্ষ থেকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লকডাউনের খবরে গত শনিবার থেকেই ভোক্তাদের নিত্যপণ্যের বাড়তি মজুত গড়তে দেখা গেছে। যদিও সরকার বলছে, দেশে সব ধরনের পণ্যের যথেষ্ট মজুত আছে। ভোক্তাদের বাড়তি কেনাকাটার সুযোগে ব্যবসায়ীরাও বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন। ফলে সাধারণ মানুষকে নিত্যপণ্য বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

ঢাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি বাজার থেকেই অতিরিক্ত পরিমাণে পণ্য কিনে মজুত করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ফলে পাইকারি ব্যবসায়ীরাও পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন। অথচ, খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে পণ্যের যথেষ্ট মজুত দেখা যাচ্ছে।

এদিকে, রমজান উপলক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ১ এপ্রিল থেকে খোলা বাজারে ভ্রাম্যমাণ ট্রাক ও ডিলারের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। বাড়তি দামের কারণে তেল, চিনি, পেঁয়াজ, ছোলা, ডাল কেনার জন্য টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতেও ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। সরা দেশে ৫০০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে (ঢাকা সিটিতে ১০০ এবং চট্টগ্রাম সিটতে ২০টিসহ) পণ‌্য বিক্রি ৬ মে পর্যন্ত চলবে।

টিসিবি প্রতি কেজি চিনি, ছোলা ও মশুর ডাল ৫৫ টাকায়, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১০০ টাকায়, পিঁয়াজ প্রতি কেজি ২০ টাকায় এবং খেজুর প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি করছে। প্রত‌্যেক গ্রাহক একবারে ২ থেকে ৪ কেজি চিনি, ২ কেজি মশুর ডাল, ২ থেকে ৫ লিটার সয়াবিন তেল, ছোলা ২ থেকে ৩ কেজি এবং ১ কেজি খেজুর কিনতে পারছেন।

বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের উপাচার্য ও কৃষি অর্থনীতিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এবার যে লকডাউন দেওয়া হয়েছে, তাতে পণ্য পরিবহন এবং শ্রমিক চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়নি। এবছর বোরো ধান অনেক ভালো হয়েছে। কৃষকরা সঠিক সময়ে ধান ঘরে তুলতে পারলে চালের বাজারে যে অস্থিরতা তা কমবে। তাছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানিও করা হয়েছে।’

লকডাউন ঘোষণার পর বাজার অস্থির হয়ে ওঠার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা খুব স্বাভাবিক। কারণ, গত বছর আমাদের সরবরাহ প্রক্রিয়ায় কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। অনেকে মনে করছেন, এবারও তা হবে। কিন্তু না, এ বছর তা হচ্ছে না। হবে না।‘ ক্রেতাদের সচেতনভাবে পণ্য কেনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এদিকে, রমজানকে ঘিরে অসাধু চক্র এবং সরকারবিরোধী গোষ্ঠি নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরকে জানিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। প্রয়োজনে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের আড়তদার, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের পণ্যের বিক্রয়মূল্য দৃশ্যমান স্থানে ঝুলিয়ে রাখতে বাধ্য করতে মাঠ প্রশাসনকে জরুরি বার্তা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে তারা।

ঢাকা/শিশির/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়