ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মরুভূমির ত্বিন ফল চাষ হচ্ছে মান্নানের বাগানে 

মোসলেম উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ১০ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১১:৩৮, ১০ এপ্রিল ২০২১
মরুভূমির ত্বিন ফল চাষ হচ্ছে মান্নানের বাগানে 

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে মরুভূমির পুষ্টি ও সুস্বাদু ত্বিন ফল চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন মতিউর মান্নান। চার বিঘা জমিতে সাড়ে পাঁচ মাস আগে এই ফলের চাষ শুরু করেছেন তিনি। ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে তার এই বাগান তৈরিতে এবং এই বাগান থেকে প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ টাকার ত্বিন ফল বিক্রি করতে পারবেন বলেও আশা তার।

সরেজমিনে মালারপাড়া গ্রামে মান্নানের ত্বিন বাগান ঘুরে জানা যায়, মান্নানের ছোট বোন মনিরা বেগম ঢাকায় থাকেন। প্রথমে তার সার্বিক সহযোগিতায় এই ত্বিন ফলের চারা গাছ সংগ্রহ করেন। চার বিঘা জমিতে তিনি বিভিন্ন জৈব সার, গবর, বালু, ধানের গুড়া, ঝিনুকের গুড়া, বরণ, দস্তা ও দানাদার কীটনাশক মিশিয়ে বেড তৈরি করেন। বর্তমানে তার বাগানে প্রায় দুই প্রজাতির এক হাজার ত্বিন গাছ লাগানো হয়েছে। প্রতিটি গাছে পর্যাপ্ত ফল ধরেছে। ফলগুলো ডুমুরের আকৃতি, আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ধরেছে। 

প্রতিটি গাছ থেকে প্রথম বছর ১ কেজি, দ্বিতীয় বছর ৮ থেকে ১০ কেজি এবং তৃতীয় বছর প্রায় ২০ থেকে ২৪ কেজি ত্বিন ফল পাবেন। প্রতিটি ফলের ওজন হবে ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম। গাছগুলো লম্বায় প্রায় ২৮ থেকে ৩০ ফুট হয়ে থাকে। যার কেজি বাজারে বিক্রি হবে প্রায় ১০০০ টাকা। গাছগুলোর আয়ুষ্কাল প্রায় ১০০ বছর, তবে ৩৫ বছর পর্যন্ত ভালো মানের এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ফল পাওয়া যাবে। প্রতিটি গাছে ৩ মাসের মধ্যে ফল আসে। এই ত্বিন ফলের বাগানটি দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন ছুটে আসছেন এবং ত্বিন ফলের বাগান তৈরির জন্য উৎসাহী হয়ে উঠছেন তারা। মান্নানের এই বাগানে ৫ থেকে ৭ জন শ্রমিক প্রতিনিয়ত কাজ করছেন। বাগানে কাজ করে তাদের সংসারও চালাচ্ছেন।

গাছে গাছে ত্বিন ফল

কথা হয় ত্বিন বাগানের শ্রমিক সৈয়দ আলীর সঙ্গে, তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বাগান তৈরির শুরু থেকে আমি এখানে কাজ করছি। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করি। প্রতিদিন মালিক আমাকে ৪০০ টাকা করে হাজিরা দেন। তা থেকে আমার সংসার ভালোভাবে কেটে যায়।’

শ্রমিক ভুট্টু মিয়া বলেন, ‘আমরা এখানে ৫ থেকে ৭ জন শ্রমিক কাজ করে আসছি। বাগানের সব কাজ আমরা করে থাকি এবং মালিককে সহযোগিতা করি। প্রতিদিন বিভিন্ন প্রকার লোক এই বাগান দেখতে আসনেন।’

ত্বিন বাগান মালিক মতিউর মান্নান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ত্বিন ফলটি মূলত শুষ্ক ও শীত প্রধান (মুরুভূমি) দেশে হয়ে থাকে। আমি গাজীপুর থেকে চারা নিয়ে আমার এলাকার মাটিতে চাষ করছি। তবে আমি প্রমাণ করছি, আমার দেশের মাটিতেও এই ফল ফলানো সম্ভব। সারাবছর আমরা এই গাছ থেকে ফল পেয়ে থাকি। এইটি একটি লাভ জনক ফল, দেশের চাহিদা পূরণ করে, বিদেশেও আমরা রপ্তানি করতে পারবো। দেশের বেকার যুবকরাও যদি এই ত্বিন ফল চাষ করেন, তাহলে তাদের আর অন্য কোনো কাজের প্রয়োজন হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যদি আমাকে সহযোগিতা করে, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারেও ব্যবসা করতে পারবো।’

নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলে ত্বিন ফলের বাগান এইটিই প্রথম। প্রতিনিয়ত আমরা এই বাগানটি পরিদর্শন করছি এবং বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি। বাগানের গাছগুলোর কোনো রোগ-বালাই নেই। প্রচারের মাধ্যমে যদি এই ত্বিন চাষকে তুলে ধরা যায়, তাহেল দেশের কৃষকরা এই ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবে। এটি একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। ব্যাপক ত্বিন চাষ হলে বিদেশ থেকে আমদানির প্রয়োজন হবে না এবং দেশের অর্থনীতি বৃদ্ধি পাবে।’

দিনাজপুর/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়