ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রোজা রেখে টিকা নেওয়ার বিধান

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ১০ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১২:৪৪, ১০ এপ্রিল ২০২১
রোজা রেখে টিকা নেওয়ার বিধান

রোজা থাকা অবস্থায় টিকা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই যে বিষয়টি সামনে আসে তা হলো- কমপক্ষে কতটুকু সময়কে আমরা রোজা বলবো?

আমরা জানি, সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কিছু পান করা, আহার করা এবং কোনোভাবে যৌন তৃপ্তি নেওয়া বা যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকাই হচ্ছে রোজা।

আবার বোধবুদ্ধি সম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য রোজা রাখা ফরজ। রোজা রেখে রমজান মাসে বা অন্য সময় ইফতারের সময় থেকে সাহরির সময়ের শেষ পর্যন্ত টিকা বা ইনজেকশন গ্রহণে কোনো বাধা নেই। কিন্তু রোজা রাখা অবস্থায় অর্থাৎ দিনের বেলা এই জাতীয় টিকা এবং ইনজেকশন গ্রহণে ইসলামী শরীয়তে বিধি-নিষেধ আছে কিনা তা রোজাদারদের জেনে রাখা দরকার।

ইনজেকশন বা টিকা তিনটি কারণে নেয়া হয়। একটি হচ্ছে চিকিৎসার জন্য, দ্বিতীয়টি হচ্ছে শক্তি বৃদ্ধির জন্য এবং তৃতীয়টি হচ্ছে বিকল্প খাদ্য হিসেবে। চিকিৎসার জন্য, যেমন কারো শরীরে ব্যথা করছে ইনজেকশন দিয়ে তার চিকিৎসা করা হচ্ছে। আবার শক্তি বৃদ্ধির জন্য, যেমন কারো ভিটামিনের অভাব থাকলে ভিটামিন জাতীয় ইনজেকশন পুশ করা হচ্ছে। তৃতীয়ত বিকল্প খাদ্য হিসেবে, যেমন: গ্লুকোজ কিংবা স্যালাইন পুশ করা হয়।

প্রয়োগ পদ্ধতির দিক থেকে টিকা বা ইনজেকশন দুই রকমের। একটি পদ্ধতি হচ্ছে মাংসপেশিতে দেওয়া, যেটি সরাসরি পাকস্থলিতে প্রবেশ করে না। এটি তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করে। আর দ্বিতীয়টি রক্তনালীতে দেওয়া হয়।

‘জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া’ গ্রন্থের প্রণেতারা এবং মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দিন ‘প্রণীত আহকামে জিন্দেগী’ বইটিতেও টিকা বা ইনজেকশনের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে বিকল্প খাদ্য হিসেবে যা গ্রহণ করা হয় তার মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ হবে।

বহু আলিম ও মুফতির মত অনুযায়ী, যদি টিকা বা ইনজেকশন মাংসপেশীতে নেয়া হয় এবং চিকিৎসা বা রোগ-বালাইয়ের জন্য নেয়া হয়, তাহলে এর মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ হবে না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে এই ইনজেকশন খাদ্য নয়, এটা কোনো পানীয় নয়, এটা সরাসরি পাকস্থলিতে যায় না- যা রোজা ভঙ্গের  কারণের মধ্যে একটি। 
তবে রোজা অবস্থায় ইনজেকশন বা টিকা দেয়ার সময় সতর্ক থাকা উচিত। কারণ অনেক সময় টিকা বা ইনজেকশন দেওয়ার সময় রক্ত প্রবাহের চাপ থাকার কারণে, রক্ত বের হয়ে গড়িয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় রক্ত বেরিয়ে আসা, রোজা ভঙ্গ হওয়ার কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। অর্থাৎ রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আবার টিকার প্রভাবে অনেক সময় তাৎক্ষণিক বমি হয়। হয়তো টিকা দেয়া হয়েছে সকাল ৭টায়, দুই-তিন ঘণ্টা পরে এর প্রভাবে বমি হয়েছে, তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তাই এ ধরনের আশঙ্কা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টায় দিনের বেলা রোজা অবস্থায় টিকা বা ইনজেকশন না নিয়ে, রোজা না রাখা অবস্থায় অর্থাৎ সূর্যাস্ত থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত টিকা বা ইনজেকশন নিলে ভালো হয়।

বিশ্ববাসী এখন করোনাকাল অতিক্রম করছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার উসিলা হিসেবে আমরা ভ্যাকসিন বা টিকা গ্রহণ করবো। বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে টিকা দেওয়ার সময়সূচি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা। এদিক থেকে সতর্কতার সঙ্গে করোনার ভ্যাকসিন বা টিকা নিতে কোনো রোজাদারেরই সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাই রোজা অবস্থায় সতর্কতার সঙ্গে টিকা নিতে ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে সমস্যা নেই।

অন্যদিকে যারা বিষয়গুলো খুব গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা না করে বিতর্ক করছেন, তাদের অনুরোধ করছি, আরো পড়াশোনা করার জন্য। সব কিছু ঢালাওভাবে না বলে, আরো একটু গভীরভাবে চিন্তা-ফিকির করার জন্য, গবেষণার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য। সারা পৃথিবীতে দিনের বেলা টিকা কিভাবে দেওয়া হচ্ছে, এ ব্যাপারে কার কী ফাতাওয়া, সেই বিষয়গুলো জেনে, সেভাবে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। মহান আল্লাহর কাছে আমাদের সবার সুস্থতা কামনা করছি। রমজানে আমরা যেন সবাই রোজা রাখতে পারি আল্লাহর কাছে সেই তাওফীক কামনা করছি। আমীন।

লেখক: গবেষক, প্রবন্ধিক, কলাম লেখক

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়