ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

লকডাউনের ধাক্কা: প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন‌্য বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ 

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৪, ১০ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৭:৫৪, ১০ এপ্রিল ২০২১
লকডাউনের ধাক্কা: প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন‌্য বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ 

করোনার সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ে সারাদেশে অর্থনীতিতে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, দ্বিতীয় আঘাতে তার চেয়েও বেশি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাত দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই কারোনার দ্বিতীয় দফা লকডাউনের অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন তারা। 

অর্থনীতিবিদের মতে, এবার প্রায় ৪ কোটি দরিদ্র মানুষের (এর মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ অতি দরিদ্র) মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার প্রস্তুতি থাকতে হবে। গতবারের করোনা পরিস্থিতিতে দেশের স্বল্প আয়ের মানুষের হাতে কিছু সঞ্চয় ছিল। এখন স্বল্প আয়ের মানুষের হাতে সঞ্চয় নেই বললেই চলে। কাজেই দীর্ঘমেয়াদি লকডাউনে গেলে অনেক বেশি মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে, নিম্ন মধ্যবিত্ত, টানাটানিতে চলা লোকজন কারও কাছে হাত পাততে পারবেন না। কিন্তু তারা খাদ্যসংকটে পড়তে পারেন। কারণ অনেক মানুষের সঞ্চয় গত বছর কমে গেছে। বিশেষ করে অনেক উদ্যোক্তা তাদের ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখার জন্য সঞ্চয় থেকে অথবা পারিবারিকভাবে ঋণগ্রস্ত হয়েছেন। ফলে এবার তাদের সংকট বাড়বে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, ঢিলেঢালা-নামমাত্র লকডাউনের পরিবর্তে কঠোরভাবে লকডাউন নিশ্চিত করতে হবে। যত দিনের লকডাউন দিলে সত্যিকার অর্থেই করোনার সংক্রমণ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে, ততদিন পর্যন্ত লকডাউন নিশ্চিত করতে করতে হবে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিতে হবে। পাশাপাশি সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক মাস্ক-সাবান ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম  বলেন, ‘করোনার প্রথম পর্যায়ে অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হয়েছে, দ্বিতীয় পর্যায়ে তা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, প্রথম পর্যায়ের চেয়ে দ্বিতীয় ঢেউ লম্বা ও দীর্ঘ সময় থাকার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে লকডাউনের কারণে অর্থনীতি তো ক্ষতিগ্রস্ত অবশ্যই হবে। তবে জীবন ও জীবকার সংঘাত যেখানে, সেখানে জীবনকেই তো প্রাধান্য দিতে হবে। দেশে যে হারে করোনা বাড়ছে, তাতে লকডাউন দেওয়া হয়েছে। করোনার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও লকডাউন দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশও তার ব্যাতিক্রম নয়। সুতরাং অর্থনৈতিক ক্ষতি হলেও লকডাউন অপরিহার্য।’

এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘তবে চেষ্টা করতে হবে, যারা বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অর্থাৎ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দ বাড়ানো ও সুষ্ঠুভাবে বিতরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। যেন কর্ম বা চাকরি বা ব্যবসাহীন ব্যক্তি যেন অভুক্ত না থাকে।’  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ‘লকডাউনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দেশের নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। যারা উচ্চবিত্ত রয়েছেন, তারা লকডাউনের মধ্যে জমানো টাকা ভোগ করবেন। ফলে পুরো অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর লকডাউন। দেশে দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন দেওয়ার মতো কী যুক্তি রয়েছে, তা আমার জানা নেই। এ-তো মানুষের মধ্যে আরও আতঙ্ক সৃষ্টি করে।’

আবু আহমেদ বলেন, ‘লকডাউন কত দিন চলবে, তা বলা যাচ্ছে না। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানা ও হসপিটালের সেবা বাড়াতে হবে। তাই বলে কি লকডাউন মাসের পর মাস দেওয়া সম্ভব নয়? তা না হলে নিম্ন আয়ের মানুষ চলতে পারবে না, যা অর্থনীতির জন্য হুমকি স্বরূপ।’

অর্থনীতিবিদ ও  বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘লকডাউন সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়ন করা হবে, না ঢিলেঢালা ভাবে চলবে, তা আগে ঠিক করতে হবে। ঢিলেঢালা লকডাউনে লোকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে সংক্রমণ আরও বাড়াতে পারে। তাই যে ক'দিনের লকডাউন দিলে সত্যিকার অর্থেই তা করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় কার্যকর হবে, ততদিন পর্যন্ত লকডাউন দিতে হবে। পাশপাশি দরিদ্রসহ নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা না রাখলে এ লকডাউন হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ করোনার সঙ্গে সঙ্গে অভাবে পরেও মানুষের জীবনের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই দ্বিতীয় দফা লকডাউনের অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে হলে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের সাহায্য দরকার হবে। নয়তো আর লকডাউন মানুষ মানবে না।’

ড. নাজনীন আরও বলেন, ‘লকডাউন চলার সময় সব ধরনের  সভা, সমাবেশ ও জনসমাগম বন্ধ করে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিতে হবে। সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক মাস্ক-সাবান ইত্যাদি ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। এই সংক্রান্ত প্রচার প্রচারণা জোরদার করতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।’

/এনই/ 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়