ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পেপার কাপের প্রতি কেজির দাম ৩.৫ ডলার করার দাবি

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৯, ২৪ এপ্রিল ২০২১  
পেপার কাপের প্রতি কেজির দাম ৩.৫ ডলার করার দাবি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নীতিমালার কারণে কাগজের কাপ-প্লেট তৈরির দেশীয় শিল্প মার খাচ্ছে। চাহিদার ওপর ভিত্তি করে দেশীয় বিনিয়োগকারীরা ছোট-বড় ৫০-৬০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু একই পণ্য আমদানিতে ন‌্যূনতম দাম কম নির্ধারণ করায় দেশীয় শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিগুলোর অবস্থাও খুবই খারাপ। এ অবস্থায় এ শিল্পের মালিকদের সংগঠন পেপার কাপ ম্যানুফ‌্যাকচারার অ‌্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (পিসিএমএবি) আমদানি করা পেপার কাপের প্রতি কেজির দাম ন‌্যূনতম ৩ দশমিক ৫ ডলার করার দাবি জানিয়েছে।

২০১২ সাল থেকে বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্বেও বাংলাদেশে পেপার কাপ ও পেপার প্লেট উৎপাদন ও বাজারজাত করছে কিছু প্রতিষ্ঠান। কাগজের তৈরি কাপ সারা বিশ্বেই পরিবেশবান্ধব এবং স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যা চা, কফি, কোমল পানীয়, আইসক্রিম ইত্যাদি পরিবেশনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

উল্লেখ্য, পরিবেশ সংরক্ষণে হাইকোর্ট ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম পণ্য নিষিদ্ধ করে বিকল্প পণ্য ব্যবহারের আদেশ দেন। ফলে পেপার কাপ ও পেপার প্লেট পরিবেশবান্ধব বিকল্প পণ্য হিসেবে সমাদৃত হতে পারে।

কিন্তু আইনের ফাঁক গলিয়ে এ ধরনের প্লাস্টিক পণ্য দেশে উৎপাদন হচ্ছে এবং তা প্রকাশ‌্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে পরিবেশবান্ধব পেপার কাপ ও অন্যান্য পণ্যের বাজার হুমকির মুখে পড়েছে।

এ শিল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাগজের কাপ ও প্লেট তৈরির কাঁচামাল ভার্জিন উড পাল্প মন্ড থেকে মেকানিক্যাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদন করা হয়। পণ্যটি ব্যবহারের পর মাটিতে ফেলে দিলে অতি দ্রুত তা মাটির সঙ্গে মিশে জৈব সারে পরিণত হয়।

এ বিষয়ে পেপার কাপ ম্যানুফ‌্যাকচারার অ‌্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (পিসিএমএবি) সভাপতি কাজী সাজিদুর রহমান বলেন, ‘রপ্তানিবাজার বড় করার জন্য নতুন পণ্যের অবাধ বাজার সৃষ্টি করা খুবই প্রয়োজন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই বলে থাকেন। বর্তমান বিশ্বে পেপার কাপ পণ্যের বাজারের আয়তন ২৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সম্ভাবনার ইংগিত দেয়। যেহেতু, কাগজের কাপের পৃথিবীব্যাপী বাজার আছে, সেহেতু এই শিল্প সম্প্রসারণের মাধ্যমে একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘এ সম্ভাবনাময় শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য স্বার্থান্বেষী মহল উঠে পড়ে লেগেছে। তারা বিভিন্ন দেশ থেকে কম দাম ঘোষণার মাধ্যমে পেপার কাপ-প্লেট আমদানি করছে। এর ফলে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে দেশীয় শিল্প হুমকির মুখে পড়ছে।

উল্লেখ্য, পেপার কাপ ও প্লেটের ন‌্যূনতম আমদানি মূল্য প্রতি কেজি ১ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা আছে, যা আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

কাজী সাজিদুর রহমান জানান, শুরুতে এর প্রতি কেজির দাম ছিল ৬০ সেন্ট। বিষয়টি এনবিআরের দৃষ্টিগোচর করা হলে প্রতি কেজির দাম ১ দশমিক ৫ ডলার করা হয়। এটাও খুবই কম। এ কারণে কাগজের কাপ-প্লেট আমদানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন আমদানি দাম কেজি প্রতি ৩ দশমিক ৫ ডলার নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।

এ বিষয়ে বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। করোনাকালে দেশীয় শিল্প নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আসন্ন বাজেটে দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখার জন্য অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে। পেপার কাপ শিল্পের বিষয়ে আমরা অবহিত আছি।’

ঢাকা/হাসনাত/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়