ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অনলাইনে প্রতারণা: বন্ধ হবে কবে 

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০১, ৪ মে ২০২১   আপডেট: ২০:০৩, ৪ মে ২০২১
অনলাইনে প্রতারণা: বন্ধ হবে কবে 

করোনাকালে বিভিন্ন কারণে সশরীরে বাজার-শপিংমলে গিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার সময় হয় না অনেকেরই। তাই তারা বিকল্প পথ খোঁজেন। সেই পথও তাদের সামনে খোলা। সম্প্রতি চালু হওয়া অনলাইন শপিং পদ্ধতিকেই তারা আপাতত নিরাপদ ভেবে এই মাধ‌্যমের ওপরও ভরসা করছেন তারা। কিন্তু এই মাধ‌্যম করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর হলেও ঝুঁকি বাড়ছে অন‌্য ক্ষেত্রে। এই আধুনিক মাধ‌্যমটিতে কেনাকাটা করতে গিয়ে অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। প্রতারকরাও নিত‌্যনতুন কৌশল নিয়ে হাজির হচ্ছে সাধারণ মানুষের সামনে। 

ক্রেতাদের অভিযোগ, অধিকাংশ অনলাইন প্ল‌্যাটফর্ম যথাসময়ে পণ্য পৌঁছায় না। তাদের দেওয়া পণ‌্যের গুণগতমানও থাকে না। মূল্য বেশি রাখে।  এক পণ্য দেখিয়ে অরেক পণ্য দেয়। নষ্ট-ছেঁড়া-পচা পণ্য গছিয়ে দেয়। এছাড়া, আকার ও পরিমাণ ঠিকমতো না দেওয়ার পাশাপাশি ভেজাল পণ্যও সরবরাহ করে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান। 

অনলাইনে কেনাকাটা করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন এমন একজন শিক্ষক মাইনুল এইচ সিরাজী। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘না দেখে পণ্য কেনা মানে ঠকার আশঙ্কা। অনলাইনে পণ্য কিনে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, ফেসবুক ব্যবহার করে যে কেউ অনলাইন বিক্রেতা হয়ে যেতে পারেন। এই ক্ষেত্রে তদারকি ও নজরদারি দরকার বলে মনে করি।’

প্রায় একই অভিযোগ রাজধানীর গৃহিনী মাফরুহা অদ্বিতীরও। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে চাল-ডালসহ সব প্রয়োজনীয় বাজার করি অনলাইনে। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা ভালোর সঙ্গে খারাপ পণ্যও মিশিয়ে দেয়। খুব কম প্রতিষ্ঠানেরই কথায়-কাজে মিল থাকে।’

অনলাইনে কেনাকাটা করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে জানালেন আইনজীবী কল্যাণী গুহ দত্ত। তিনি বলেন, ‘আইনজীবী হয়েও কয়েকবার ধরা খেয়েছি। কাপড় কিনে এক সপ্তাহও পরতে পারিনি, ছিঁড়ে গেছে।’
 
ক্রেতাদের বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে ‘ইভ্যালি.কম লিমিটেড’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. রাসেল বলেন, ‘যেকোনো ই-কমার্স লেনদেনে বিশ্বব্যাপী ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমপ্লেইন গ্রহণযোগ্য। আলীবাবার মতো প্রতিষ্ঠানেও কমপ্লেইন আছে। এটা কখনো শূন্য শতাংশ হবে না। তবে, পণ্যের ব্যাপারে কমপ্লেইন আর প্রতারণা দুটো আলাদা জিনিস। এ ব্যাপারে ই-কমার্সগুলোর আরও বেশি পরিমাণে পেশাদার হতে হবে।’
 
ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী এই বিষয়ে জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের পণ্যের মান নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। তবে, নানা কারণে ডেলিভারি কখনো কখনো সঠিক সময়ে দিতে পারি না, এটা ঠিক। কোনো কারণে ডিলিভারি দেওয়ার সময় বা পরে, কোনো পণ্য নিয়ে ক্রেতা কমপ্লেইন করলে পণ্য বদলে দেই। ক্রেতা চাইলে পুরো মূল্যও ফেরত দেই।’

একই অভিযোগের বিষয় স্বীকার করেছেন ‘চালডাল’-এর চিফ অপারেটিং অফিসার জিয়া আশরাফ। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার অর্ডার সরবরাহ করে থাকি। হঠাৎ কোনো কারণে অর্ডারের সংখ্যা বেড়ে গেলে বা ডেলিভারিম্যানের গাফিলতিতেও ডেলিভারিতে দেরি হতে পারে।’ 

ঠিক সময়ে বই সরবরাহ না করা, কখনো বা একেবারেই সরবরাহ না করার অভিযোগ স্বীকার করেছেন রকমারি.কমের জনসংযোগ কর্মকতা কিংকর হালদার মিশু। তিনি বলেন, ‘বই ডেলিভারি করতে আমাদের ঢাকার মধ্যে ৩ থেকে ৫ দিন এবং ঢাকার বাইরে ৫ থেকে ৭ দিন সময় লাগে। কারণ পাঠকের অর্ডার পাওয়ার পর বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে বই সংগ্রহ করতে হয়। তাই দেরি হয়। পোস্ট অফিসের মাধ্যমে কাউকে বই পাঠালে আরও বেশি সময় লাগে। তবে, এই দেরি হওয়ার অভিযোগ আমাদের মোট অর্ডারের দশমিক শূন্য তিন শতাংশ।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (তদন্ত) শাহনাজ সুলতানা বলেন, ‘এ রকম অভিযোগ পেলে আমরা তা আমলে নেই। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেই। নির্দিষ্ট দিনে বাদী-বিবাদীকে হাজির থাকতে বলি। এরপর তাদের উপস্থিতিতে শুনানি হয়। শুনানিতে দোষী প্রমাণিত হলে তার জরিমানা করা হয়।’

কেনাকাটা ছাড়াও সম্প্রতি সামা‌জিক যোগা‌যোগ মাধ্য‌মে বিভিন্ন কোম্পানির নাম ব্যবহার করে নতুন কৌশলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে প্রতারক চক্র। এসব চক্র মানুষকে বিভ্রান্ত করতে প্রচার করছে লোভনীয় বিজ্ঞাপনও। এসব প্রচার করা পো‌স্টে ‘প্রতি‌দিন বিনা পরিশ্রমে ১ হাজার ২০০ টাকা পাওয়ার কথা’ও বলছে প্রতারকরা। কোথাও কোথাও রে‌জি‌স্ট্রেশন কর‌লেই ৫ হাজার টাকা দেওয়ার লোভও দেখা‌নো হ‌চ্ছে। তাদের এই ফাঁদে পড়ে অনেকেই রে‌জি‌স্ট্রশন ক‌রছেন। নিজে টাকা না পেয়েও তাদের শর্ত মানতে গিয়ে  টাকা প্রা‌প্তির কথা বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে প্রচারও করছেন ভুক্তভোগীরা। শেষ পর্যন্ত কা‌ঙ্ক্ষিত টাকা পাচ্ছেন না তারা।

অনলাইনে এইসব প্রতারণা বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, জানতে চাইলে সাইবার অপরাধ নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তা সোহেল আহমেদ বলেন, ‘কোনো কোম্পানির নাম বললে সেই কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়ে লেনদেন করবেন। অস্বাভাবিক কোনো প্রস্তাব পেলে তা এড়িয়ে যাবেন। কেউ প্রতারণার ফাঁদে পড়ে লেনদেন করে ফেললে আপনার নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে প্রমাণসহ অভিযোগ করুন। পুলিশ প্রতারকদের ধরার ব্যাপারে সহযোগিতা করবে।’

/এনই/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়