ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

হেফাজতের তাণ্ডবের ৮ বছর, গতি এসেছে মামলায়

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১২, ৫ মে ২০২১   আপডেট: ১৫:৫০, ৫ মে ২০২১
হেফাজতের তাণ্ডবের ৮ বছর, গতি এসেছে মামলায়

ফাইল ছবি

কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। হেফাজত নেতারা নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দাবি করলেও বারবার রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়েই মাঠ গরম করে। ২০১৩ সালের ৫ মে সারা দেশ থেকে হেফাজতের নেতাকর্মীরা ঢাকার মতিঝিলে মহাসমাবেশে যোগ দেয়। সেদিন মহাসমাবেশ সন্ধ্যার আগে শেষ করার কথা থাকলেও হেফাজত নেতারা সরকার পতনের লক্ষ্যে সমাবেশটি মহাঅবস্থানে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে।  কিন্তু সরকার সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ায় সেদিন তারা ব্যর্থ হয়।

এদিকে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসে রাজধানীসহ সারাদেশে সহিংসতা চালায় হেফাজত।  এ ঘটনার পর হেফাজতের পুরনো মামলা নিয়ে নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।  অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  গ্রেপ্তার করা হয় একের পর এক কেন্দ্রীয় নেতাকে। গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের অধিকাংশ ২০১৩ সালের ৫ মে তাণ্ডবের মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হয়।  তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

জানা যায়, ২০১৩ সালে রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছিলো হেফাজতে ইসলাম। ওই বছরের ৫ মে ঢাকার ছয়টি প্রবেশমুখ অবরোধ করে মতিঝিলের শাপলা চত্তরে অবস্থান নেয় সংগঠনটি। এ সময় হেফাজতের অসংখ্য নেতাকর্মী সমর্থক বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এর ফলে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে শত শত যানবাহন ভাঙচুর এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।

জানা যায়, হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় ঢাকাসহ পাঁচ জেলায় মোট ৮৩টি মামলা হয়।  যাতে আসামি করা হয় ৮৪ হাজার ৯৭৬ জনকে। আসামির তালিকায় ৩ হাজার ৪১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। আসামিদের মধ্যে হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, নেজামে ইসলাম, খেলাফত মজলিশ, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীদের নামও রয়েছে।  এসব মামলার মধ্যে ১৫ মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে কেবল বাগেরহাটের একটি মামলার বিচার শেষ হয়েছে, তাতে মামলার রায়ে সব আসামি খালাস পেয়েছে।

জানা যায়, রাজধানীর রমনা, মতিঝিল, ওয়ারী, তেজগাঁও এলাকায় মোট ৫৩টি মামলা হয়েছিল।  তার মধ্যে চারটির অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, বাকি ৪৯টি মামলা তদন্তাধীন।

পল্টন ও মতিঝিল থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখা থেকে জানা গেছে, পল্টন ও মতিঝিল থানায় হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন ও পুরাতন মিলে মোট ৪৬ টার বেশি মামলা রয়েছে। সবগুলো মামলা চলছে।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান জানান, হেফাজতে ইসলামের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে রাজধানীতে ৫৩টি মামলা হয়। এর মধ্যে চারটি মামলার চার্জশিট দাখিল হয়েছে। ৪৯টি মামলার এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে চার্জশিট দাখিল করা মাত্র রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলা দ্রুত বিচার শেষ করার চেষ্টা করবো।

এদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন মেসবাহ জানান, আমার কাছে হেফাজতে ইসলামের রাজধানীর বিভিন্ন থানার ৩৫টি মামলা আছে।  এর মধ্যে ৪টা অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ।  রাষ্ট্রপক্ষেও উচিত উদ্যোগ নিয়ে সবগুলো মামলার দ্রুত অভিযোগপত্র দাখিল করা। এতে আসামিদের হয়রানি কম হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা অবরোধ করে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা।  সেদিন রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও আরামবাগসহ আশপাশের এলাকায় যানবাহন ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে সংগঠনটি। এ ঘটনায় সংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পল্টন, মতিঝিল থানাসহ বিভিন্ন থানায় মামলা করা হয়।

মামুন/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়