ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পরিবার হারানো সেই মীমের দায়িত্ব নিলেন সাংবাদিক এনায়েত ফেরদৌস

তানজিনা ইভা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৫, ৫ মে ২০২১   আপডেট: ১৬:২৯, ৫ মে ২০২১
পরিবার হারানো সেই মীমের দায়িত্ব নিলেন সাংবাদিক এনায়েত ফেরদৌস

মীম আক্তার ও এনায়েত ফেরদৌস

মীম আক্তার। বয়স ৯। মাদারীপুরের শিবচরে নৌ দুর্ঘটনায় মা-বাবা ও দুই বোনকে হারিয়েছে সে। অসহায় মীমের পাশে দাঁড়িয়েছেন সাংবাদিক এনায়েত ফেরদৌস। নিয়েছেন তার সার্বিক দায়িত্ব।

মীমের বাড়ি খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার পারখালী গ্রামে। সাংবাদিক এনায়েত ফেরদৌসও একই এলাকার। অসহায়, অসুস্থ, দুস্থ ও গরিব মানুষের জন‌্য আজীবন কাজ করে যাচ্ছেন এনায়েত ফেরদৌস। এলাকায় লোকজন তাকে ভালোবেসে মানবতার ফেরিওয়ালা নাম দিয়েছেন। প্রতিবেশীরা জানান, ভীষণ সজ্জন এবং দিল দরিয়ার মানুষ সাংবাদিক এনায়েত ফেরদৌস।

বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন তিনি। আকস্মিক দুর্ঘটনায় অসহায় হয়ে পড়া শিশু মীমের দায়িত্ব নেওয়া প্রসঙ্গে কথা হয় এই সাংবাদিকের সঙ্গে।

রাইজিংবিডি: আপনি মীমের পাশে কেন দাঁড়ালেন?

এনায়েত ফেরদৌস: প্রথমত, এটা মানবিকতার বিষয়। শুধু মীমকে নয়, আমার এলাকার গরিব, এতিম, অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। আমি চাই, আমার এলাকার একজন মানুষও যেন অভুক্ত না থাকেন। কারও বাচ্চা যেন দুধের জন‌্য কষ্ট না পায়। বিনা চিকিৎসায় কেউ যেন মারা না যান। কিংবা কারও ঘরে যেন বর্ষার পানি না যায়। আর মীম তো আমার এলাকায় মেয়ে। নৌ দুর্ঘটনায় সে সব হারিয়েছে। এমন অসহায় একটা মেয়ের দায়িত্ব আমি কাঁধে তুলে নিয়েছি। তাকে আমি আমার সন্তানের মতো মানুষ করতে চাই। 

সাংবাদিক এনায়েত ফেরদৌসের সাক্ষাৎকার নেন রাইজিংবিডির জ‌্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক তানজিনা ইভা 

রাইজিংবিডি: মীমকে কী ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে?

এনায়েত ফেরদৌস: আমি চেয়েছিলাম মীমকে আমার বাসায় রেখে আমার একমাত্র ছেলে যেভাবে মানুষ হচ্ছে, তাকেও সেভাবে মানুষ করতে। কিন্তু তার স্বজনরা চেয়েছেন তাদের কাছে রাখতে। মীম যেখানে স্বাচ্ছন্দ‌্যে থাকতে পারবে সেখানে থাকবে। তার প্রতিদিনের খাবার থেকে শুরু করে তার পোশাক, পড়ালেখার খরচ যা যা লাগে সব আমি দেবো। তার বিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও আমার। তাকে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই। তার যে মা-বাবা নেই সেই অভাব যেন বুঝতে না পারে, আমি সেই চেষ্টা করবো। 

রাইজিংবিডি: কোনো আইনি প্রক্রিয়ার মাধ‌্যমে কি তার দায়িত্ব নিতে হচ্ছে?

এনায়েত ফেরদৌস: না। কোনো বাচ্চাকে দত্তক নিতে হলে আইনি প্রক্রিয়া মানতে হয়। কিন্তু আমার জানা মতে, এখানে সাহায‌্য করার জন‌্য কোনো আইনি প্রক্রিয়া মানতে হবে না। আর যেহেতু মীম তার স্বজনদের কাছেই থাকছে। 

রাইজিংবিডি: আপনি কী এর আগেও এমন কাউকে সহযোগিতা করেছেন? 

এনায়েত ফেরদৌস: আমার এলাকার একটা মেয়ের হার্টের সমস্যার চিকিৎসা করাতে পারছিল না। তাকে টাকা দিয়ে ভারত পাঠিয়েছি। কিছু দিনের মধ্যে এলাকার ১৬ জন অসহায় মানুষকে আমি ঘর তুলে দিয়েছি। করোনা সংক্রমণের পর প্রথম ২ মাস আমি প্রতিদিন অসহায় মানুষকে সাহায‌্য করেছি। এলাকায় আমার ছেলের নামে ইভান স্পোর্টিং ক্লাব করেছি। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আজম স্বপন আমার ছোট ভাই। সেই আমার হয়ে এসব সাহায‌্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। আর প্রায় প্রতি মাসেই আমি ঢাকা থেকে গ্রামে যাই। আর যখনই গ্রামে যায় কমপক্ষে ১০ জন মানুষকে সাহায‌্য করি।

রাইজিংবিডি: ভবিষ‌্যতে বড় কিছু করার পরিকল্পনা আছে কি না? 

এনায়েত ফেরদৌস: আমার এলাকার এমন কোনো মসজিদ, মাদ্রাসা নেই যেখানে আমি সাহায‌্য করিনি। কিছুদিন আগে রূপসায় চাঁদপুর কলেজে একটি শহীদ মিনার গড়েছি আমরা। সৃষ্টিকর্তা আমাকে ভালো রেখেছেন। আমি আমার কাজ দিয়ে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকতে চাই। আমার বাবার নামে একটি এতিমখানা ও একটি মাদ্রাসা করতে চাই। গঠন করতে চাই একটি ট্রাস্টি বোর্ড। 

রাইজিংবিডি: মীমের বিষয়ে আপনার পরিবারের সদস‌্যদের বক্তব‌্য কী?

এনায়েত ফেরদৌস: এই বিষয়ে আমার পরিবারের সবার সম্মতি আছে। এসব ভালো কাজের জন‌্য টাকাটা হয়তো আমি দেই। কিন্তু আমার পাশে থেকে সবচেয়ে অনুপ্রেরণা দিয়ে যায় আমার স্ত্রী। 

উল্লেখ‌্য, গত ১ মে রাতে খুলনায় মীমের দাদি মারা যান। সেই খবর পেয়ে পরিবারের সবাই ঢাকা থেকে খুলনায় যাচ্ছিলেন। কিন্তু পদ্মা নদীতে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় দাদির লাশ দাফনের আগে পরিবারের সবাইকে হারায় মীম। এই দুর্ঘটনায় নিহত হন মীমের বাবা মনির মিয়া (৩৮), মা হেনা বেগম (৩৬), বোন সুমী আক্তার (৫) ও রুমি আক্তার (৩)। বেঁচে আছে শুধু মীম।

গত ৩ মে সকালে শিবচর উপজেলায় বাংলাবাজার ফেরিঘাটে বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়। এতে প্রাণ হারান ২৬ জন। 

## পরিবারের সবাইকে হারিয়েছে শিশু মীম 

## থামছে না ছোট্ট মীমের কান্না

## স্পিডবোটের নিবন্ধন ছিল না, নেই চালকের দক্ষতা সনদও 

## পদ্মায় বাল্কহেড ও স্পিডবোট সংঘর্ষে নিহত ২৬

## পদ্মায় নিহতদের প্রত্যেক পরিবার পাবে ২০ হাজার টাকা 

## পদ্মায় নৌ দুর্ঘটনা : ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি

## পরিবারের সবাইকে হারিয়েছে শিশু মীম 

## পদ্মায় নৌ দুর্ঘটনা: স্পিডবোটের মালিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়