ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পুণ্যময় হোক ঈদুল ফিতর

এমদাদুল হক তাসনিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪০, ১৩ মে ২০২১   আপডেট: ১৫:৪৭, ১৩ মে ২০২১
পুণ্যময় হোক ঈদুল ফিতর

‘ঈদুল ফিতর’ অর্থ হচ্ছে উৎসব, আনন্দ, খুশি, রোজা ভেঙে ফেলা ইত্যাদি। একমাস সিয়াম সাধনার পর মুসলমানগণ শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখে রোজা ভেঙে আল্লাহর বিশেষ শুকরিয়াস্বরূপ যে আনন্দ-উৎসব পালন করেন- শরিয়তের পরিভাষায় তাই ঈদুল ফিতর।

ঈদুল ফিতর হলো মুসলমানদের জন্য আনন্দের দিন। এদিন সবাই সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিলিত হয়। ঈদগাহে কোলাকুলি, সৌহার্দ, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ঈদের আনন্দ সবার জন্য হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি তারাই বেশি অনুভব করেন যারা একমাস সিয়াম সাধনা করেছেন। তবে বল্গাহীনভাবে ঈদের আনন্দে লিপ্ত হওয়া যাবে না যাতে আমলগুলো ছুটে যায়।

ঈদের রাতের আমল: যে সন্ধ্যায় ঈদের চাঁদ দেখা যায় সে রাতকে ‘ঈদের রাত’ বলা হয়। এ রাতের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলতের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবু উমামা রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে আল্লাহর নিকট সাওয়াব প্রাপ্তির নিয়তে ইবাদত করবে তার হৃদয় সেদিনও জীবিত থাকবে যেদিন সকল হৃদয়ের মৃত্যু ঘটবে। (ইবনে মাজাহ, আল মুজামুল আওসাত)। হযরত মুআজ ইবন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি পাঁচটি রাত (ইবাদতের মাধ্যমে) জাগ্রত থাকবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। এক. জিলহজ মাসের ৮ তারিখ রাত। দুই. জিলহজ মাসের ৯ তারিখ রাত। তিন. ঈদুল আজহার রাত। চার. ঈদুল ফিতরের রাত এবং পাঁচ. ১৫ শাবানের রাত। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব)।

ঈদের দিনের সুন্নতসমূহ: ঈদুল ফিতরের দিন নিম্নলিখিত কাজগুলো সম্পাদন করা সুন্নত। ১. নিজ মহল্লার মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করা ২. মিসওয়াক করা ৩. গোসল করা ৪. খুশবু ব্যবহার করা ৫. সদকাতুল ফিতর নামাজের পূর্বেই আদায় করা ৬. সাধ্যানুযায়ী উত্তম পোশাক পরিধান করা ৭. খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করা ৮. ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া ৯. বিজোড় সংখ্যক খেজুর খাওয়া ১০. সামর্থ অনুযায়ী অধিক পরিমাণ দান-সদকা করা ১১. আগেভাগে ঈদগাহে যাওয়া ১২. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া ১৩. ঈদগাহে এক পথে যাওয়া এবং অপর পথে ফিরে আসা ১৪. ঈদগাহে যাওয়ার সময় চুপে চুপে তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা। তাকবিরে তাশরিক হলো, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, অল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ’ (ফাতওয়া ও মাসাইল)।

ক্ষমা ও পুরস্কারপ্রাপ্তির ঈদ: হযরত আউস আল আনসারি রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঈদুল ফিতরের দিন সকালে সকল ফেরেশতা রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান এবং মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন, হে মুসলিমগণ! তোমরা দয়ালু প্রতিপালকের দিকে এগিয়ে আসো। উত্তম প্রতিদান ও বিশাল সাওয়াব প্রাপ্তির জন্য এগিয়ে আসো। তোমাদের রাত্রিবেলার নামাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তোমরা সে নির্দেশ মেনে নামাজ পড়েছো। তোমাদেরকে দিনগুলোতে রোজা রাখতে বলা হয়েছিল, তোমরা সে নির্দেশও পালন করেছো, একমাস রোজা রেখেছো। গরীব-দুঃখীদের পানাহারের মাধ্যমে নিজ প্রতিপালককে তোমরা পানাহার করিয়েছো। এখন নামাজ পড়ার মাধ্যমে সেগুলোর প্রতিদান ও পুরস্কার গ্রহণ করো। ঈদের নামাজ পড়ার পর ফেরেশতাদের মাঝে একজন ঘোষণা দেন, শোনো, নামাজ আদায়কারীরা! তোমাদেরকে মহান রাব্বুল আলামিন মাফ করে দিয়েছেন। সকল গুনাহ থেকে মুক্ত অবস্থায় নিজ নিজ আবাসে ফিরে যাও। আর শোনো! এ দিনটি হচ্ছে পুরস্কার প্রদানের দিন। আকাশে এ দিনের নামকরণ করা হয়েছে ‘পুরস্কারের দিন’। (আল মুজামুল কাবির লিত তাবারানি)।

ঈদুল ফিতরের মাধ্যমে সমাপ্ত হয় একমাস সিয়াম সাধনা। তা বয়ে আনে স্বচ্ছ ও নির্মল আনন্দ। প্রকৃত রোজাদারদের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘোষণা হলো, ‘যারা যথাযথভাবে সিয়াম সাধনা করে তারা ঈদের নামাজ শেষে নবজাতক শিশুর ন্যায় পাপমুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের জীবনে সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন’। মহান আল্লাহ আমাদেরকেও ক্ষমাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।

নির্বাহী সম্পাদক : মাসিক ইসলামী বার্তা, অর্থ সম্পাদক : বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম

ঢাকা/মারুফ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়