ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

এলো খুশির ঈদ

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪১, ১৩ মে ২০২১   আপডেট: ১১:০৭, ১৭ মে ২০২১
এলো খুশির ঈদ

বছর ঘুরে আবার এসেছে ঈদুল ফিতর। ঈদ মানেই উৎসব। ঈদ মানেই আনন্দ। দীর্ঘ এক মাস সংযম ও ত্যাগের সাধনার পর ঘরে ঘরে, জনে জনে আনন্দ-খুশির বার্তা বয়ে নিয়ে এসেছে এই ঈদ। 

মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার শেষে পশ্চিমাকাশে শাওয়াল মাসের বাঁকা চাঁদ উদিত হওয়ার মধ্য দিয়ে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে ঈদুল ফিতরের আবাহন- ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’।

মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের দিনটি অশেষ তাৎপর্য ও মহিমায় অনন্য। রোজাদার যে পরিচ্ছন্নতার ও পবিত্রতার সৌকর্য দ্বারা অভিষিক্ত হন, যে আত্মশুদ্ধি, সংযম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, উদারতা, বদান্যতা, মহানুভবতা ও মানবতার গুণাবলি দ্বারা উদ্ভাসিত হন, এর গতিধারার প্রবাহ অক্ষুণ্ন রাখার শপথ গ্রহণের দিন হিসেবে আসে ঈদুল ফিতর। দিনটি ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা ও ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাইকে এক কাতারে শামিল করার চেতনায় উজ্জীবিত করে, কল্যাণের পথে ত্যাগ ও তিতিক্ষার মূলমন্ত্রে দীক্ষিত করে। ঈদুল ফিতরের মূল তাৎপর্য বিভেদমুক্ত জীবনের উপলব্ধি। 

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ির কারণে দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে দিনযাপনই যেখানে কঠিন হয়ে উঠেছে, সেখানে ঈদ উত্সব উদযাপন তাদের কতটাইবা আনন্দ দেবে? এত কিছুর পরও পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ঈদ উদযাপন করতে অনেকেই ছুটে গেছেন আপনজনের কাছে। বাস, ট্রেন বন্ধ থাকার পরও বাড়িমুখী জনস্রোত ছিল অভাবনীয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে আবেগে ঈদগাহে এবার কোলাকুলি না করাই হবে শ্রেয়। এতে বিপদে পড়তে পারেন আপনারই অতি আপনজন। 

আবার করোনা মহামারী মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনেকেই রয়ে গেছেন নিজ নিজ কর্মস্থলে। ঘরে বসেই তারা কাটাবেন ঈদ। মিলবে না দূরে থাকা প্রিয়জনের স্নেহমাখা সাহচর্য। অনেকের কাছেই ঈদ হবে নিরানন্দের। গত বছরের মতো এবারও করোনায় অবরুদ্ধ দেশবাসী। এ অবস্থায় অনেকেই এবারের ঈদ ভার্চুয়ালি উদযাপন করবেন । বাড়ির চার দেওয়ালের ভেতরে থেকে ভিডিও কল করেই সারবেন ঈদে প্রিয়জনের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পালা। কিংবা অনলাইন প্ল্যাটফরমে চলবে গ্রুপ আড্ডা। প্রযুক্তির কল্যাণে প্রিয় মানুষের সাথে দেখা হবে ভিডিও কলে। করোনাকালে এতেই খুঁজে নিতে হবে ঈদের আনন্দ।

করোনাকালের চরম তিক্ততা ও বাধার মধ্যেও যখন রেডিও টেলিভিশনে বেজে উঠবে ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ তখন মনে অজানা আনন্দের ঢেউ খেলে যাবে। ঘরে ঘরে রয়ে যাবে আনন্দের বন্যা। 

করোনাকাল এক অচেনা ঈদের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে আমাদের। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা নামাজ শেষে পরম করুণাময়ের কাছে এই দুঃসহ জীবন থেকে মুক্তির দোয়া কামনা করবেন নিশ্চয়ই। 

পবিত্র রমজান মিতাচার অনুশীলনের যে সুযোগ নিয়ে আসে, তার তুলনা হয় না। রোজা শুধু ইন্দ্রিয়ের কৃচ্ছ্রসাধনা নয়, আত্মিক বিশুদ্ধতা অর্জনেরও পথ দেখিয়ে দেয়। তাই ঈদুল ফিতরের উৎসব কেবল ভোজনের মাধ্যমে ইন্দ্রিয়তৃপ্তির উৎসব নয়, বিশুদ্ধ আত্মা নিয়ে জীবনকে নতুন করে সাজানোর অঙ্গীকারেরও উৎসব। পরস্পরের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হয়ে ওঠার এক মহান উপলক্ষ ঈদ। ঈদ আমাদের সামষ্টিক জীবনে যে মিলন ও শুভবোধের চর্চার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, তা সঞ্চারিত হোক সবার প্রতিদিনের জীবনযাপনে। ঈদের আনন্দ হোক সর্বজনীন। ঈদ উৎসবের আনন্দে বাঙালির চেতনা ও মনন রঙিন হয়ে উঠুক। সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়