ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হোটেল বুকিং হয়নি অনেকের, দিশেহারা সৌদিগামীরা

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪২, ২১ মে ২০২১   আপডেট: ১৮:৫১, ২১ মে ২০২১
হোটেল বুকিং হয়নি অনেকের, দিশেহারা সৌদিগামীরা

সৌদি আরব গমনেচ্ছু বাংলাদেশি (ফাইল ফটো)

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে সৌদি আরব সরকারের আরোপ করা নতুন বিধি-নিষেধের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সৌদিগামী প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশটিতে পৌঁছার পর নিজ খরচে সাত দিন কোয়ারেন্টাইনের জন্য হোটেল বুকিংয়ে সহযোগিতা না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেকে। শুক্রবার (২১ মে) বিকেলেও সৌদি এয়ারলাইন্সের অধিকাংশ যাত্রীর হোটেল বুকিং হয়নি।

হোটেল বুক করতে না পারায় অনেকেরই ফ্লাইট মিস হয়েছে। কারো বা শেষ হয়েছে করোনা সনদের মেয়াদ। এদিকে, নতুন শর্ত আরোপের পর এয়ারলাইন্সগুলোর ফ্লাইট শিডিউল এলোমেলো হয়ে পড়েছে। জটিলতার কারণে ২৪ মে পর্যন্ত ফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

বিদেশিদের সৌদি ভ্রমণের ক্ষেত্রে সম্প্রতি বেশকিছু শর্ত আরোপ করেছে সে দেশের সরকার। দেশটিতে ভ্রমণ করতে যাওয়া সব বিদেশি নাগরিককে বাধ্যতামূলকভাবে কোভিড চিকিৎসা সংক্রান্ত ইনস্যুরেন্স করতে হবে। এই ইনস্যুরেন্সের আওতায় হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ১৪ দিনের খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়া, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সগুলোকে। সৌদি গমনেচ্ছু ব‌্যক্তিদের ভ্রমণের প্রথম ও সপ্তম দিন পিসিআর টেস্টের ব্যবস্থাও এয়ারলাইন্সকে করতে হবে বলে শর্ত দেওয়া হয়েছে। ফ্লাইটের যাত্রীদের তালিকাও এয়ারলাইন্সকে যাত্রার চার দিন আগে দেশটির কর্তৃপক্ষকে জমা দিতে হবে বলে শর্ত দিয়েছে সৌদি আরব। নতুন এ শর্ত কার্যকর হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে।

এসব শর্তে খরচের পাল্লাও ভারি হচ্ছে সৌদিগামীদের জন্য। ঢাকা থেকে সৌদি আরবের দাম্মাম, রিয়াদ ও জেদ্দা রুটে চলাচল করে বিমান। আটটি রুটে চলে সৌদি এয়ারলাইন্স। এসব রুটের একমুখী প্লেন (ওয়ান ওয়ে) ভাড়া সর্বনিম্ন ৪৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫৭ হাজার টাকা। সৌদি সরকার নির্ধারিত হোটেলে কোয়ারেন্টাইনের খরচ ৬৫ হাজার ৭০০ টাকা, যা টিকিটের দামের চেয়েও প্রায় ২০ ভাগ বেশি। একজন প্রবাসীকে সৌদি পৌঁছে নিজ খরচে এক বার করোনাভাইরাসের টেস্ট করতে হবে। কোয়ারেন্টাইনের ষষ্ঠ দিন আবার টেস্ট করাতে হবে। প্রতিবার ১২৯ সৌদি রিয়াল করে বাংলাদেশিদের দুই টেস্টে খরচ হবে প্রায় ৬ হাজার টাকা।

জানা গেছে, শর্ত পূরণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর ও কারওয়ান বাজার এলাকায় অবস্থিত সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের অফিসে ভিড় করেন প্রবাসী কর্মীরা। যারা টিকিট কেটেছিলেন, তাদের অনেকেই শর্ত পূরণ করতে না পারায় বৃহস্পতিবার দেশটির পথে উড়াল দিতে পারেননি। এমনকি শুক্রবার বিকেলে সৌদি এয়ারলাইন্সের জেদ্দাগামী ফ্লাইটের অধিকাংশ যাত্রীর হোটেল বুকিং হয়নি। এ বিষয়ে সৌদি এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ে গিয়েও সমাধান পাচ্ছেন না যাত্রীরা। তাদের অভিযোগ, কোথায় হোটেল বুকিং দেওয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ে ছোটাছুটি করছেন তারা।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘ফ্লাইট শুরুর চার দিন আগে যাত্রী তালিকা দেওয়া ও হোটেল বুকিংয়ের বিষয়ে আমরা কাজ করছি। বিশেষ করে, সৌদি আরবে অবস্থিত বিমান বাংলাদেশের স্টেশনগুলোর কর্মকর্তারা হোটেল বুকিংয়ের চেষ্টা করছেন। আমরা আশা করছি, একটি সমাধানে আসতে পারব।’

এদিকে, সৌদি আরব থেকে যারা বাংলাদেশে আসতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিটি কেটেছেন, তারাও বিপত্তিতে পড়েছেন। যাদের আর্থিক সামর্থ্য ভালো, তারা অন্য এয়ারলাইন্সের টিকিট কেটে দেশে আসতে পারছেন। যাদের সেই সামর্থ্য নেই, তারা অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।

এর আগে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ রুখতে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করেছিল সৌদি আরব। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ছিল ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। ফ্লাইট না থাকায় ছুটিতে আসা প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশকে অনিশ্চয়তায় পড়তে হয়। পরে সরকারের মধ্যস্থতায় সমস্যার সমাধান হয়। সৌদি সরকারের কঠিন শর্তে আবারও জটিলতা দেখা দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সৌদি আরবের তিনটি গন্তব্যে বর্তমানে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান। গন্তব্যগুলো হলো—রিয়াদ, দাম্মাম ও জেদ্দা। এই তিন গন্তব্যে সপ্তাহে ১৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান। এসব ফ্লাইট ২৪ মে পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। এর বাইরে মক্কা এবং মদিনাতেও বিমানের ফ্লাইট আছে। তবে, করোনা পরিস্থিতিতে এ দুই গন্তব্যে আপাতত ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ আছে।

ঢাকা/হাসান/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়