ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনাকালে সাদা ছত্রাক সংক্রমণ কী, কাদের হয়

এস এম ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৮, ২২ মে ২০২১   আপডেট: ১১:১৪, ২২ মে ২০২১
করোনাকালে সাদা ছত্রাক সংক্রমণ কী, কাদের হয়

কিছুদিন আগেও অনেক করোনা রোগী ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইনফেকশন বা কালো ছত্রাক সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে শোনা গিয়েছিল। সম্প্রতি চিকিৎসকেরা আরেকটি সংক্রমণ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। এবারেরটা সাদা ছত্রাক সংক্রমণ। ভারতে ইতোমধ্যে সাদা ছত্রাক সংক্রমণের কিছু রোগী শনাক্ত হয়েছে। চিকিৎসকেরা আশঙ্কা করছেন, সাদা ছত্রাক সংক্রমণ কালো ছত্রাক সংক্রমণের তুলনায় বেশি প্রাণঘাতী হতে পারে। এখানে এখনো পর্যন্ত সাদা ছত্রাক সংক্রমণ সম্পর্কে যা জানা গেছে তা তুলে করা হলো।

সাদা ছত্রাক সংক্রমণ কী?

সাদা ছত্রাক সংক্রমণ ও কালো ছত্রাক সংক্রমণ উভয়েই পরিবেশের এক ধরনের ছত্রাক দ্বারা সৃষ্টি হয়ে থাকে। এসব ছত্রাককে মিউকরমাইসেটিস বলে। কোভিড রোগীর শ্বাসগ্রহণের সময় মিউকরমাইসেটিস সহজেই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল তারা এসব ছত্রাকযুক্ত জিনিসের সংস্পর্শে এলে সহজেই সংক্রমিত হতে পারেন। বিশেষ করে যেসব কোভিড রোগীকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হচ্ছে তাদের এসব সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।.

ইতোমধ্যে জানা গেছে, কালো ছত্রাক সংক্রমণ বেশ বিপজ্জনক। কিন্তু সাদা ছত্রাক সংক্রমণের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, এটি কালো ছত্রাক সংক্রমণের চেয়েও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সংক্রমণটিতে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহে প্রচুর ক্ষতিসাধন হচ্ছে। মস্তিষ্ক, শ্বাসতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র, কিডনি, নখের বেড এবং এমনকি গোপনাঙ্গেও সাদা ছত্রাক সংক্রমণের বিধ্বংসী প্রভাব দেখা গেছে। 

কাদের ঝুঁকি বেশি?

চিকিৎসকদের মতে, যাদের ইমিউন সিস্টেম যত দুর্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের সাদা ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি তত বেশি।অন্যান্য অনেক সংক্রমণের মতো এই সংক্রমণেও দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের রোগীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এছাড়া যেসব কোভিড রোগীর অন্যকোনো রোগ রয়েছে অথবা ইমিউন সিস্টেমকে দমনকারী ওষুধ ব্যবহার করছেন তাদেরও সাদা ছত্রাক সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।

ডায়াবেটিস, ক্যানসার অথবা নিয়মিত স্টেরয়েড ব্যবহার করতে হয় এমন স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে সংক্রমণটিতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারী ও শিশুদেরও বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া যেসব রোগী অস্বাস্থ্যকর জিনিসের সংস্পর্শে আসেন অথবা দীর্ঘসময় অক্সিজেন সাপোর্টে থাকেন তাদেরও উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। হয়তো একারণে হাসপাতালে ভর্তিকৃত কোভিড রোগীদের মধ্যে ছত্রাক সংক্রমণের ঘটনা বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, হিউমিডিফাইয়ার বা অক্সিজেন সিলিন্ডারে অপরিশোধিত পানির (বা ট্যাপের পানি) ব্যবহারে রোগীদের ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

সাদা ছত্রাক সংক্রমণের উপসর্গ

এখনো পর্যন্ত শনাক্তকৃত সাদা ছত্রাক সংক্রমণের কেসে শ্বাসতন্ত্রীয় উপসর্গ বেশি দেখা গেছে, যা কোভিড-১৯ এর অনুরূপ।এখনো পর্যন্ত এই সংক্রমণ সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও অধিকাংশ চিকিৎসক ধারণা করছেন যে, ফুসফুস বা বুকের সাদা ছত্রাক সংক্রমণ গুরুতর পর্যায়ে চলে যেতে পারে। এর ফলে কোভিড রোগী কাশি, বুক ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গে ভুগতে পারেন। শ্বাসতন্ত্রে এই সংক্রমণের তীব্রতা সম্পর্কে নির্ভুল ধারণা পেতে চিকিৎসকেরা এক্স-রে বা চেস্ট স্ক্যান করতে পরামর্শ দিয়েছেন। ফুসফুস ছাড়াও মস্তিষ্ক, কিডনি, গোপনাঙ্গ, নখ ও শরীরের অন্যান্য অংশেও সাদা ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে। এই সংক্রমণের কিছু উপসর্গ কালো ছত্রাক সংক্রমণের অনুরূপ হতে পারে।

সাদা ছত্রাক সংক্রমণের চিকিৎসা

ভারতে যেসব কোভিড রোগীর মধ্যে সাদা ছত্রাক সংক্রমণ পাওয়া গেছে তাদেরকে অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। যেহেতু চিকিৎসা চলমান রয়েছে, তাই এসব ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে এখনই কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। কোনো কোনো চিকিৎসক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের মাধ্যমে সাদা ছত্রাক সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

পড়ুন: করোনাকালে কালো ছত্রাক সংক্রমণ কী, কাদের হয়

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়