ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে শহরগুলো

হাকিম মাহি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৪, ৭ জুন ২০২১   আপডেট: ১০:৫২, ৮ জুন ২০২১
বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে শহরগুলো

এই তো সেদিনকার কথা, অনেক আগ্রহ নিয়ে এসেছিলাম রাজধানী ঢাকায়। ভেবেছি, ছোট থেকে বড় হয়েছি পদ্মার পাড়ে। আটবার নদীতে ভেঙেছে বাড়িঘর। জন্মের পরে শুধু দুর্যোগ দেখেছি, কাদামাটি, বন্যার পানিতে ঘরদোর তলিয়ে যেতে দেখেছি, বালির নিচে ঘর চাপা পড়তেও দেখেছি। এটা শুধু আমার অভিজ্ঞতা নয়, আমার মতো নদীমাতৃক এই দেশের প্রায় মানুষকে এই দৃশ্য দেখতে হয়েছে।

যাই হোক, নিম্ন মানের জীবন অতিবাহিত করতে করতে একটা সময় স্বপ্ন দেখলাম শহরে যাবো, দেশের সবচেয়ে উন্নত শহর রাজধানী ঢাকায় যাবো, এত কষ্ট আর ভালো লাগে না। যেমন ভাবনা, সেই কাজ- এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে অনেক আগ্রহ নিয়ে চলে এলাম। বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সবাই বলাবলি করতে থাকলো-  আমাদের হাকিম মাহি ঢাকায় পড়তে গেছে। প্রতিবেশীরা বলতো, ও তো অনেক মেধাবী ছেলে, শহরেই তো পড়বে, গ্রামে তো কষ্ট অনেক। আরও অনেক কথা। প্রথম কয়েক দিন ভালোই কাটলো। শহরের বিভিন্ন জায়গায় যেতে থাকলাম, চিনতে থাকলাম, আর ধীরে ধীরে অপ্রিয় হতে থাকলো শহর।

একদিন গুলিস্তান থেকে হাঁটা শুরু করলাম সংসদ ভবনের দিকে যাবো। হাঁটছি ফুটপাত ধরে। গ্রামে থাকতে জানতাম, রাস্তা দিয়ে গাড়ি যায়, ফুটপাত দিয়ে মানুষ চলাচল করে, দোকান বসে মার্কেট প্লেসে, প্রস্রাব-টয়লেট সাড়ে বাথরুমে, ড্রেন দিয়ে ময়লা যায়। কিন্তু আমার সেই গ্রাম্য ধারণাটা হয়তো ভুল ছিল। আমি শহরে কয়েক ঘণ্টার যাত্রায় যা দেখলাম, তা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।

প্রথমে চোখে পড়লো হাইকোর্ট মোড়ে একটু পরপর অনেকেই দাঁড়িয়ে-বসে প্রস্রাব করছেন, ঘৃণায়-লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিলাম। ভাবলাম, এই লোকগুলোর কোনো লজ্জা নেই, রাস্তার পাশে মানুষের সামনে প্রস্রাব করছে! ভাবতে ভাবতে আমারও প্রস্রাবে ধরে বসলো। আমি কোথায় যাবো? কোনো উপায় না পেয়ে মৎস ভবনের পাশে শিল্পকলায় ঢুকে গেলাম প্রস্রাব করতে, জরুরত সেড়ে বের হলাম। 

আবার হাঁটছি, শাহবাগ মোড়ের আগেই রাস্তার উপর ময়লার ভাগাড়। এমন গন্ধ, সঙ্গে সঙ্গে আমার বমি শুরু হলো, পাশে থেকে এক লোক এসে আমাকে সুস্থ হতে সাহায্য করলেন। বললেন, বাবা এটা হলো আমাদের শহরের সবচেয়ে নামি-দামী জায়গা, এর আশেপাশে ভিআইপি থাকেন। আমি অবাক! শহরের রাস্তায় ময়লা, তাও আবার এত পঁচা! তাহলে মানুষজন এদিক দিয়ে কীভাবে চলাফেরা করেন? ভিআইপিদের নাকে কি এই গন্ধ যায় না? কোনো রকমে শাহবাগ পাড় হলাম।

সবার মুখে শুনেছি, এলিফ্যান্ট রোড অনেক উন্নত, আগ্রহ নিয়ে সেই রাস্তা দিয়ে হাঁটছি, আর এদিক-সেদিক তাকাচ্ছি, কত বাহারি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, কিন্তু সমস্যা হলো ফুটপাত দিয়ে হাঁটা যায় না, উঁচু-নিচু, ভাঙা, মাঝেমধ্যে সরু রাস্তা, মাথায় বিভিন্ন তারে বাড়ি খাই, রাস্তার পাশে ময়লা, প্রস্রাবের গন্ধ, আবার ফুটপাতে হকার বসেছেন। নিচের দিকে তাকাতে তাকাতে কাঙ্ক্ষিত রোড অতিক্রম করলাম কখন, ভাবতেও পারিনি। নিউ মার্কেটের দিকে যতই যাচ্ছি, ফুটপাত দিয়ে আর হাটঁতে পারছি না, ক্রমেই রাস্তার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। কী আর করা, হাঁটছি। হঠাৎ এক রিকশা পেছনে লাগিয়ে দিলো, ব্যথা তেমন পেলাম না, কিন্তু ময়লায় প্যান্ট জড়িয়ে গেলো।

কিছু বলতে পারলাম না, শুধু তাকিয়ে থাকলাম। ফুটপাত দিয়ে যেতে পারছি না হকারদের ভিড়ে। রাস্তা দিয়েও যেতে পারছি না গাড়ির জন্য, এত জ্যাম, মনে হচ্ছে পিপীলিকার চেয়েও ধীর গতিতে চলছে গাড়িঘোড়া। এক হকারকে বললাম, ভাই রাস্তার উপর কেন দোকান নিয়ে বসছেন, এগুলো কী ভাই? আমার দিকে তাকিয়ে সে চোখ রাঙাল! আমি চুপ হয়ে গেলাম। কথা বললে হয়তো মার খেতে হবে। পরে আর নিউমার্কেটের দিকে গেলাম না। হাঁটতে থাকলাম কলাবাগানের দিকে। কিছু দূর যেতে না যেতেই শব্দ পেলাম মোটরসাইকেলের। রাস্তায় জ্যাম দেখে তাড়াতাড়ি যেতে সে ফুটপাতে উঠেছে। থামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই রাস্তা থাকতে ফুটপাত দিয়ে গাড়ি চালান কেন? সে বললো, কথা না বলে সরেন, যেতে দেন। এত বেশি কথা কন কেন? আমি হতভম্ব! একি অরাজক পরিস্থিতি। দোষ কি আমি করলাম, নাকি সে!

জ্যৈষ্ঠ মাসের দুপুর। রোদের তাপে হাঁটতে পারছি না। কিছু দূর হাঁটি আর সবকিছু অবাক হয়ে দেখি। এক সময় সংসদ ভবনের সামনে এসে হাজির হলাম। দাঁড়িয়ে আছি, আমার মতো আরও অনেকেই আসছেন সংসদ ভবন দেখতে। কাছে যাওয়া যাবে না, দূর থেকেই দেখতে হবে, বললেন একজন নিরাপত্তাকর্মী। দেখছি, আর ভাবছি, এখান থেকেই আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ হয়। আরও কথা মনে মনে চিন্তা করলাম, ছাড়লাম এক দীর্ঘশ্বাস, যেন জীবনের ষোলআনা নিশ্বাসের বাতাসের সঙ্গে উড়ে গেলো।

গাছের নিচে বসে আছি, হঠাৎ ডান-বাম থেকে দুজন বোরকা পরা নারী আসলেন, তারা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, কী-রে লাগবে নাকি, চল বাসায় যাবো।  আমি বললাম, আমাদের বাসায় রান্নার বুয়া আছেন, আপনাদের প্রয়োজন নেই, ওরা হাসলো, বোকা ভেবে চলে গেলো।  কখন যে বিকেল হলো টের পেলাম না। রিকশা চেপে বসলাম ফার্মগেট যাবো। রিকশা চলছে, খামারবাড়ির মোড়ে যেতেই দেখি একটা রিকশায় একটি মেয়ে ও সম্ভবত তার মা যাচ্ছেন, হঠাৎ পাশে থেকে অন্য মোটরসাইকেলে থাকা ছিনতাইকারীরা রিকশায় চড়া মা-মেয়ের হাত থেকে ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে চলে গেলো চোখের পলকেই। আহা কী যে কান্নাকাটি! জিজ্ঞেস করলাম মেয়ের মাকে, এত কান্না করছেন কেন? মা বললেন, বাবা ওই ব্যাগে আমার স্বামীর ক্যানসারের ওষুধ আছে, মাত্র কিনে আনলাম আর ছিনতাই করে নিয়ে গেলো।  আমি আর টাকা পাবো কই?

সান্ত্বনা দেয়ার আর ভাষা খুঁজে পেলাম না। মনের অজান্তে আমারও কান্না চলে এলো। সেদিন আর ফার্মগেটে বেড়ানো হলো না। লোকাল বাসে চেপে বসলাম, বাসায় চলে যাবো। ঘামে ভিজে গেছি। গাড়িভর্তি মানুষ, বসে আছি যতজন, তারচেয়ে বেশি মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। অন্যের গায়ের ঘাম টপটপ করে আমার গায়েও পড়ছে। গাড়ি তার নিজস্ব গতিতে সামনের দিকে এগোচ্ছে। যতটা না আগায়, তার চেয়ে বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকে, একটু চলতে শুরু করলেই স্টপেজ ছাড়াই যাত্রী ওঠে আর নামে। যাত্রীর চাপ থাকা সত্ত্বেও যত্রতত্র গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে, এতে পেছনের গাড়িগুলোর ভোগান্তি বাড়ে। হর্ন বাজে ভুভুজেলার মতো, যানজট থেকে রক্ষা পেতে রোগী পরিবহনের অ্যাম্বুলেন্সগুলোর হর্নের শব্দ আরও বেড়ে যায়, এক রোগীর জন্য বিকট শব্দে রোগী হয় আরও শত শত সুস্থ মানুষ।

জ্যাম ছেড়েছে, কিছু দূর যেতেই আমাদের গাড়ি সার্জেন্ট মহোদয় ধরলেন, বললেন, গাড়ির কাগজ দেখাও। হেল্পার কাগজ নিয়ে নামলেন। ৩/৪ মিনিট পর ফিরে এলেন।  ড্রাইভারকে হেল্পার বলছেন, বস দুইশো গেলো, না হয় মামলা দেয়। ড্রাইভার বললেন, সমস্যা নাই, যা গেছে মালিকের গেছে। তুই গাড়ি জমা দিতে গিয়ে বলবি, সার্জেন্টকে সাড়ে তিনশো দিছি। আমি মনে মনে হাসছি। শালার চোরের উপর বাটপার বলে একেই।

বাসের জানালার পাশে বসেছি, এরই মধ্যে চোখ পড়লো একটি পিক-আপের দিকে, মনে হলো বাসা শিফট করছেন। পাশে থেকে একজন মুরুব্বি বলছেন, আহারে, বেচারা মনে হচ্ছে গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছেন। আমি শুধু শুনছি, কিছু বলছি না, হতেও পারে। ইতোমধ্যে বোনের বাসার সামনে গিয়ে বাস থামলো। নেমে বাসায় চলে গেলাম।  ততক্ষণে রাত নেমে এসেছে শহরে। কারো সঙ্গে কথা বললাম না। সোজা রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। বোন আর বোন জামাই বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছেন ড্রয়িং রুমে বসে।  তার মধ্যে ছিল, পাশের বাসার সাদিয়ারা কাল সকালে বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। সাদিয়ার বাবা সাধারণ একজন অফিসের কেরানি, বেতন আর বাড়ছে না, কিন্তু বাসাভাড়া প্রতিবছর জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। তাই, এখানে আর থাকতে পারবেন না। বাধ্য হয়ে শহর থেকে একটু বাইরে বাসা নেবেন, অফিস থেকে একটু দূরে, তাতে কি, ভাড়া তো একটু কমবে। কিন্তু রাস্তার ভোগান্তি তো বেড়ে যাবে তার।

কথাগুলো শুনতে শুনতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়লাম। কখন যে সকাল হলো টের পেলাম না। ঘুম থেকে উঠেই রওয়ানা করলাম ভার্সিটির উদেশ্যে। স্টপেজে এসে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি, কিছুক্ষণ পর পেয়েও গেলাম। কিন্তু সিট পেলাম না, দাঁড়িয়ে থাকাও প্রায় মুশকিল। বাঁদরের মতো ঝুলছি, আর ঘামের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি। হঠাৎ বৃষ্টি নেমে এলো, মুহূর্তেই শহর পরিণত হলো খাল-বিলে। প্লাবিত হলো মতিঝিলের প্রায় প্রতিটি অলিগলি। গ্রামের নালা-নর্দমার মতো পঁচা পানি উঠে এলো রাস্তায়। গ্রামের পঁচা পানিতে হয় পাট পঁচা গন্ধ অথবা কচুরিপানার পঁচা গন্ধ পাওয়া যায়, যা কিছুক্ষণ পর আর থাকে না, ধুয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু শহর আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। দেড়-দু’ঘণ্টার বৃষ্টিতে পানিতে ডুবে গেছে রাস্তাঘাট। মানুষের মল ভাসছে- অসহনীয় গন্ধ! গাড়ির ইঞ্জিন বৃষ্টির পানিতে বন্ধ হয়ে আছে। আমরাও গাড়ির মধ্যে আটকা পড়ে আছি, বের হতে পারছি না, বাসের মধ্যে পানি, ধারণা করলাম, বাস থেকে নামলে পানি হবে এক বুক। আবার হয়তো ম্যানহলে তলিয়ে যাবো।

ঢাকায় এসেছি প্রায় এক যুগ হতে চললো। যখন এসেছিলাম, তখন এতটা বাজে অবস্থা ছিল না, যতটা না এখন। তখন ভেবেছিলাম, ধীরে ধীরে আমরা নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো, আমাদের দেশের রিজার্ভ বাড়বে, তখন রাস্তাঘাট ভালো হবে, পরিচ্ছন্ন হবে শহর। দেশ এখন মধ্যম আয়ের হয়েছে, ভারত-পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে অর্থনীতিতে, কিন্তু শহরগুলোর মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে না। প্রতিবছর রাস্তা খোঁড়া হয়, ড্রেন বানানো হয়, কিন্তু পরের বছর বর্ষাকাল আসার আগেই যেই সেই অবস্থা! বাড়তে থাকে ভোগান্তি, শহরের উঁচু জায়গাগুলোও আজ এক যুগ পরে দেড়-দু’ঘণ্টার বৃষ্টিতে নর্দমায় পরিণত হয়; তলিয়ে যায়, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমন দৃশ্য শুধু ঢাকায় নয়- চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, খুলনা সব জায়গায়।

আজ থেকে আট-নয় বছর আগে প্রথম চট্টগ্রাম যাই, তখন ছিল জ্যৈষ্ঠ বা আষাঢ় মাস। আইইএলটিএস পরীক্ষা দিতে এসেছি। হঠাৎ দুপুরে বৃষ্টি, আমি বাসা নিয়েছিলাম আগ্রাবাদ হোটেলের পাশেই। কারণ আমার সেন্টার ছিল আগ্রাবাদ হোটেলই। বৃষ্টির পরে নেমে দেখি সাগর পাড়ের শহর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। তাই তোয়ালে পরে জামাকাপড় হাতে নিয়ে হোটেলে যেতে হয়েছে। তখনও মানুষ বলেছিল শহরে উন্নয়নের কাজ চলছে। ২০২১ সালেও যখন হালকা বৃষ্টি হয়, এখনো সেই সাগর পাড়ের শহর পানিতে তলিয়ে যায়। শহরগুলোর যানজট কমাতে নির্মাণ করা হলো ফ্লাইওভার, সেই ফ্লাইওভারও যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ থাকে। সিগনাল পড়ে ফ্লাইওভারে, ছিনতাই হয়, প্রাণ দিতে হয় সাধারণ মানুষসহ গাড়িচালকদের। ফ্লাইওভারের নিচে যানজট যেন নিত্যদিনের ফাঁদ। ফুটপাতগুলো চলে গেছে হকার ও রাস্তার গাড়ির দখলে। ময়লার ভাগাড় হয় রাস্তাজুড়ে। বাথরুম যেন রাস্তার প্রতিটি পাশ। দেখার যেন কেউ নেই।

সন্ধ্যার পর ফুটওভার ব্রিজগুলো চলে যায় যৌনকর্মী ও তাদের দালালদের দখলে।  রাত ৯টার পর প্রতিটি পার্কের সামনের রাস্তার দখল করে চলে অবাধে যৌনমিলন।  এসব পার্কের মধ্যে রমনা, ওসমানী উদ্যান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠ অন্যতম।

একটু রাত বেশি হলে শহরের কিছু রিকশাওলাও হয়ে ওঠে বিপজ্জনক। ঠেকিয়ে টাকা নেওয়া, ছিনতাই কাজে সহযোগিতা করা, নিজেরাই ছিনতাই করা- নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। অলিগলি বখাটেদের আড্ডায় পরিণত হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশগুলোতে অবাধে চলে নেশার আড্ডা, চলে ছাত্র সন্ত্রাস, শিক্ষক সন্ত্রাস, পুকুর চুরির বাণিজ্য। শহরে সেই গত একযুগে কত মেয়র এলেন, সবাই প্রতিশ্রুতি দিলেন, ভোগান্তি কমাবেন, কিন্তু সেই ভোগান্তি আরও চরমে উঠেছে। ছিনতাই, রাহাজানি, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, টেন্ডারবাজি-দুর্নীতি, বাসাভাড়া আরও বেড়েছে। বিষাক্ত নগরী, আরও বেশি বিষাক্ত হচ্ছে।  বায়ুদূষণ, পানি দূষণ, পরিবেশ দূষণ জ্যামিতিক হারে আরও প্রকট হচ্ছে। এ জন্য দায়ী কারা? আমাদের তো শিক্ষার হার বাড়ছে, তাহলে আমরা নৈতিকভাবে অবনতির দিকে যাচ্ছি? আসলে, আমরা ধীরে ধীরে ব্যক্তি স্বার্থের কাছে হেরে যাচ্ছি, মানুষ হয়ে উঠছি না, দিন দিন হয়ে যাচ্ছি মানুষরূপী অমানুষ।

আরও একটি বাস্তব চিত্র দিয়ে শেষ করবো। এই তো দু’দিন আগে। ভোর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত প্রায় দু’ঘণ্টার বৃষ্টি। তাতে ঢাকার কয়েকটি পয়েন্ট পানির নিচে ডুবে আছে। সকাল ৮টার দিকে আমার একজন শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করতে ঢাবিতে যাচ্ছি। কিছু রাস্তা মোটামুটি ভালো ছিল, কিন্তু বিপত্তি বাড়ালো গ্রিনরোড-পান্থপথ মোড়ের পানি। গাড়িও ঠিকমতো চলছে না। নেমে দাঁড়িয়ে আছি। এর মধ্যে দেখলাম একটি রিকশায় একজন বৃদ্ধ ও একজন বৃদ্ধা যাচ্ছেন। রিকশাওয়ালা পানিতে নেমে রিকশা টেনে নিচ্ছেন। হঠাৎ পানির নিচে একটি গর্তে পড়ে রিকশা কাত হয়ে যায়, বৃদ্ধা মহিলা যদিও পানিতে পড়েননি, কিন্তু রিকশার সাইটে লেগে পা কেটে যায়, এমনিতেই বয়স্ক মানুষ, ব্যথা পেয়ে কোঁকাতে লাগলেন। মনে হচ্ছে কোমরেও ভীষণ আঘাত পেয়েছেন। রিকশা যাচ্ছে, আমিও তাকিয়ে আছি। হঠাৎ গাড়ির ভেঁপু শব্দে আমি সম্বিৎ ফিরে পাই। এখন ভাবছি, গ্রাম থেকে শহরে এলাম উন্নত জীবনযাপনের জন্য। কিন্তু উন্নত আর পেলাম কই, যা পেলাম, তা বিষাক্ত।

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়