ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

একসঙ্গে দুইয়ের বেশি বাচ্চা জন্মদান সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন

এস এম ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৫, ১২ জুন ২০২১   আপডেট: ১২:২১, ১২ জুন ২০২১
একসঙ্গে দুইয়ের বেশি বাচ্চা জন্মদান সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন

যমজ বাচ্চা প্রসবের ঘটনা এত বেশি ঘটছে যে এখন আর বিস্ময়কর লাগে না। আমরা তখনই অবাক হই যখন শুনি কোনো নারী দুইয়ের বেশি বাচ্চা জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৭ বছর বয়সি এক নারী একসঙ্গে ১০ সন্তানের জন্ম দিয়ে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন।

গত মাসে মরক্কোর হাসপাতালে মালির এক নারী একসঙ্গে ৯ বাচ্চা জন্ম দিয়ে আলোড়ন তুলেছিলেন। এটা গিনেস রেকর্ড করেছিল। এক মাসের ব্যবধানে দক্ষিণ আফ্রিকার নারী ১০ বাচ্চা জন্ম দেয়াতে সেই রেকর্ড ভেঙে গেছে।

একসঙ্গে দুই বা ততোধিক বাচ্চার জন্ম হয় কেন?

চিকিৎসকদের মতে, একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু একাধিক কোষে বিভক্ত হলে অথবা পৃথক পৃথক শুক্রাণু পৃথক পৃথক ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করলে একটি গর্ভাবস্থা থেকে দুই বা ততোধিক বাচ্চার জন্ম হতে পারে। উভয় ফ্যাক্টরের সমন্বয়েও একসঙ্গে বহু ভ্রুণের বিকাশসাধন হতে পারে। একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু একাধিক কোষে বিভক্ত হয়ে ভ্রুণ বেড়ে ওঠলে হুবহু একই চেহারা ও সমলিঙ্গের বাচ্চার জন্ম হয়ে থাকে। অন্যদিকে ভিন্ন ভিন্ন শুক্রাণু ভিন্ন ভিন্ন ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করলে একসঙ্গে জন্ম নেয়া বাচ্চাগুলোর চেহারা ও লিঙ্গে পার্থক্য চলে আসে।

যাদের একসঙ্গে বহু বাচ্চা জন্মদানের সম্ভাবনা রয়েছে

স্ট্যানফোর্ড চিলড্রেনসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বংশগত প্রভাব তথা মা বা নানীর যমজ সন্তান জন্মদানের ইতিহাস, বেশি বয়সে (৩০ এর ওপরে) গর্ভধারণ এবং পূর্বে যমজ বাচ্চা প্রসব করলে একসঙ্গে বহু বাচ্চা জন্মদানের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট করলেও যমজ বা দুইয়ের বেশি বাচ্চা প্রসবের সম্ভাবনা রয়েছে। গবেষকরা এ চিকিৎসাকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই বা ততোধিক বাচ্চা জন্মানোর ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ মনে করছেন। স্থূল ও কালো নারীদেরও একসঙ্গে একাধিক বাচ্চা জন্মদানের সম্ভাবনা বেশি।

গর্ভাবস্থায় বহু বাচ্চা বেড়ে ওঠার ঝুঁকি

বিউমন্ট হেলথের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- একটি গর্ভাবস্থায় বহু ভ্রুণ বেড়ে ওঠলে গর্ভবতী নারীর অকালে প্রসব বেদনা ও বাচ্চা প্রসব, গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভকালীন খিঁচুনি, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, লিভারে পিত্তরস জমে যাওয়া, সকালে তীব্র অসুস্থতাবোধ, রক্তশূন্যতা, গর্ভপাত, জরায়ুর তরল বৃদ্ধি, সিজারিয়ান ডেলিভারি, বাচ্চা প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও প্রসব পরবর্তী বিষণ্নতার বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে।

বাচ্চাদের স্বাস্থ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। অকালে জন্ম নেয়াতে স্বাস্থ্য সমস্যার প্রবণতা বাড়তে পারে, বিশেষ করে এমন রোগে আক্রান্ত হতে পারে যা সারাজীবন ভোগাবে। জন্মত্রুটি হতে পারে। স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন নিয়ে জন্ম হতে পারে- এমনটা হলে রেটিনোপ্যাথি নামক চোখের সমস্যায় ভুগতে পারে এবং বয়স বাড়লে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি আছে। গর্ভাবস্থায় বাচ্চার খাবার ও অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। বাচ্চার শারীরিক বিকাশসাধনে বিঘ্ন ঘটতে পারে।এছাড়া জন্মের একমাসের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে।

গর্ভাবস্থায় বহু বাচ্চার লক্ষণ

যাদের গর্ভাবস্থায় দুই বা ততোধিক বাচ্চা রয়েছে তারা কিছু লক্ষণে ধারণা পেতে পারেন, যেমন-

* স্তনে খুব ব্যথা।

* খুব ক্ষুধা পাওয়া বা গর্ভাবস্থার প্রথম তিনমাসে দ্রুত ওজন বেড়ে যাওয়া।

* একইসময়ে পেটের বিভিন্ন অংশে নড়াচড়া অনুভব করা।

* সকালে তীব্র অসুস্থতাবোধ (বমিভাব বা বমি)।

* পরীক্ষায় একের বেশি হার্টবিট শোনা বা জরায়ুর বৃদ্ধি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।

* উচ্চমাত্রায় হিউম্যান কোরিয়োনিক গোনাডোট্রফিন নামক হরমোন বা আলফা-ফিটোপ্রোটিন নামক প্রোটিন।

ঢাকা/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়