ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শ্রীপুরের কাঁঠাল যাচ্ছে বিদেশে

রফিক সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫২, ১৪ জুন ২০২১   আপডেট: ১৩:৫৫, ১৪ জুন ২০২১
শ্রীপুরের কাঁঠাল যাচ্ছে বিদেশে

কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। গাজীপুরের শ্রীপুরে রয়েছে অসংখ্য কাঁঠালের বাগান। উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নে গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে হাজার হাজার কাঁঠাল। প্রতিটি রাস্তার দু’পাশে সারি সারি গাছে ঝুলছে কাঁঠাল। গাজীপুরের শ্রীপুরকে অনেকে কাঁঠালের রাজধানী বলেও ডাকেন। শ্রীপুরের কাঁঠাল এখন রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। 

কাঁঠালকে ইংরেজিতে বলা হয়- Jackfruit, এর বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus heterophyllus। ফলের মধ্যে কাঁঠাল আকারে বড়। ভারতীয় উপমহাদেশ বিশেষত বাংলাদেশ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো কাঁঠালের উৎপত্তি স্থান হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার এটি অতি আদিম ফল। এছাড়া নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, চায়না, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াতেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কাঁঠালের চাষ হয়। বাংলাদেশের সর্বত্রই কাঁঠাল দেখা যায়। সাধারণত লালচে মাটি ও উঁচু এলাকায় এটি বেশি দেখা যায়। তবে মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এবং পার্বত্য এলাকায় সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। বিশ্বে কাঁঠাল উৎপাদনে শীর্ষে ভারত, এরপরেই বাংলাদেশের অবস্থান।

কাঁঠাল পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ একটি ফল। এতে আছে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিনসহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান। অন্যদিকে কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানব দেহের জন্য বিশেষ উপকারী। কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ নিতান্তই কম। এফল খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কাও কম।

পাইকারি ব্যবসায়ী রতন মিয়া জানান, শ্রীপুরের উৎপাদিত কাঁঠাল বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে। এখান থেকে কাঠাল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, সন্দ্বীপসহ দেশের প্রায় সব জায়গায় যাচ্ছে। 

উপজেলার জৈনা বাজারের পাইকারি কাঁঠাল কিনতে আসা ব্যবসায়ী ফিরোজ আলম বলেন, শ্রীপুরের উৎপাদিত কাঁঠাল শুধু বাংলাদেশেই নয়, এই কাঁঠাল বর্তমানে দেশের বাইরেও রপ্তানি হচ্ছে। সৌদি আরব, কুয়েত, ওমানসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে কাঁঠাল রপ্তানি হচ্ছে।

গ্রামের শ্রমজীবী আপামর জনসাধারণের কাছে কাঁঠালের গুরুত্ব অপরিসীম। কাঁঠালের মতো এত বেশি পুষ্টি উপাদান আর কোনো ফলে পাওয়া যায় না। তাছাড়া কাঁঠালের দাম অন্যান্য ফলের তুলনায় কম হওয়াতে মানুষ এটা সহজেই কিনে খেতে পারে। তাই কাঁঠালকে গরিবের ফল বলা হয়। গ্রাম বাংলায় প্রচলিত আছে, কাঁঠাল আর মুড়ি, হয় না এমন জুড়ি’। গ্রাম বাংলায় পান্তা, দুধ, চিড়া বা খইয়ের সাথে পাকা কাঁঠাল কিংবা সিজা কাঁঠাল বা সিদ্ধ কাঁঠাল খাওয়ার প্রচলন আজও বিদ্যমান।

তাছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র এ পর্যন্ত বারি কাঁঠাল-১, বারি কাঁঠাল-২ ও বারি কাঁঠাল-৩ নামে তিনটি উচ্চফলনশীল জাত অবমুক্ত করেছে। সর্বশেষ জাতটিতে অমৌসুমে অর্থাৎ অক্টোবর-মে পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। হাজারি কাঁঠাল নামে অতি জনপ্রিয় একটি জাত রয়েছে, এতে ছোট ছোট অনেক ফল ধরে।

বাংলাদেশে চাষকৃত জাতগুলোকে তিন ভাগে ভাগ যায়। যথা খাজা বা চাউলা, গিলা বা রসা বা রসখাজা এবং দোরসা। ফল পরিপক্ক হতে ৪-৫ মাস সময় লাগে। কাঁচা ফলে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে ঠন ঠন শব্দ হয় আর পাকা ফলে আঘাত করলে ড্যাব ড্যাব শব্দ হয়। বাংলাদেশে প্রতিটি গাছে গড়ে ২৫-২০০টি কাঁঠাল ধরে এবং প্রতিটি ফলের ওজন ৩-২৫ কেজি।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এ এস এম মূয়ীদুল হাসান বলেন, শ্রীপুরে প্রায় ৩৬৯০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ হচ্ছে। কাঁঠালের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য চাষিদের মাঝে সার, পানি ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। শ্রীপুর উৎপাদিত কাঁঠাল অন্যান্য দেশের পাশাপাশি আরব্য বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। সামনে সারাবছর যাতে কাঁঠাল সংরক্ষণ করে রাখা যায়, সে জন্য ‘প্রসেসিং সেন্টার’ তৈরি করার চিন্তা করছি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন উচ্চ ফলনশীল জাত নির্বাচন করবো।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মাহবুব আলম বলেন, আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে কাঁঠাল ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সময় এসেছে কাঁঠাল রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আমাদের দেশে কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে আয়বর্ধন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খাদ্য উৎপাদনকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের যথেষ্ঠ সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে।

গাজীপুর/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়