ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বানকো সিকিউরিটিজের ৬৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দুদকে

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ১৫ জুন ২০২১   আপডেট: ২৩:০৭, ১৫ জুন ২০২১
বানকো সিকিউরিটিজের ৬৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দুদকে

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ বানকো সিকিউরিটিজের (ট্রেক- ৬৩) বিনিয়োগকারীদের ‘সম্মিলিত গ্রাহক অ্যাকাউন্ট’ থেকে ৬৬ কোটি ৫৯ লাখ ১৯ হাজার ১৩৩ টাকা ঘাটতি পাওয়া গেছে। এটিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও শেয়ার আত্মসাত বলে মনে করছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। আর তাই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে অর্থ আত্মসাতের এই ঘটনায় বানকো সিকিউরিটিজ ও এর ৭ পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে ডিএসই।

সোমবার (১৪ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে অভিযোগটি রাজধানীর মতিঝিল থানায় দায়ের করে ডিএসই। মঙ্গলবার (১৫ জুন) সকালে মতিঝিল থানা অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) প্রেরণ করেছে।

ডিএসই প্রতারণামূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ১৮৬০ সালের দন্ডবিধি আইনের ৪০৬ ও ৪০৯ ধারায় অভিযোগ এনেছে। অভিযোগটি থানায় দায়ের করা হলেও এর সকল কার্যক্রম খতিয়ে দেখবে দুদক।

দুদক অভিযোগটি আমলে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে। পরবর্তীতে ওই অভিযোগের বিপরীতে তদন্ত সাপেক্ষে মামলা হিসেবে চার্জ গঠন করবে।

এদিকে এ অর্থ আত্মসাতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডিএসই মঙ্গলবার বানকো সিকিউরিটিজের শেয়ারের সকল লেনদেন বন্ধ রেখেছে। এর আগে বিএসইসির পরামর্শে সোমবার ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ সভায় কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মঙ্গলবার সকাল থেকে শতশত বিনিয়োগকারী ব্রোকারেজ হাউজটিতে ভিড় করেন। তবে হাউজ কর্তৃপক্ষের কাছ  থেকে কাঙ্খিত জবাব না পেয়ে চরম হতাশায় দিন পার করেছেন তারা। একাধিক বিনিয়োগকারী এ বিষয়ে রাইজিংবিডির কাছে অভিযোগ করেছেন।

এদিকে গত ১০ জুন অর্থ আত্মসাৎকারীরা যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারে সে জন্য ডিএসইর অনুরোধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এছাড়া ব্রোকারেজ হাউজটি যেন বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করতে না পারে সে বিষয়ে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকেও (সিডিবিএল) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি লিংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা যাতে অন্য ব্রোকারেজ হাউজে তাদের শেয়ার স্থানান্তর করে নিয়ে যেতে পারেন, সে জন্য সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে ডিএসই। 

ডিএসইর পক্ষে দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ৬ মে ও ৬ জুন বানকো সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তী গত ৭ জুন কোম্পানিটিতে বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করে ডিএসই। ওই সময় ব্রোকারেজ হাউজটির সম্মিলিত গ্রাহক অ্যাকাউন্টে গত ৬ জুনের হিসাবে ৬৬ কোটি ৫৯ লাখ ১৯ হাজার ১৩৩ টাকার ঘাটতি পায় ডিএসই। ফলে তাৎক্ষণিক ডিএসই কোম্পানির কাছ থেকে ওই সম্মিলিত গ্রাহক অ্যাকাউন্টের ঘাটতির ‘গ্রাহকের পরিশোধযোগ্য সমন্বয়সাধন বিবরণ’ গ্রহণ করে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, বানকো সিকিউরিটিজ ও তাদের মালিকপক্ষ বিনিয়োগকারীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ ও শেয়ার আত্মসাত করেছে। আর এ অর্থ সমন্বয় না করেই তাদের দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোম্পানিটির এমন কর্মকাণ্ড শেয়ারবাজারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীকে তাহাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত করে তুলেছে।

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস ভঙ্গ করে তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাত করে বানকো সিকিউরিটিজের পরিচালক ও কর্মকর্তা/কর্মচারীরা অপরাধ করেছেন। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ও শেয়ারবাজারের শৃঙ্খলার রক্ষায় ডিএসই বানকো সিকিউরিটিজসহ কোম্পানিটির চেয়ারম্যান আব্দুল মুহিত, পরিচালক মো. শফিউল আজম, ওয়ালিউল হাসান চৌধুরী, নুরুল ঈশাণ সাদাত, এ. মুনিম চৌধুরী, জামিল আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৬ ও ৪০৯ ধারায় প্রতারনামূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অপরাধ করার অভিযোগ আনে।

বানকো সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী অধ্যাপক আবু আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বানকো সিকিউরিটিজে আমার বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে। কয়েক দিন আগে আমি ১০ লাখ ৩৪ হাজার টাকার শেয়ার বিক্রি করেছি। কিন্তু হাউজ কর্তৃপক্ষ আমার শেয়ার বিক্রির টাকা দ্রুত দেয়নি। ফলে করোনা পরিস্থিতির কারণে আমি টাকা আনতে যাইনি। তবে আজ ভেবে ছিলাম ওই টাকা দিয়ে শেয়ার কিনে ফেলব। কিন্তু হাউজে এসে দেখি ডিএসই লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে। বানকো সিকিউরিটিজের কনসোলিডেটেড কাস্টমার অ্যাকাউন্টে যে ৬৬ কোটি টাকা ঘাটতি পাওয়া গেছে, তা অনেক আগেই ডিএসইকে বলা হয়েছে। কিন্তু ডিএসই সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নেয়নি। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’

হাউজটির আরেক বিনিয়োগকারী কাজী আব্দুর রাজ্জাক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের অনেক বিনিয়োগকারী এখনও তাদের টাকা ফেরত পাননি। ইতোপূর্বে ওই অর্থ আত্মসাতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখনও বিনিয়োগকারীদের শঙ্কা রয়েছে। তবে এবার বানকো সিকিউরিটিজের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা বিনিয়োগকারীদের মনে শঙ্কা নতুন করে বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে পুরো শেয়ারবাজারে উপর বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। নইলে গত এক বছরে নতুন কমিশনের ওপর বিনিয়োগকারীদের যে আস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তা অচিরেই অনাস্থায় পরিণত হবে।’

এদিকে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্তরা যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাত খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ডিএসইর দায়ের করা অভিযোগটি দেখভাল করবে দুদক। তাই অভিযোগটি দুদকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

তবে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরিফ সাদেক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এ বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে পরে জানাবো।’

এদিকে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্বে) আব্দুল মতিন পাটোয়ারি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে বিএসইসির নির্দেশে ডিএসই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।’
তবে বানকো সিকিউরিটিজের পরিচালক মো. শফিউল আজমসহ একাধিক অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা চেষ্টা করা হলেও তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ঢাকা/এনটি/এমএম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়