ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সাবরিনা-সাহেদ-মিজানরা জামিন পেতে মরিয়া

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১০, ১৭ জুন ২০২১   আপডেট: ১২:১৪, ১৭ জুন ২০২১
সাবরিনা-সাহেদ-মিজানরা জামিন পেতে মরিয়া

জামিন পেতে তৎপর হয়ে উঠেছেন আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিরা।  তারা হাইকোর্টে একের পর এক জামিন আবেদন করছেন। এক বেঞ্চে জামিন আবেদন খারিজ হলে যাচ্ছেন আরেক বেঞ্চে। কিন্তু মিলছে না কারোরই জামিন।

এসব আলোচিত মামলা সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, আদালতে আইনের ভুল ব্যাখ্যা বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোনোভাবেই যেন চাঞ্চল্যকর এসব মামলার আসামিরা জামিন পেতে না পারেন, সে বিষয়ে তারা সতর্ক এবং তৎপর রয়েছেন।

জানা গেছে, সম্প্রতি দেশব্যাপী আলোচিত মামলার বেশ কয়েকজন আসামির জামিন আবেদনের শুনানি হয়েছে। তাদের কেউই জামিন পাননি।  তাই আবারও জামিনের জন্য নতুন আবেদন করেছেন তাদের আইজীবীরা। এর মধ্যে সিনহা হত্যা মামলার দুই আসামি, বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি মিজান, গোল্ডেন মনির, রিজেন্টের সাহেদ, জেকেজির আরিফ চৌধুরী, ডা. সাবরিনাসহ আরও কয়েকটি আলোচিত মামলার আসামির জামিন শুনানি হয়েছে। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের তীব্র বিরোধিতার কারণে আসামিদের বেশিরভাগেরই জামিন হয়নি।

এই জাতীয় আলোচিত মামলার বিষয়ে হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী মো. শফিক উল্লাহ বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়ার জন্য খুবই তৎপর।  এদের বিরাট একটা অর্থনৈতিক শক্তি রয়েছে। যার কারণে এরা বার বার আদালতে আসে এবং জামিন পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। অর্থের জোরে এসব অপরাধীরা অনেক সময় বড় বড় আইনজীবী নিয়োগ করে। অনেক সময় এমন সব আইনজীবী নিয়োগ করে, যারা আদালতকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। আদালতকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করে। তবে এসব মামলার ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষ অত্যন্ত তৎপর ও সচেতন আছে।  বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে, যাতে চাঞ্চল্যকর এসব মামলায় জোরালো বিরোধিতা করা হয়।

সিনহা হত্যা মামলা:
কক্সবাজারের টেকনাফে সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি পুলিশের সোর্স মোহাম্মদ আজিজ ওরফে আইয়াস হাইকোর্টে জামিন আবেদন করলে গত ৩ জুন বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারোয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চে তার জামিন আবেদনের শুনানি হয়। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের প্রবল বিরোধিতার কারণে এই আসামির জামিন আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন হাইকোর্ট। এই মামলার আরেক আসামি রুবেল শর্মাও হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেছিলেন কিন্তু তাকেও জামিন দেননি হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ।

ডিআইজি (বরখাস্ত) মিজান:
সম্পদের তথ্য গোপন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি দুদক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে, দুই মামলায় পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত ডিআইজি মিজানুর রহমানকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। তবে তার জামিন প্রশ্নে উচ্চ আদালত রুল জারি করেছেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

২০১৯ সালের ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদনে ক্যামেরার সামনে ডিআইজি মিজান বলেছেন, তার বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি দেওয়ার শর্তে দুদক পরিচালক বাছিরকে তিনি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন। ঘুষ লেনদেনের কথোপকথন রেকর্ড করে ওই বেসরকারি টিভি চ্যানেলের কাছে দিয়েছিলেন মিজান।  অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে বাঁচার জন্য ওই অর্থ ঘুষ দেন বলে ডিআইজি মিজান বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাবি করেন।

গোল্ডেন মনির:
গত বছর রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে বিপুল অর্থ, অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার হন মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির। সম্প্রতি গোল্ডেন মনির হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন।  গত সপ্তাহে বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারোয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক মামলায় তার জামিন আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন। তবে গোল্ডেন মনিরের আইনজীবীরা আবারও অন্য বেঞ্চে জামিন আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ১১ মে গোল্ডেন মনিরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা করে সিআইডি। গত বছরের ২১ নভেম্বর মেরুল বাড্ডার নিজের বাড়ি থেকে মনিরকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।  গ্রেপ্তারের সময় মনিরের বাড়ি থেকে নগদ ১ কোটি ৯ লাখ টাকা, চার লিটার মদ, ৮ কেজি স্বর্ণ, একটি বিদেশি পিস্তল ও কয়েক রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়।

ছাত্রী ধর্ষণ মামলা:
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আলোচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামি নুহাত আলম তাফসীরসহ অন্য দুই আসামির জামিনের জন্য তাদের আইনজীবীরা আবেদন নিয়ে হাইকোর্টের এক বেঞ্চ থেকে আরেক বেঞ্চে ঘুরছেন। গত ৫ জুন নুহাত আলম তাফসীরের জামিন আবেদন বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট আউট অব লিস্ট করে আদেশ দেওয়ার পর তার আইনজীবী হাইকোর্টের অন্য বেঞ্চে আবারও জামিন আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেন জানা গেছে। ৎ

সাহেদ:
রাজধানীর উত্তরা এবং মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে কোট কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এরপর ১৫ জুলাই সাতক্ষীরা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. সাহেদের জামিনের জন্য তার আইনজীবী একের পর এক উচ্চ আদালতে আবেদন করে যাচ্ছেন।  গত ৮ জুন প্রাইভেটকার থেকে মদ উদ্ধারের মামলায় মো. সাহেদের জামিন আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সাহেদের আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন।

এর আগে গত ২৪ মে অর্থপাচার মামলায়ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের জামিন আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ। জানা গেছে, হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চে জামিন আবেদন করে ব্যর্থ হওয়ার পর আবারও অন্য বেঞ্চে আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তার আইজীবী।

সাবরিনা ও আরিফ :
করোনার জাল সনদ দিয়ে সাধারণ মানুষদের প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া জেকেজির চেয়ারম্যান, বহিস্কৃত ডা. সাবরিনার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ।  এই মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন বরখাস্ত হওয়া ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর আইজীবী। আবেদন করলেও তার সেই আবেদনে সাড়া দেননি দেশের উচ্চ আদালত।

উল্লেখ্য, একই মামলায় গত বছরের ২৩ জুন জেকেজির সিইও আরিফ চৌধুরীসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। এ ঘটনায় তেজগাঁও থানায় প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। মামলার তদন্তে জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনার নাম এলে গত বছরের ১২ জুলাই তাকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।

মেয়া/এসবি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়