ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জিব্রানের আরজে হয়ে ওঠার গল্প

গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৫, ১৭ জুন ২০২১   আপডেট: ১৭:২০, ১৭ জুন ২০২১
জিব্রানের আরজে হয়ে ওঠার গল্প

সোশ্যাল মিডিয়ায় যদি ভিডিও কনটেন্ট দেখে থাকেন সচরাচর, তবে জিব্রানের কথা শোনা হয়েছে একবার হয়তো। নিজের উপস্থাপনার কারিশমা দেখিয়ে শ্রোতাদের কাছে হয়েছেন পরিচিত। তিনি এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা সম্পূর্ণ করেন রাজশাহীতে। বর্তমানে বিবিএ পড়ছেন ঢাকায়। বাংলা রেডিওতে আরজে হিসেবে শ্রোতাদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন অল্পদিনেই। একটা অনলাইন রেডিওর মাধ্যমে তার আরজে পেশা শুরু। বর্তমানে কাজ করছেন কাতারে অবস্থিত কিউ এফ.এম ৯৫.৩ বাংলাতে। তার সম্পর্কে জানাচ্ছে গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত।

সুন্দরভাবে কথা বলা রপ্ত করতে সময় লেগেছে বেশ। পরিবারের সবাই প্রচণ্ড প্রমিত ভাষায় কথা বলেন কিন্তু জিব্রানের কথায় আঞ্চলিকতার একটা ছাপ ছিল প্রথম থেকেই। সময়ের সাথে সাথে অনুশীলনের মাধ্যমে রপ্ত করেছেন। 

শুরুতেই জানতে চাইলাম আরজে হয়ে ওঠার গল্প। জিব্রান বলেন, এইচএসসি পাসের পর আমার অভিভাবকদের ইচ্ছা ছিল আমাকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর। কিন্তু আমি আগে থেকেই জানতাম তাদের কথা শুনে আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে খুবই বাজে একজন ইঞ্জিনিয়ার হবো। কারণ, আমি কখনোই ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টা উপভোগ করিনি, উপরন্তু আগে থেকেই অনার্সের শুরুতেই পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু একটা করার পরিকল্পনা মনে মনে ছিল। যখন বিবিএ নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত বাসায় জানাই, তখন অভিভাবকরা একটু ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন এবং রাগ করে পড়া বাবদ একটা নির্দিষ্ট অর্থ দিতে রাজি হলেন। যেটা শুধুই টিউশন ফি হবে, এ ব্যতিত যা ব্যক্তিগত খরচ আছে, তা নিজেকে পরিচালনা করতে হবে। 

আমি রাজি হয়ে যাই এবং এক প্রকার ঝুঁকি নিয়েই রাজশাহী থেকে ৬ হাজার টাকার একটা টিউশনের ব্যবস্থা করে ঢাকায় চলে আসি। কিন্তু ৬ হাজার টাকায় থাকার খরচ, খাওয়ার খরচ ও যাতায়াতের খরচ চালানো ছিল বড্ড যন্ত্রণাদায়ক। তার উপর শুরুতে আমি থাকি মোহাম্মদপুরে আর টিউশন করাই পুরান ঢাকায়। যখন কোনোভাবেই আর চালানো যাচ্ছিল না, তখন আমার ভাই সমতুল্য বন্ধু আবিদ হাসান বললো, তার কাছে এসে থাকতে। এতে তার সাথে থাকলে তেমন কোনো খরচ দিতে হবে না। শুধু নিজের খাওয়ার খরচটা টানলেই হবে। 

সেই সময় টুকটাক চিন্তা করার সময় পাই যে ভালোভাবে টিকে থাকার জন্য কোন কাজটা আমি খুশি মনে করতে পারবো। তখন মনে হয়েছিল যে কথা বলে খুশি মনে রুজি রোজগার করা যেতে পারে। কিন্তু আমি যে কথা বলতে চাই বা পারি এটা নির্বাচকদের বোঝাতে আমার প্রায় দুই-আড়াই বছরের মতো সময় লেগে যায়। যার মধ্যে একটা অনলাইন রেডিও থেকে প্রত্যাখ্যাত, স্পাইস এফ.এম,রেডিও নেক্সট, রেডিও ধ্বনি এমন আরও কিছু রেডিও থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলাম। অবশেষে বাংলা রেডিও কাজ করার সুযোগ দিয়েছিল। 

বর্তমান সময়ে বিশেষ করে আগের কিছু পীড়নের স্মৃতি খুবই মনে পড়ে। যেমন কখনোই কোনো ইন্টারভিউ স্বাভাবিক ও স্থির অবস্থায় দিতে যাওয়ার সুযোগ পাইনি। কারণ, যখনই কোনো ইন্টারভিউ থাকতো, সেদিন হয় ক্লাস না হয় পরীক্ষা থাকতো। যার ফলে হয় অর্ধেক ক্লাস করে আর না হয় অর্ধেক পরীক্ষা দিয়ে ওয়াশরুমে ড্রেস চেঞ্জ করে দৌঁড় দিতে হতো। আরেকটা স্মৃতি হচ্ছে ইন্টারভিউতে রিজেক্ট হয়ে পুকুর পাড়ে পানিতে পা ডুবিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকা। 

যাই হোক, বর্তমানে এসব অভিজ্ঞতার জন্যই মনে হয় এটাকে একটা জার্নি বলা হয়। তবে আমার শুরুর সময় যে টিউশনটা আমি করাতাম, তা আমি এখনো করাই, কারণ বিপদের সময় যারা আমার পাশে ছিল, তাদের নিজের ভালো সময়েও পাশে রাখাটা যথার্থ বলে আমার মনে হয়। 

জিব্রান বলেন, বর্তমান সময়ে বক্তার বড়ই অভাব। কেউ যদি যুক্তিযুক্ত ও সময়োপযোগী কথা বলতে পারে, তবে জনসাধারণের মনে জায়গা করে নিতে তার তেমন বেশি সময় লাগবে না। তবে কোন কিছু না করে শুধু কথা বলে মানুষের অন্তরে প্রবেশ করাটাও এক প্রকার প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়। 

শৈশব থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ছিল বাড়তি একটা আবেগ। দীর্ঘ সময় অনুশীলন করার পর সুযোগ হয় অনুর্ধ-১৪ তে খেলার। ছবি আঁকায় ছিল আগ্রহ। ৯ বছর বয়সে আঁকাআঁকি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকারের প্রথম পত্রিকাতে ছবি প্রকাশ হয় জিব্রানের। স্কুল জীবনে স্কাউটিং করা ছিল বড্ড পছন্দের কাজ। যা জিব্রানকে বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরীর মতো অনবদ্য এক অভিজ্ঞতা উপহার দিয়েছে। 

২০২১ সালে জিব্রানের নিজের নামের পাশে যুক্ত হয়েছে আরেকটা পরিচয়, লেখক। লেখালেখির শুরুটা হঠাৎ করেই। পরিকল্পনা ছাড়াই প্রথম উপন্যাস ‘গহিরা’ প্রকাশিত হয় শব্দশৈলী থেকে। নতুন কোনো বই নিয়ে পরিকল্পনা নেই। গহিরার দ্বিতীয় খণ্ড নিয়ে এখনো কোনো প্লট মাথায় আসেনি জিব্রানের। একটা প্রেমের গল্প মাথায় অনেক দিন যাবত ঘুর ঘুর করছে, তা নিয়ে পরিকল্পনা আছে কিছু একটা করার। 

তরুণরা যারা উপস্থাপনায় আসতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য জিব্রান বলেন, পৃথিবীতে সব রকম কাজই কঠিন কিন্তু কথা বলা সে অর্থে তুলনামূলক সহজ। তবে জীবিকার তাগিদে এটাকে হালকাভাবে নেওয়ারও বিষয় না। কারণ একজন মানুষ যাকে দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না, শুধু কথা দিয়ে মানুষের মনে জায়গা করে নিতে হয়, সে দক্ষতার জায়গাতে দ্বায়িত্বহীন ও অলস হলে চলবে না। যারা এই অংশে কাজ করতে চায়, তাদের উচিৎ আবেগ দিয়ে কাজটা করা। কারণ বু্দ্ধি দিয়ে দক্ষতা সমৃদ্ধ করা এক প্রকার অনুদৈর্ঘ্য প্রক্রিয়া। 

ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই জীবনটাকে এখনো পরখ করেই যাচ্ছি। কী হতে চাই বা কোথায় পৌঁছালে পরিতৃপ্তি পাবো, তা এখনো মগজে আসেনি। তবে যেটাই করি বা যে কোনো অবস্থানেই থাকি না কেন, দিন শেষে বলিষ্ঠ এবং আন্তরিক থাকতে চাই।

/মাহি/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়