ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

লালনপালন খরচ বাড়ায় কোরবানির পশুর দাম বেশি

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৬, ১৭ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৮:২৮, ১৭ জুলাই ২০২১

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে শনিবার (১৭ জুলাই) রাজধানীতে আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির পশুর হাট শুরু হয়েছে। এবার ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকায় দুটি স্থায়ী ও ১৯টি অস্থায়ী হাট বসেছে। করোনা মহামারির মধ্যে ৪৬টি শর্তে এসব হাট বসানোর অনুমোদন দিয়েছে উভয় সিটি করপোরেশন। করোনা মহামারির মধ্যেও বিধি-নিষেধ কিছুটা শিথিল সাপেক্ষে পশুর হাটগুলো বসেছে।

এবার স্বল্প সময়ের মধ্যে হাটগুলোতে পর্যাপ্ত পশু উঠেছে। তবে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পশুর দাম একটু বেশি। বিশেষ করে, মাঝারি আকারের গরুর দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে। পশু কেনা ও লালনপালনে খরচ বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা বেশি চাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

শনিবার রাজধানীর শাহজানপুর, মেরাদিয়া ও আফতাব নগরে কোরবানির পশুর হাট ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

এবার হাটগুলোতে ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ১২-১৩ লাখ টাকা দামের গরু নিয়ে এসেছেন ব‌্যবসায়ীরা। হাটগুলোতে ছাগল, মহিষ ও ভেড়াও উঠেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু বাংলাদেশে আসছে না। ফলে দেশীয় গরুর ওপর বেশি চাপ পড়েছে। এবার গ্রাম থেকে বাড়তি দামে গরু কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। করোনার মধ্যে পশুখাদ্য অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে, গত বছরের চেয়ে এবার আকারভেদে প্রতিটি গরুর দাম ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে। গরুর কেনা দাম ও পরিবহন খরচের সঙ্গে সামান্য লাভ যুক্ত করে দাম চাওয়া হচ্ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তবে, এবার ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। ঈদে কাঙ্ক্ষিত দামে গরু বিক্রি করতে না পারলে, অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।

এদিকে, ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবার গরুর দাম অনেক বেশি। গত বছর যে আকারের গরু বিক্রি হয়েছিল ৭০-৮০ হাজার টাকায়, এবার সেই আকারের গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ১ লাখ বা তার বেশি। বিশেষ করে, মাঝারি আকারের গরুর দাম বাড়তি।

এদিকে, পশুর হাটগুলো এখনও জমে ওঠেনি। হাটগুলোতে ক্রেতার আনাগোনা কম থাকায় বেচাকেনা কম। দু-এক দিনের মধ্যে হাটগুলো জমে উঠবে বলে ধারণা করছেন বিক্রেতা ও হাট কর্তৃপক্ষ।

কোরবানিরর পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনসহ যে ৪৬টি শর্ত দেওয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে মানা হচ্ছে না। তবে, হাট কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রবেশ পথগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখার চেষ্টা চলছে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সচেতন রাখতে মাইকিং করা হচ্ছে। প্রয়োজনে সচেতনতা কার্যক্রম আরও বাড়ানো হবে।

হাটগুলোর দায়িত্ব থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, পশুর হাট পরিচালনার ক্ষেত্রে যেসব শর্ত আছে, তা যথাযথভাবে পরিপালনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য হাট কমিটির কার্যক্রম তদারকি করা হচ্ছে। আর পশু ক্রেতা ও বিক্রেতাদের নিরাপত্তার ব‌্যবস্থা করা হয়েছে। জাল নোট প্রতিরোধে বুথ স্থাপন করা হয়েছে।

মেরাদিয়া হাটে চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা পশু ব‌্যবসায়ী মো. স্বপন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এবার হাটে ছয়টি বড় আকারের গরু এনেছি। গরুর দাম ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা চাচ্ছি। তবে, ক্রেতারা অর্ধেক দাম বলছেন। করোনার মধ্যে গরু কিনতে খরচ বেশি পড়েছে। আবার খাবারের দামও গতবারের চেয়ে বেশি লেগেছে। সব মিলিয়ে এবার গতবারের চেয়ে গরুতে খরচ বেশি হয়েছে। তাই, গরু পরিপালনের খরচ পোষাতেই একটু বেশি দাম চাওয়া হচ্ছে।’

আফতাবনগর পশুর হাটে ফরিদপুর থেকে ২১টি গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারি মাজেদ আলী। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘হাটে গরু অনেক আছে। তবে, ক্রেতা তেমন নেই। দু-একজন এসে দাম যাচাই করছেন।  কেই কেউ অর্ধেক দাম বলছেন। আশা করছি, দু-এক দিনের মধ্যে হাট চাঙ্গা হয়ে উঠবে।’

মেরাদিয়া পশুর হাট পরিচালনা কমিটির সভাপতি আসলাম মাস্টার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমাদের এ হাটে ৯ হাজার পশু রাখা যায়। এখন পর্যন্ত হাটে প্রায় ৭ হাজার গরু এসেছে। শেষ মুহূর্তে গরু আসার পরিমাণ আরও বাড়বে। হাটগুলোতে জনসচেতনতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। প্রবেশপথে পর্যাপ্ত সাবান-বেসিন স্থাপন করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও ব্যবস্থা করা হবে।’

আফতাবনগর পশুর হাট পরিচালনা কমিটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, ‘এখন পর্যন্ত হাটে প্রায় ১৫ হাজার গরু এসেছে। শেষ মুহূর্তে গরু আসার পরিমাণ বেড়েছে। তবে, পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেশ কম।’

ঢাকা/এনটি/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়