ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

চট্টগ্রামের লালদিয়ায় হচ্ছে না বাল্ক টার্মিনাল

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৩, ২৬ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৭:২০, ২৬ জুলাই ২০২১
চট্টগ্রামের লালদিয়ায় হচ্ছে না বাল্ক টার্মিনাল

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের লালদিয়া বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে। প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অবৈধভাবে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় প্রকল্পটি পিপিপি তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে প্রকল্পের বিভিন্ন কাজে প্রায় ১১ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কর্ণফুলী নদীর ডান তীরে লালদিয়া চর এলাকায় প্রায় ৫৯.৮৭ একর জমির ওপর ‘লালদিয়া বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি পিপিপি’র আওতায় বাস্তবায়নের প্রস্তাব গত ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ তারিখে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রকল্পটির জন্য পরামর্শ সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কানাডাভিত্তিক এমএম গ্রুপেরর সঙ্গে চুক্তি হয়। এরপর ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের চূড়ান্ত সম্ভাব্যতা জরিপ প্রতিবেদন দাখিল করে। ২০১৭ সালের মার্চে এ চূড়ান্ত সম্ভাব্যতা জরিপ প্রতিবেদন অনুমোদন করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।

২০১৭ সালের ১ জুন তারিখে আরএফকিউ  চূড়ান্ত করে ১৮ জুন বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ২০ আগস্ট আরএফকিউ প্রস্তাব দাখিল ও উন্মুক্ত করা হয়। ছয়টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দাখিল করে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

এর তিন বছর পর গত ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কয়েকটি বাধার কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি প্রস্তাব পাঠায়।

প্রস্তাবে বলা হয়—
(ক) লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প এলাকায় লালদিয়ার চরে প্রায় ৫৯.৮৭২৫ একর জায়গার ওপরে আনুমানিক প্রায় ৫০০ পরিবার দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে বসবাস করছে। প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরুর আগে তাদের পুনর্বাসন/উচ্ছেদ করা সম্ভব না হলে পিপিপি’র আওতায় আলোচ্য প্রকল্পের কাজ সম্পাদন সম্ভব হবে না। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী অবৈধ বসবাসকারীদের পুনর্বাসনে অর্থ বরাদ্দ/খরচ করার অবকাশ নেই।

(খ) ২০১৩ সালে লালদিয়া চর এলাকায় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রায় ১১৪০ মিটার দীর্ঘ জেটি নির্মাণ করা যাবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ২০১৫ সালে প্রায় ৭.০২ একর জমির ওপর বাংলাদেশ নৌবাহিনী রেডি রেসপন্স ঘাঁটি নির্মাণ করে। ফলে, প্রকল্প এলাকায় লালদিয়া চরে অবশিষ্ট জায়গায় ৮৩৫ মিটার দীর্ঘ জেটি নির্মাণের স্থান অবশিষ্ট থাকে। ওই জায়গায় ২০০ মিটার করে মোট চারটি জেটি নির্মাণ করা সম্ভব হবে। ফলে লালদিয়া টার্মিনালের প্রোডাক্টিভিটি উল্লেখযোগ্য হারে কমবে। তাছাড়া, বিদ‌্যমান প্রায় ৫২.৮৫২৫ একর জায়গায় ছোট আকারে টার্মিনাল নির্মিত হলে চারটি জেটির পিছনে ব্যাকআপ ইয়ার্ডের জন্য যে জায়গা পাওয়া যাবে, তাতে অপারেশন কার্যক্রমসহ কাস্টমস ফরমালিটি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। এছাড়া, সঠিক প্রোডাক্টিভিটিও পাওয়া সম্ভব হবে না।

(গ) ওই টার্মিনালে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনের জন্য উপযুক্ত রাস্তা ও রেল লাইন নেই। সংযোগ সড়ক এবং রেল লাইন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি না থাকায় সংযোগ সড়ক ও রেল লাইন নির্মাণ করা সম্ভব হবে না।

সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বর্তমান অবস্থায় আলোচ্য টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রতিবন্ধকতা আছে। এ অবস্থায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অগ্রসর হলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সার্বিক বিবেচনায় আলোচ্য প্রকল্পটি পিপিপি’র মাধ্যমে সম্পাদন লাভজনক হবে না বলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মনে করে।

এ অবস্থায় পিপিপি’র মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না করে তা তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

ঢাকা/হাসনাত/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়