ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ঘুরগার বিল

আবদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১২, ৬ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১৮:১৩, ৬ আগস্ট ২০২১
মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ঘুরগার বিল

স্থানীয়দের কাছে বিলটি ‘ঘুরগার বিল’ নামে পরিচিত। একশ একর আয়তনের বিলটি ইতোমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন তারা। এ এমন এক যাদু যা দেখতে শুধু চোখ নয়, মনেরও প্রয়োজন।

ঘুরগার বিলের বেশির ভাগ অংশ পড়েছে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার দোল্লাই নবাবপুর ও বাতাঘাসী ইউনিয়নে। এ ছাড়া দাউদকান্দির দক্ষিণ ইলিয়টগঞ্জ ও চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সাচার ইউনিয়নের কিছু অংশ রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে বিল যেন তার যৌবন ফিরে পায়। দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি আর জলজ উদ্ভিদের স্নিগ্ধতা দর্শনার্থীদের মনে আনন্দের দোলা দেয়। বিলের লাল সাদা শাপলার মায়াবি সৌন্দর্য অন্য রকম অনুভূতি তৈরি করে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কুটম্বপুর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে গল্লাই যাওয়া যায়। তারপর কয়েক মিনিটের হাঁটা পথ। বছরের পাঁচ মাস এই বিলে পানি থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিলটিতে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠে লাল ও সাদা শাপলা। যে কারণে বিলের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়।  এই বিলে প্রায় ৫০ প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যায়। রয়েছে বিভিন্ন প্রকার মৌসুমী পাখি। পানিতে নিমজ্জিত আছে বিভিন্ন প্রজাতির শৈবালসহ নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদ।

চান্দিনা উপজেলা কৈকর গ্রামের বাসিন্দা মহিউদ্দিন আকাশ জানিয়েছেন, স্থানীয়দের মধ্যে জনশ্রুতি রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হেলিকপ্টারযোগে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই বিল পরিদর্শন করেছিলেন। উদ্দেশ্য দেশের প্রেক্ষাপটে বিলের অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই। কিন্তু ৭৫-এর নির্মম ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে আর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অথচ এটি হতে পারতো আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট কিংবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। গড়ে উঠতো পাখি ও জলজ প্রাণীদের নিরাপদ আবাসস্থল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চান্দিনা উপজেলার দোল্লাই নবাবপুর ইউনিয়নের মীরাখোলা গ্রামের খালে বাঁধা অনেকগুলো ছোট-বড় নৌকা। অনেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। ছোট নৌকা ভাড়া নিয়ে ঘুরছেন তারা। পরিবারের ছোট সদস্যদের জলজ উদ্ভিদ সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ শাপলা তুলছেন। কেউ ছবি বা সেলফি তোলায় ব্যস্ত। কেউ গলা ছেড়ে গান গাইছেন। আবার কেউ নৌকায় সাউন্ড বক্সে গান বাজিয়ে আনন্দ করছেন।

রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষি, পরিবেশ ও সমাজ উন্নয়ন সংগঠক মতিন সৈকত বলেন, শৈশব থেকে এই বিলের নামকরণ নিয়ে জনশ্রুতি শুনে আসছি। কেউ বলেন, ঘুরগা নামে এক ধরনের পোকার বিচরণ ছিল এই বিলে। সেই পোকার নামে এটির নামকরণ হয়েছে। আবার কেউ বলেন এতো বড় বিল ঘুরতে ঘুরতে শেষ করা যায় না বলে এর নাম ঘুরার বিল বা ঘুরগার বিল। এই বিল সংরক্ষণ জরুরি। এতে প্রাকৃতিক মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি চিত্ত বিনোদনেরও সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।

কুমিল্লা শহর থেকে ঘুরতে আসা মো. ইমাম রসূল বলেন, বিভিন্ন প্রজাতির শৈবালসহ নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদ বিলে রয়েছে। বর্ষায় এর রূপ খুলে যায়। অনেক শুনেছি সেসব কথা। আজ দেখতে এসেছি। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বিলটি একটি দর্শনীয় স্থান হতে পারে। পাশাপাশি ঘুরতে আসা ব্যক্তিদের বিশ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা গেলে এটি আরও জনপ্রিয় হবে বলে ইমাম রসূল মনে করেন।

মীরাখোলা গ্রামের নৌকার মাঝি বজলুর রশিদ বলেন, এই বিলকে কেন্দ্র করে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বছরের এই সময় নৌকায় দর্শনার্থীদের বিলে ঘুরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। এতে আমরাও আনন্দ পাই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুন নাহার বলেন, ঘুরগার বিলে বিপুল পরিমাণে প্রাকৃতিক মাছ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়