ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ভালো কাজ করলেই বিনামূল্যে হোটেলে মিলছে খাবার 

জাহিদ সাদেক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৬, ২৩ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১৮:২৯, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
ভালো কাজ করলেই বিনামূল্যে হোটেলে মিলছে খাবার 

খেতে টাকা লাগবে না, বিনিময়ে করতে হবে একটি ভালো কাজ। আর যেখানে এই খাবার দেয়া হয় তার নাম ‘ভালো কাজের হোটেল’।

শুনতে অবাক মনে হলেও এটিই সত্য, এখানে খেতে টাকা লাগে না। শুধু বলতে হবে, সর্বশেষ কোন ভালো কাজটি আপনি করেছেন। আর যে কোনো একটি ভালো কাজের বিনিময়ে যে কেউ এখানে খেতে পারেন পেটপুরে। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের কাছেই অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো সংলগ্ন ফুটপাথে ভালো কাজের হোটেলে প্রতিদিন রাতে খাবার বিতরণ করা হয়।

কীভাবে এমন একটি মহৎ উদ্যোগের শুরু জানতে চাইলে সংগঠনের সদস্য সাকিব হাসান শাওন বলেন, ২০০৯ সালে ঈদে আমরা কয়েকজন চিন্তা করলাম সবাই তো ঈদে আনন্দ ফূর্তি করবে, ভালো খাবার খাবে, আমরা চিন্তা করলাম- ছিন্নমূল মানুষের জন্য কিছু করতে পারি কিনা? এরপরই এই আইডিয়া মাথায় আসে। তবে মূল উদ্যোক্তা ছিলেন আরিফুর রহমান, সোহানুর রহমান আসিফ, ফারুক আহমেদ, মনিরুজ্জামান মনির, রুবেল আহমেদ হিমেলসহ বেশ কয়েকজন।

সাকিব হাসান শাওন বলেন, প্রথম দিকে আমরা ১২০ জন সদস্য ছিলাম। এখন ১১২০ জন। প্রত্যেকে প্রতিদিন ১০ টাকা চাঁদা দেই। খাবারের আয়োজন সেই টাকা থেকেই হয়। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ৩৫০ জন আছেন, যারা ধারাবাহিকভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে খাবার রান্না ও বিতরণ করেন।

কীভাবে খাবার বিতরণ করা হয় জানতে চাইলে শাওন বলেন, খাবার দেওয়ার আগে একজন স্বেচ্ছাসেবক নাম, বয়স, পেশা ও কী ভালো কাজ করেছেন লিপিবদ্ধ করেন। এরপর শুরু হয় খাবার দেওয়া। কী ধরনের ভালো কাজ বেশি দেখা যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্ধ বা শিশুকে রাস্তা পারাপারে সহায়তা, রিকশা ভাড়া না নিয়ে অসহায় মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু বিশেষ করে কাঁচের টুকরো, ইট পাথর সরিয়ে ফেলা এবং কাঁধে বোঝা বহন করতে কষ্ট হলে সহায়তা করার মতো অনেক ভালো কাজ করেন অনেকে।

কথাপ্রসঙ্গে জানা গেল ২০০৯ সালে বিশেষ কয়েকটি দিনে এ ধরনের আয়োজন হতো। ২০১৯ সাল থেকে প্রতি শুক্রবার করা হয় আয়োজন। কিন্তু করোনার কারণে লকডাউন শুরু হলে প্রতিদিন একবেলা করে খাবারের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর ৫টি পয়েন্টে খাবার বিতরণ করা হয়- কমলাপুর, সদরঘাট, ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবর, বনানী কবরস্থান এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশন। এসব জায়গার মধ্যে প্রতিদিন কমলাপুরে সন্ধ্যা বা রাতে খাবার দেয়া হয়। বাকি চারটি স্থানে সপ্তাহে একদিন খাবার বিতরণ করা হয়। 

প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিনশ লোকের খাবার রান্না হয়। এর মধ্যে অন্য জায়গাগুলোতে দেড়শ মানুষের জন্য খাবার প্যাকেট পাঠিয়ে দেয়া হয়। বাকি খাবার দেওয়া হয় কমলাপুরে। রবি থেকে বৃহস্পতি, খাবারের মেন্যুতে থাকে ডিম-খিচুড়ি। শুক্র ও শনিবারের খাদ্য তালিকায় বিরিয়ানি, পোলাও বা মুরগি তেহারির ব্যবস্থা থাকে। সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের চাঁদার টাকায় নিজেরাই বাজার করেন। প্রতিদিন রান্না করে নিজেরাই প্যাকেটে করে পরিবেশন করেন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে।

এই হোটেলে খেতে আসা সেলিম বলেন, আমি কমলাপুরের আশেপাশেই থাকি। ঠিকমতো খাইতে পারি না। এ কারণে এই জায়গায় আসি খাইতে। এখানে খাওনের নিয়ম করছে এক বেলা। বৃদ্ধ রইসুল বলেন, ভালো লাগতেছে। আমাদের খানা দিতেয়াছে, এইডাই তো আখিরাতের কাজ। নিয়মিত এখানে আসা রিয়ামনি বলেন, যদি দূরে থাকি, ওই সময় চইলা আসি। কাজ থুইয়া চইলা আসি।

আগামী দিনের পরিকল্পনা জানতে চাইলে সাকিব হাসান শাওন বলেন, আমরা এখনো মাসের ৫-৬ দিন টাকার অভাবে খাবার দিতে পারি না। আমরা কীভাবে মাসব্যাপী খাবার চালিয়ে যাবো এটাই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য। তাছাড়া অন্যান্য স্থানেও যাতে প্রতিদিন খাবারের ব্যবস্থা করতে পারি সেটাও পরিকল্পনায় আছে। আগামী দিনে আমরা ৫টির পরিবর্তে ১০টি স্পট করতে চাই।

ভালো কাজের হোটেলের প্রধান স্বেচ্ছাসেবী আরিফুর রহমান বলেন, ক্ষুধার্ত মানুষগুলো সাধারণত খারাপ কাজ করে ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে অনেক মানুষ আছে যারা এক বেলা খায় কিন্তু পরের বেলা তারা কী খাবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ ধরনের মানুষের ক্ষুধার যন্ত্রণা কমাতে, ভালো কাজে উদ্ধুদ্ধ করতে আমাদের এই হোটেল। আমরা বলি প্রতিদিন অন্তত একটা ভালো কাজ করবেন। 

ঢাকা/তারা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়